তোরা দেখে যা আমিনা মায়ের কোলে/ মধু পূর্ণিমারি সেথা চাঁদ দোলে/ যেন ঊষার কোলে রাঙা–রবি দোলে ॥
আজ ১২ রবিউল আউয়াল। বিশ্ব মানবতার মুক্তির দূত, রহমাতুল্লিল আলামিন হযরত মুহাম্মদ (দ.)- ৫৭০ খ্রিস্টাব্দের ১২ রবিউল আউয়াল সোমবার সুবহে সাদিকের সময়ে এই পৃথিবীতে শুভাগমন করেছেন। তাঁর আগমনে বিশ্ব আনন্দে মেতে উঠেছিল। আইয়ামে জাহেলিয়া যুগ তথা কুসংস্কারাচ্ছন সমাজ ব্যবস্থার অবসান ঘটাতে এসেছিলেন বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (দ.)। সারা বিশ্বের মুসলমানরা এই দিনকে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (দ.) হিসেবে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করেন। দেশে দেশে উদযাপন করা হয় জুলুছসহ নানা ধরনের ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি। চট্টগ্রামে জশনে জুলুছের বর্ণাঢ্য আয়োজন করা হয়েছে। আনজুমান এ রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্টের উদ্যোগে প্রতি বছর এ জুলুছ বের করা হয়। এবারের জুলুছে নেতৃত্ব দেবেন আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ সাবির শাহ্ (মা.জি.আ)। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন শাহজাদা সৈয়দ মুহাম্মদ কাসেম শাহ্ (মা.জি.আ) ও সৈয়দ মুহাম্মদ মেহমুদ আহমদ শাহ্ (মা.জি.আ)।
পৃথিবীতে হযরত মুহাম্মদ (দ.) এসেছিলেন তাওহিদের মহান বাণী নিয়ে। প্রচার করেছেন ইসলাম তথা শান্তির ধর্ম। আরব সমাজ যখন নানা কুসংস্কারসহ পৌত্তলিকতার অন্ধকারে ডুবে ছিল, তখন মহানবী হযরত মুহাম্মদ (দ.)কে বিশ্বজগতের জন্য ‘রহমতস্বরূপ’ পাঠিয়েছিলেন সর্বশক্তিমান মহান আল্লাহ। তাঁর আবির্ভাবে এবং ইসলামের শান্তির বাণীর প্রচারে আলোড়িত হয় বিশ্ব। পবিত্র কুরআনে সূরা আল–আম্বিয়ার ১০৭ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ তা’আলা ঘোষণা করেন– ‘ওয়ামা আরসালনাকা ইল্লা রাহমাতাল্লিল আলামিন’ ‘আমি তো আপনাকে সমগ্র বিশ্বজগতের জন্য রহমত হিসেবেই প্রেরণ করেছি’। এই আয়াতটি, যেখানে আল্লাহ তা’আলা রাসুলুল্লাহ (দ.)-কে সমগ্র মানবজাতির জন্য রহমতস্বরূপ প্রেরণ করার কথা বলেছেন।
পবিত্র কোরআনের সুরা ইউনুসের ৫৮ নম্বর আয়াতে বলেছেন, ‘কুল বিফাদলিল্লা–হি ওয়া বিরাহমাতিহী ফাবিযা–লিকা ফালইয়াফরাহূ হুওয়া খাইরুম মিম্মা–ইয়াজমা’ঊন।
‘হে রসুল! আপনি বলুন, তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ এবং তার দয়াপ্রাপ্ত হয়ে আনন্দ প্রকাশ কর। এটি উত্তম সে সমুদয় থেকে যা তারা সঞ্চয় করেছে।’
৪০ বছর বয়সে নবুয়ত লাভ করেন মহানবী হযরত মুহাম্মদ (দ.)। বিশ্ববাসীকে তিনি মুক্তি ও শান্তির পথে একত্রিত হওয়ার আহ্বান জানান। সব ধরনের কুসংস্কার, গোঁড়ামি, অন্যায়, অবিচার ও দাসত্বের শৃঙ্খল ভেঙে মানবসত্তার চিরমুক্তির বার্তা প্রচার করেন তিনি। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (দ.) দীর্ঘ ২৩ বছর এই বার্তা প্রচার করেন।
পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (দ.) উপলক্ষে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, মহানবী হযরত মুহাম্মদ (দ.)-এর অনুপম জীবনাদর্শ, সর্বজনীন শিক্ষা ও সুন্নাহর অনুসরণ আজকের এ দ্বন্দ্ব–সংঘাতময় বিশ্বে শান্তি, ন্যায় এবং কল্যাণ নিশ্চিত করতে পারে।
গতকাল শুক্রবার ‘পবিত্র ঈদ–ই–মিলাদুন্নবী (দ.)’ উপলক্ষ্যে দেওয়া এক বাণীতে তিনি বলেন, ‘ধর্মীয় ও পার্থিব জীবনে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (দ.)-এর সুমহান আদর্শ ও সুন্নাহ বিশ্ববাসীর জন্য উৎকৃষ্টতম অনুসরণীয় ও অনুকরণীয় এবং এর মধ্যেই মুসলমানদের জন্য অফুরন্ত কল্যাণ, সফলতা ও শান্তি নিহিত রয়েছে।’
সর্বশেষ নবী ও রাসূল হযরত মুহাম্মদ (দ.)-এর জন্ম ও ওফাতের পবিত্র স্মৃতি বিজড়িত ঈদ–ই–মিলাদুন্নবী (দ.) সারাবিশ্বের মুসলমানদের জন্য অত্যন্ত পবিত্র ও মহিমান্বিত একটি দিন উল্লেখ করে এ উপলক্ষ্যে প্রধান উপদেষ্টা দেশবাসীসহ সমগ্র মুসলিম উম্মাহকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও মোবারকবাদ জানান।
এদিকে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (দ.) শান্তিপূর্ণভাবে পালনের লক্ষ্যে সরকার সারাদেশে সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে। আজ দিবসটি উপলক্ষে রাজধানী ঢাকা ছাড়াও চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনা ও রাজশাহীর মত প্রধান শহরগুলোতে সুষ্ঠু ও নিরাপদে জামাত ও শোভাযাত্রা নিশ্চিতে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী আইন–শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্কতা বজায় রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
কর্মসূচি : ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (দ.) পালনের জন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশনসহ বিভিন্ন সংগঠন নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। জাতীয় পতাকা ও কলেমা তায়্যিবা লিখিত ব্যানারে চট্টগ্রাম নগরসহ বিভিন্ন উপজেলার প্রধান সড়কগুলো সজ্জিত করা হয়েছে। নগরের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও পয়েন্টসমূহে দৃষ্টিনন্দন আলোকসজ্জা করা হয়েছে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে সংবাদপত্রগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার ও অনলাইন মাধ্যমে দিবসটির যথাযোগ্য গুরুত্ব তুলে ধরে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করা হবে।
এছাড়া দেশের সব হাসপাতাল, কারাগার, সরকারি শিশু সদন, বৃদ্ধনিবাস, মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে উন্নত মানের খাবার পরিবেশন করা হবে।