শ্রেণিকক্ষ সংকটে ১৯৫০ সালের দিকে নির্মিত এক পরিত্যক্ত ভবনে শ্রেণি কার্যক্রম চলছে রাঙ্গুনিয়া পৌরসভার মুরাদের ঘোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটিতে প্রতিদিন ক্লাস করছে ছাত্রছাত্রীরা। ফলে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। ভবনটি পুনর্নির্মাণের জন্য ইতোপূর্বে লিখিতভাবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হলেও করোনার কারণে তা থমকে গেছে। তবে এখনো কোনো বরাদ্দ পাওয়া যায়নি বলে জানান সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। জানা যায়, ১৯১৪ সালে প্রতিষ্ঠিত মুরাদেরঘোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বর্তমানে ছাত্র–ছাত্রী রয়েছে প্রায় সাড়ে তিনশ’। শিশু থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত মোট ৬টি ক্লাসরুম প্রয়োজন হলেও দুটি ভবনের অপরটিতে ব্যবহারযোগ্য কক্ষ রয়েছে মাত্র চারটি। ফলে বাধ্য হয়ে ১৯৫০ সালের দিকে নির্মিত পুরাতন জরাজীর্ণ ভবনে শ্রেণি কার্যক্রম চালাচ্ছেন বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। অথচ ভবনটি জরাজীর্ণ হওয়ায় গত পাঁচ বছর আগেই পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছিল। সমপ্রতি এই ভবনের পলেস্তারা খসে পড়ে দুজন ছাত্রী আহত হয়েছে। তাদের একজনের আঘাত গুরুতর হওয়ায় বার্ষিক পরীক্ষায়ও অংশ নিতে পারেনি। জরুরিভিত্তিতে ভবনটি ভেঙে ফেলা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন সংশ্লিষ্টরা। ভবনটি ভেঙে ফেলার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানা যায়। তবে কবে নাগাদ নতুন ভবনের বরাদ্দ আসবে তা নিশ্চিত করে বলতে পারেননি কর্তৃপক্ষ।
সরেজমিনে দেখা যায়, বিদ্যালয় ভবনটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এটির প্রতিটি কলাম ও দেয়ালে ফাটল ধরেছে। ছাদ দিয়ে পানি পড়ে। ছাদের পলেস্তারা খসে খসে পড়ছে। জানালাগুলোও ভেঙে পড়ে গেছে। এরমধ্যেই শ্রেণি সংকটে বাধ্য হয়ে শিক্ষা কার্যক্রম চালাচ্ছে বিদ্যালয় কতৃপক্ষ। বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রী রুমা আক্তার বলেন, আমাদের স্কুলটি অত্যন্ত ঝঁকিপূর্ণ। প্রায়শই আস্তর পড়ে আমাদের বইখাতা বিনষ্ট হয়। সামান্য বাতাস হলেই জানালা, ছাদ, দেয়াল ভেঙে ভেঙে পড়ে। আমরা আতঙ্ক নিয়ে ক্লাস করি।
বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদ সভাপতি বদিউল খায়ের লিটন চৌধুরী বলেন, আমাদের বিদ্যালয়টির ভবন ১৯৫০ সালের দিকে নির্মাণ করা হয়েছে। এরপর আর কোনো সংস্কার হয়নি। ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ ও জরাজীর্ণ। ভবনের আস্তর ও দেয়ালের প্লাস্টার খসে পড়ছে। তারপরও শ্রেণি সংকটের কারণে বাধ্য হয়ে আমাদের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা ঝুঁকি নিয়ে ওই ভবনে শ্রেণি কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছেন। চার বছর আগে পরিত্যক্ত ঘোষণা করলে নতুন ভবন পেতে আবেদন করেছিলাম। যেখানে মাননীয় তথ্য ও সমপ্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এমপি মহোদয় সুপারিশও করেন। তবে ২০২০ সালের পর করোনার কারণে ভবনের বরাদ্দ আর আসেনি। এখন ভবনটি ভেঙে ফেলতে আমরা লিখিতভাবে আবেদন করেছি। তারা বলেছে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এটি ভেঙে ফেলতে এবং নতুন ভবন পেতে সুপারিশ করবেন।
এই বিষয়ে পৌরসভা ক্লাস্টারে দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন বলেন, আপাতত অস্থায়ী ক্লাসরুম কিংবা শিফট আকারে তারা শ্রেণি কার্যক্রম চালাতে পারে।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. হিন্দুল বারী বলেন, অনলাইনে ইএমআইএস ফরমে প্রতিটি বিদ্যালয়ের সব তথ্য দেয়া থাকে। সেখানে এই স্কুলের ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি তাদের আবেদনের ভিত্তিতে এটি ভেঙে ফেলার জন্য নিলাম কমিটির মাধ্যমে পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। এটি ভেঙে ফেলার পাশাপাশি নতুন ভবন পেতে প্রক্রিয়া চালানো হবে।