পবিত্র রমজান মাস আসন্ন, আর এ উপলক্ষে চট্টগ্রামজুড়ে চলছে প্রস্তুতির ব্যস্ততা। বাজার থেকে শুরু করে মসজিদ, দোকানপাট, বাসাবাড়িসহ সবখানেই লেগেছে মাহে রমজানের ছোঁয়া। তবে রমজানের আগে থেকেই পানির সংকট, বিদ্যুতের লোডশেডিং ও গ্যাসের কম চাপ নিয়ে সংশ্লিষ্টদের কপালে ভাঁজ রয়েছে। অবশ্য সংশ্লিষ্টরা আশ্বস্ত করেছেন রমজানে সবকিছু স্বাভাবিক রাখার জন্য সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।
রমজানকে সামনে রেখে নগরীর কাঁচাবাজার থেকে শুরু করে মুদির দোকান পর্যন্ত সর্বত্রই কেনাকাটার ধুম লেগেছে। পরিলক্ষিত হয়েছে প্রচুর ভীড়। রিয়াজউদ্দিন বাজার, চকবাজার, কাজীর দেউড়ি, কর্ণফুলী মার্কেটসহ বিভিন্ন পাইকারি ও খুচরা বাজারে ক্রেতাদের ভীড় বাড়ছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের পাশাপাশি ছোলা, খেজুর, চিনি, ডাল, পেঁয়াজ, তেল ও অন্যান্য ইফতার সামগ্রীর কেনাকাটা বেড়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরবরাহ ঠিক থাকলেও দাম কিছুটা বেড়েছে। ভোজ্য তেলের বাজার নিয়ে কারসাজির অভিযোগ রয়েছে। রিয়াজউদ্দিন বাজারের ব্যবসায়ী সৈয়দ আহমদ বলেছেন, রমজান সামনে রেখে প্রতিদিন ক্রেতা বাড়ছে। কিছু পণ্যের দাম আগেই বাড়তি ছিল। রোজা উপলক্ষ্যেও কিছু কিছু পণ্যের দাম বেড়েছে। ফলমন্ডির ব্যবসায়ীরা জানান, খেজুরের চাহিদা বেশি, বিশেষ করে সৌদি আরব ও ইরান থেকে আমদানিকৃত খেজুরের বিক্রি ভালো চলছে।
চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী ইফতার বাজারগুলোও প্রস্তুতি নিচ্ছে। চকবাজার, কাজীর দেউড়ি, লালখান বাজার, আন্দরকিল্লা, হালিশহর, আগ্রাবাদ, বন্দরসহ প্রতিটি এলাকাতেই ইফতার বিক্রির নতুন নতুন পয়েন্ট তৈরি হচ্ছে। বেগুনি, পেঁয়াজু, চপ, শামি কাবাব, জিলাপি, হালিম এবং বিভিন্ন ধরনের ইফতারির দোকান তৈরি ও সাজানো শুরু হয়েছে। নগরীর অভিজাত হোটেল রেস্তোরাঁগুলোও নিয়েছে ইফতার উপলক্ষ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি।
চকবাজারের ইফতার বিক্রেতা মোহাম্মদ জামসেদ উদ্দিন বলেন, রমজান আসলে আমাদের ব্যবসা জমে ওঠে। আমরা নতুন করে দোকান সাজাচ্ছি, আগেভাগেই কিছু প্রস্তুতি নিচ্ছি যাতে প্রথম রোজা থেকেই বিক্রি ভালো হয়।
ঠিকঠাকভাবে সবকিছুর প্রস্তুতি নেয়া হলেও পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের সংকটের আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।
রমজান মাসে পানির চাহিদা বেশ বৃদ্ধি পায়। গরমও শুরু হয়েছে। এতে করে পানির চাহিদার ঠিকঠাক যোগান নিয়েও শংকা প্রকাশ করা হয়েছে। এই শংকাকে আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে লোডশেডিং। বিদ্যুৎ না থাকলে পানির উৎপাদন ব্যাহত হবে। সেইসাথে সরবরাহও করা যাবে না। অধিকাংশ স্থানেই মোটর চালিয়ে পানি নিতে হয়। বিদ্যুতের অভাবে যা ব্যাহত হবে। উদ্বেগ রয়েছে গ্যাস নিয়েও। চট্টগ্রাম পুরোপুরি