পাল্লেকেলের দ্বিতীয় টেস্টে অনেকটা নিশ্চিত পরাজয়ের সামনে বাংলাদেশ। তবে সেই পরাজয়টা বড় নাকি ছোট হবে তাই নিয়ে প্রশ্ন হতে পারে। প্রথম ইনিংসে ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতার পরই বোঝা হয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশের ভাগ্যে কি আছে। তবে দেখার বিষয় ছিল বাংলাদেশ কতোটা লড়াই করতে পারে।
না সেই লড়াই তারা খুব একটা করে উঠতে পারেনি। লড়াই করবে এমন মনোভাব বাস্তবে পূর্ণতা পায়নি বাংলাদেশের বাজে শট সিলেকশন, শ্রীলংকার ভালো বোলিং আর উইকেটের অবস্থা সব কিছু মিলিয়েই। বাংলাদেশের সামনে তাই অপেক্ষা করছে বড় পরাজয়। পাল্লেকেলেতে দ্বিতীয় টেস্টের শেষ ইনিংসে ৪৩৭ রানের লক্ষ্যে নেমে চতুর্থ দিন শেষে বাংলাদেশের রান ৫ উইকেটে ১৭৭। আলোক স্বল্পতায় রোববার দিনের খেলা ১২ ওভার আগেই শেষ হয়, ম্যাচ গড়ায় পঞ্চম দিনে।
শেষ দিনে জয়ের জন্য বাংলাদেশের প্রয়োজন ২৬০ রান। এই লক্ষ্য তাড়া করা খুবই কঠিন বাংলাদেশের শেষ দিককার ব্যাটসম্যানদের জন্য। লক্ষ্য তো বহুদূর, প্রথম পাঁচ ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে ফেলা দলের জন্য শেষ দিন টিকে থাকাও কঠিন। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং অর্ডারের প্রথম পাঁচ জনই ক্রিজে থিতু হয়েছিলেন। তবে কেউ যেতে পারেননি অর্ধশত পর্যন্ত। প্রতিটি জুটি ৩০ ছুঁলেও কোনোটিতেই পঞ্চাশ পূর্ণ হয়নি। দুই দফায় জীবন পেয়ে, অনেক ঝুঁকি নিয়ে শেষ পর্যন্ত ৪০ রানে আউট হওয়া অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম ছিলেন দলের সর্বোচ্চ স্কোরার। বাকিদের মধ্যে ওপেনার তামিম ইকবাল ও নাজমুল হোসেন শান্ত আউট হন দারুণ ডেলিভারিতে, সাইফ হাসান ও মোমিনুল হক ফেরেন উইকেট উপহার দিয়ে। কঠিন চ্যালেঞ্জ সামনে রেখে ব্যাটিংয়ে নেমে তামিম যথারীতি শুরু করেন দারুণ কিছু শটের মহড়ায়।
ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই সুরাঙ্গা লাকমলকে বাউন্ডারি মারেন ব্যাকফুট পাঞ্চে। নতুন বলে শুরু করা অফ স্পিনার রমেশ মেন্ডিসকে ছক্কা মারেন চোখধাঁধানো এক ইনসাইড আউট শটে। মেন্ডিসই পরে দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে ফেরান তামিমকে। স্টাস্পে পিচ করা বল টার্ন ও বাউন্সে তামিমের ব্যাটের একপাশে আলতো ছুঁয়ে জমা পড়ে কিপারের গ্লাভসে। টানা চার ফিফটির পর এবার তামিম আউট হয়ে যান ২৬ বলে ২৪ করে। এই মেন্ডিসকে একটু পর ছক্কা মারেন সাইফ। বেশ কিছু শট খেলে এই ওপেনার চেষ্টা করেন ইতিবাচক থাকার। কিন্তু বেশি শট খেলার চেষ্টাই কাল হয় তার। বাঁহাতি স্পিনার প্রাভিন জয়াবিক্রমাকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ধরা পড়েন কাভার পয়েন্টে।
ততক্ষণে চার টেস্টের ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ ইনিংসটি অবশ্য খেলতে পারেন তরুণ ওপেনার, তবে সেটি কেবলই ৩৪ রানের। চা বিরতির একটু আগে জয়াবিক্রমা থামান শান্তকেও (২৬)। উইকেটের ক্ষতে পিচ করে বল বিশাল টার্ন নিয়ে শান্তর ব্যাট-প্যাডের ফাঁক গলে আঘাত করে স্টাম্পে। এই তিন জনের মতো অধিনায়ক মোমিনুলও শুরু করেন বেশ আত্মবিশ্বাসী ব্যাটিংয়ে। জয়াবিক্রমার দুই ওভারে বাউন্ডারি মারে দুটি করে। উইকেটে জমেও যান দ্রুত। কিন্তু তার শেষটা দারুণ হতাশায় পরিণত হয়। মেন্ডিসের স্টাম্পের বাইরের বল থার্ডম্যানে খেলার চেষ্টা করেন।
আর তাতে করে ব্যাটের কানায় লেগে বল আসে স্টাম্পে। মুশফিক ৬ রানে ক্যাচ দিয়ে বেঁচে যান জয়াবিক্রমার বলে, ৩১ রানে মেন্ডিসের বলে তার সহজ স্টাম্পিংয়ের সুযোগ ছাড়েন নিরোশান ডিকভেলা। বারবার ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে, সুইপ-রিভার্স সুইপ খেলে ঝুঁকি নিয়ে এগোতে থাকেন তিনি। শেষ পর্যন্ত মেন্ডিসের বাড়তি লাফানো বল তার গ্লাভসে ছোবল দিয়ে আশ্রয় নেয় লেগ স্লিপে। লিটন দাস ও মেহেদী হাসান মিরাজ বাকি সময়টা টিকে থাকেন কোনোরকমে। দুজনকেই আউট দিয়েছিলেন আম্পায়ার, তারা রক্ষা পান রিভিউ নিয়ে।
এর আগে সকালে ২ উইকেটে ১৭ রান নিয়ে দিন শুরু করা শ্রীলংকা দ্বিতীয় ইনিংস ঘোষণা করে ৯ উইকেটে ১৯৪ রান করে। দারুণ ফর্মে থাকা অধিনায়ক দিমুথ করুনারত্নে করেন ৬৬। স্পিনার তাইজুল ইসলাম নেন ৫ উইকেট। এটা তার টেস্ট ক্যারিয়ারে অষ্টম অর্জন। বাংলাদেশ ইনিংসে শ্রীলংকা দারুণ বোলিংয়ে তৈরি করে ফেলে জয়ের পথ। বাংলাদেশকে বাঁচতে হলে এখন নির্ভর করতে হবে কেবল বৃষ্টির উপর। তাও টানা বর্ষণ।












