পরিধানযোগ্য ভিন্ন ধারার অক্সিমিটার যন্ত্রের ডিজাইন

গুগল রিসার্চ অ্যাওয়ার্ড পেলেন চট্টগ্রামের তাসিফ

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ২৬ জুলাই, ২০২৩ at ৫:৩৮ পূর্বাহ্ণ

বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ গবেষণা পদকগুলোর একটি গুগল রিসার্চ অ্যাওয়ার্ড। এ বছর বিজয়ী হয়েছেন চট্টগ্রামের ছেলে ইয়াসীর মুহাম্মদ তাসিফ খান। ইতোপূর্বে নেচার পত্রিকার প্রচ্ছদে তিনবার স্থান পেয়েছেন এই তরুণ বিজ্ঞানী। ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া, বার্কলি, স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি এবং অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বিশ্বের শীর্ষ চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা ও গবেষণার অভিজ্ঞতা আছে তাঁর।

ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সাস এট ডালাস থেকে স্নাতক, কাউস্ট থেকে মাস্টার্স, ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া, বার্কলিতে পিএইচডি, অক্সফোর্ডে রিসার্চ ইনটার্ন, স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে পোস্ট ডক্টরাল গবেষণা করেছেন ইয়াসির। ইয়াসীর মুহাম্মদ তাসিফ খান বর্তমানে ইউনিভার্সিটি অফ সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়াতে ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সহকারী অধ্যাপক।

ইয়াসীর প্রমাণ করেছেন গায়ের রং ভিন্ন হলে অক্সিমিটারের মতো ডিভাইসগুলো একইভাবে কাজ করে না। তাই যাদের গায়ের বর্ণ বাদামি বা কালো তাদের জন্য ভিন্ন ধারার অক্সিজেন পরিমাপক যন্ত্র উদ্ভাবন করেছেন তারা। তাঁর ভাষায়, আমরা চাই নতুন ধরনের ইলেকট্রনিক্স বানাতে, যেটা হবে ত্বকের মতো। এতে আমরা সর্বাধুনিক ওয়্যারেবল প্রযুক্তি, কেমিক্যাল সেন্সিং এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করছি। এই প্রযুক্তি সফল হলে আমরা এমন ওয়্যারেবল বানাতে পারব সেটা ত্বকের অংশ বলেই মনে হবে। এদেরকে বলা হয় ইম্পারসেপটিবল টেকনোলজি। মেডিকেল ডিভাইস এই প্রযুক্তির সম্ভাবনা প্রচুর।

তিনি বলেন, মেডিকেল ডিভাইসে আমাদের একটা কাজ হলো অক্সিমিটার নিয়ে, যা রক্তে অক্সিজেন পরিমাপ করে। অক্সিমিটার নিয়ে আমার কাজ প্রায় ৭ বছর ধরে। পিএইচডির শুরু থেকেই চেষ্টা করছিলাম অক্সিমিটারকে কীভাবে পরিধানযোগ্য করা যায়। কোভিডের সময় অক্সিজেন মাপার জন্য অক্সিমিটারের ব্যবহার অনেক বেড়ে যায়। তখন ইউনিভার্সিটি অফ মিশিগানের কিছু চিকিৎসক দেখেন অক্সিমিটার সব ত্বকের রঙের উপর একভাবে কাজ করে না। অক্সিমিটারে যেহেতু আলো ব্যবহার করা হয়, সেই আলো ত্বকের রঙের উপর নির্ভর করে অক্সিজেনের মাত্রা দেখায়। যেহেতু সব মেডিকেল ডিভাইস মূলত পাশ্চাত্যে বানানো, গায়ের রং হালকা হলে অক্সিমিটার ঠিকমতো কাজ করে আর গাঢ় হলে ভুল দেখায়। এই রিপোর্ট প্রকাশ হওয়ার আমি গত বছর থেকে এর সমাধানের জন্যে একটা প্রকল্প শুরু করি। এ বছর আমরা একটা নতুন অক্সিমিটার ডিজাইন করেছি, যেটা ত্বকের রঙের উপর নির্ভর করে না। এই অক্সিমিটার প্রকল্পের জন্যে আমি ২০২৩ সালের গুগল রিসার্চ অ্যাওয়ার্ড পাই।

তাসিফ বলেন, আমাদের যেহেতু গায়ের রং গাঢ়, এই গবেষণার ফল বাংলাদেশে সরাসরি কাজে লাগানো যাবে। আমার রিসার্চের উদ্দেশ্য হলো, মেডিকেল ডিভাইস যাতে সহজলভ্য হয় আর সবাই ব্যবহার করতে পারে। এই লক্ষ্য রেখেই আমরা বাংলাদেশ ও উন্নয়নমুখী দেশগুলোর জন্যে মেডিকেল ডিভাইস ডিজাইন করছি।

ডা. মো. ফয়েজ আহমদ খান ও রওশন আরা ফয়েজের কনিষ্ঠ সন্তান ইয়াসীর তাসিফ খান ছোটবেলা থেকেই মেধার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন। তাঁর বড় ভাই চিকিৎসক, থাকেন যুক্তরাজ্যে। মেঝ ভাই প্রকৌশলী, থাকেন টেক্সাসে। বাবামা বেঁচে নেই।

তাসিফের স্ত্রী ড. সিফাত শারমীন মইন, ইউনিভার্সিটি অফ সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়ার সিভিল অ্যান্ড অ্যানভায়রমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের রিসার্চ সহকারী অধ্যাপক। বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সভাপতি ড. মইনুল ইসলাম তাসিফের শ্বশুর। ইয়াসীর পড়াশোনা করেছেন সেন্ট মেরিস স্কুল, চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল এবং চট্টগ্রাম কলেজে। চট্টগ্রামের রহমতগঞ্জে বেড়ে ওঠা। এর আগে তিনি অর্জন করেছেন সম্মানজনক ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশন গ্রান্ট, নেক্সফ্লেক্স গ্রান্ট। তিনি চান, বাংলাদেশ যাতে টেকসই প্রযুক্তি ব্যবহার করে সবুজ ও সুন্দর থাকে।

বিজ্ঞান গবেষণায় এতদূর আসার পেছনে মূল চালিকাশক্তি বা অনুপ্রেরণা কি ছিল? এই প্রশ্নে ইয়াসীর বলেন, আমি যা ভালোবাসি তাই করি। আমি আমার কাজকে ভালোবাসি। আমি প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাসী এবং মনে করি, আত্মবিশ্বাস নিয়ে কাজ করলে অসম্ভবকে সম্ভব করা যায়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদক্ষিণ আফ্রিকায় দুর্বৃত্তদের হামলায় বাংলাদেশি নিহত
পরবর্তী নিবন্ধযারা নবী রাসূল সাহাবা ওলীদের বিরুদ্ধে কটূক্তি করে তারা পথভ্রষ্ট ও ঈমানহারা