পরিত্যক্ত টিলায় গর্ত খুঁড়তে গিয়ে বালু চাপা, দুই শিশুর মৃত্যু

আনোয়ারার কেইপিজেড আহত দুজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন

আনোয়ারা প্রতিনিধি | শনিবার , ৩ মে, ২০২৫ at ৬:৩৩ পূর্বাহ্ণ

আনোয়ারায় কেইপিজেডে ঘুরতে গিয়ে একটি পরিত্যক্ত টিলায় গর্ত খুঁড়তে গিয়ে বালু চাপায় ২ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে আরো দুজন। বর্তমানে তারা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে। গত বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টায় এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলো বৈরাগ ইউনিয়নের মাওলানা নুরুজ্জামানের বাড়ির আবদুর রহিমের ছেলে মো. রোহান (১২) ও এমরানের ছেলে মো. মিজবাহ (১২)। আহতরা হলো একই এলাকার মুসতাকের ছেলে মো. সিয়াম (১১) ও মো. হাশেমের ছেলে সিফাত (১২)

নিহত রোহান বৈরাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণী ও সিফাত ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ে। গত বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় নামাজে জানাজা শেষে তাদের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। এদিকে ঘটনার পর কেইপিজেড কর্তৃপক্ষ নিহত ও আহতদের পরিবারের মাঝে আর্থিক ও চিকিৎসা সহায়তা প্রদান করেন। এ ঘটনায় নিহত ও আহত পরিবারের পক্ষে থানায় কোনো অভিযোগ নেই।

জানা যায়, বৃহস্পতিবার সকালে বৈরাগ এলাকার ৯ শিশু ইমরান, মিনহাজ, সিফাত, মিজবাহ, রোহান, ইরফান, সিয়াম, ফরহান ও আবদুল কেইপিজেডে ঘুরতে বের হয়। এক পর্যায়ে বৈরাগের কেইপিজেড এলাকার একটি পরিত্যক্ত টিলার নিচে বিশ্রাম করার জন্য শিয়ালের করা গর্ত খুঁড়তে গেলে বালু চাপা পড়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় ও কেইপিজেড সূত্রে জানা গেছে, দুই শিশু বালু চাপা পড়ে নিহত হওয়ার ঘটনাস্থল থেকে একটি মহল অনেক আগে রাতের আঁধারে বালু নিয়ে বড় গর্ত সৃষ্টি করে। উক্ত স্থানে বন্য শেয়ালের বড় বড় গর্ত আছে। ওটা পাখিদেরও আবাসস্থল। এর ফলে এলাকার ছেলেরা বিভিন্ন সময় এ এলাকায় পাখি ধরতে আসে।

নিহত রোহানের সহপাঠী মো. ইমরান জানায়, বৃহস্পতিবার সকালে তারা ৯ বন্ধু একসাথে কেইপিজেডে ঘুরতে যায়। এ সময় তাদের গরম লাগলে বিশ্রাম নিতে কেইপিজেডের ভেতর একটি টিলার নিচে অবস্থান নেয়। সেখানে শিয়াল ও পাখির অনেক গর্ত আছে। আমাদের কয়েকজন গর্ত থেকে পাখি ধরার চেষ্টা করে। এ সময় বন্ধুদের মাঝে সিফাত, রোহান, মিজবাহ, সিয়াম ও আবদুল একটি গর্তে বালু খুঁড়তে থাকে। আগে থেকে সেখানে গর্ত থাকায় হঠাৎ বালু পড়ে সিয়াম ও সিফাতসহ ৫ জন চাপা পড়ে। এ সময় আমি একজনকে টেনে বের করি। আরেকজনের মুখের বালু সরিয়ে দিই। দ্রুত বাড়ির লোকজনকে খবর দিলে তারা এসে বাকিদের উদ্ধার করে।

খবর পেয়ে স্থানীয়রা রোহান, মিজবাহ, সিয়াম ও সিফাতকে উদ্ধার করে আনোয়ারা হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক রোহান ও মিজবাহকে মৃত ঘোষণা করেন।

নিহত মো. রোহানের পিতা আবদুর রহিম বলেন, রোহান নেই, এটা মানতে পারছি না। বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় রোহানের জানাজা শেষে দাফন করা হয় বলে জানান তিনি।

ঘবর পেয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা, আনোয়ারা ও কর্ণফুলী থানার ওসিসহ সংশ্লিষ্ট লোকজন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

এ বিষযে কেইপিজেডের উপমহাব্যবস্থাপক মুশফিকুর রহমান বলেন, দুই শিশু নিহতের ঘটনায় কেইপিজেড কর্তৃপক্ষের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। তারপর কেইপিজেডকে জড়িয়ে অপপ্রচার করা হচ্ছে। এটা দুঃখজনক। কেইপিজেড ওখানে পাহাড় কাটছে না। ওই এলাকায় আমাদের কোনো কার্যক্রম নেই। খবর পেয়ে আমরা দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সাথে দেখা করেছি। শিশুরা প্রকৃত ঘটনা প্রকাশ করেছে। আমরা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে আর্থিক সহায়তা ও চিকিৎসা সহায়তা দিয়ে যাচ্ছি। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে সব ধরনের সহায়তা করব। কেইপিজেডের বিরুদ্ধে পাহাড় কাটার অভিযোগ মিথ্যা।

আনোয়ারা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মাহাতাব উদ্দিন চৌধুরী বলেন, বালু চাপার ঘটনায় সকালে ৪ শিশুকে হাসপাতালে আনা হয়। পরীক্ষানিরীক্ষার পর দুজনের মৃত্যুর বিষয়ে নিশ্চিত হই। বাকি দুজনকে চমেক হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে।

আনোয়ারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনির হোসেন বলেন, দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে আমরা জানতে পারি শিশুরা এখানে ঘুরতে গেছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচবির পঞ্চম সমাবর্তনের যত আয়োজন ও নির্দেশনা
পরবর্তী নিবন্ধঅবিলম্বে আ. লীগের নিবন্ধন বাতিল করতে হবে