এলএনজি নির্ভর। আমদানিকৃত এলএনজি প্রবাহ ঠিকঠাক না থাকলে গ্যাসের যোগান ও চাপ ব্যাহত হবে। যা বিদ্যুৎ এবং পানির যোগানে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। অবশ্য নগরবাসীর শংকা নাকচ করে দিয়ে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, চট্টগ্রাম ওয়াসা এবং কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেছেন, রমজান উপলক্ষ্যে আমাদের পুরোপুরি প্রস্তুতি রয়েছে। কোথাও কোনো সমস্যা হবে না।
চট্টগ্রাম ওয়াসার একজন কর্মকর্তা জানান, রমজানে পানির চাহিদা বাড়বে, তবে আমরা উৎপাদন ও সরবরাহ ঠিক রাখার চেষ্টা করছি। তিনি বলেন, আমাদের পর্যাপ্ত পানি রয়েছে। সরবরাহ লাইনে কিছু সমস্যা থাকায় কয়েকদিন কয়েকটি এলাকায় একটু সমস্যা হয়েছিল। এখন আর কোনো সমস্যা নেই।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গ্যাসনির্ভর বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে উৎপাদন হচ্ছে না বললেই চলে। কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রেও উৎপাদন কমেছে। আমাদেরকে কিছুটা লোডশেডিং করে পরিস্থিতি সামাল দিতে হচ্ছে। তবে রমজানে ইফতার, তারাবি এবং সেহেরিতে যাতে বিদ্যুতের কোনো সমস্যা না হয় সেদিকে সজাগ থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির একজন কর্মকর্তা জানান, সকালে ও সন্ধ্যায় গ্যাসের চাহিদা বেড়ে যায়। ফলে অনেক এলাকায় গ্যাসের চাপ কমে যায়। রমজানে এ সমস্যা যাতে না হয় সেদিকে আমরা মনযোগী থাকবো।
চট্টগ্রামের বিভিন্ন মসজিদে তারাবির জামাতের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। জমিয়তুল ফালাহ, আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ, বায়তুশ শরফ, চন্দনপুরা মসজিদ, কাতালগঞ্জ মসজিদ, চকবাজার মসজিদ, নাসিরাবাদ শাহী জামে মসজিদ, নাসিরাবাদ হাউজিং সোসাইটি মসজিদসহ নগরীর বড় ছোট সকল মসজিদে তারাবির নামাজের বিশেষ প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। শুধু মসজিদেই নয়, বিভিন্ন মার্কেট এবং বাসাবাড়ির ভবন কেন্দ্রিক তারাবির নামাজ আয়োজনের প্রস্তুতিও সম্পন্ন করা হচ্ছে। একইসাথে নেয়া হচ্ছে মসজিদ কেন্দ্রিক ইফতার প্রস্তুতিও।
রমজানে দিনভর সামাল দেয়া হলেও আছর থেকে ইফতারের আগ পর্যন্ত সময়ে নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে যানজট লেগে থাকে। এই পরিস্থিতির উত্তরণে ট্রাফিক বিভাগ বিশেষ ব্যবস্থা নেবে বলে জানিয়েছে।
রমজানকে সামনে রেখে সাধারণ মানুষ বাজার–সদাই সম্পন্ন করেছে। কেউ কেউ পুরো মাসের বাজার সদাই করে নিলেও অনেকেই দু’চারদিনের প্রয়োজনীয় বাজার সদাই করে ঘরে নিচ্ছেন। বাজার সদাই যাই হোক না কেন, সাধারণ মানুষ শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নামাজ রোজাসহ ইবাদত বন্দেগী যাতে করতে পারেন তা নিশ্চিত করতে প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।