পবিত্র কোরআনের সূরা ‘কাউসার’–এ (আয়াত–২) আল্লাহ পাক এরশাদ করেন, ‘অতএব আপনি আপনার পালনকর্তার উদ্দেশ্যে নামাজ পড়ুন এবং কোরবানি করুন।’ আবার রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কোরবানি করল না, সে যেন আমাদের ঈদগাহের কাছেও না আসে।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩১২৩)। অর্থাৎ পবিত্র কোরআন ও হাদিস থেকে কোরবান ওয়াজিব হওয়ার বিষয়টি স্পষ্ট।
আগামী পরশু শনিবার ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর পবিত্র ঈদুল আজহা। ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎসব এই ঈদুল আজহা। ঈদ অর্থ উৎসব বা আনন্দ। ‘আজহা’ অর্থ কোরবানি বা উৎসর্গ করা। আবার কোরবানি বলতে ত্যাগও বুঝায়। অর্থাৎ ঈদুল আজহা হচ্ছে ত্যাগের উৎসব। এদিন চট্টগ্রামসহ দেশের সামর্থ্যবান মুসলমানরা পশু কোরবানির মধ্য দিয়ে ত্যাগের উৎসব করবেন। পশু কোরবানির আগে ঈদের নামাজে ধনী–গরিব সবাই এক কাতারে শামিল হয়ে মহান সৃষ্টিকর্তার সান্নিধ্য কামনা করবেন।
আবার আল্লাহ পাক পবিত্র কোরআনের সূরা হজ্জ–এ এরশাদ করেন, ‘এগুলোর (কোরবানির পশুর) গোশত ও রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছায় না, কিন্তু তোমাদের তাকওয়া পৌঁছে যায়’। তাই কোরবানি কেবল মাংস খাওয়ার জন্য নয়। বরং পরম করুণাময়ের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ ও সন্তুষ্টি অর্জন হতে হবে এ কোরবানির মূল উদ্দেশ্য। ইসলামে কোরবানি করা পশুর তিন ভাগের এক ভাগ নিজের জন্য রেখে আরেক ভাগ গরিব–মিসকিন ও এক ভাগ আত্মীয়স্বজনের মধ্যে বিলিয়ে দেওয়ার বিধান আছে। এ নির্দেশনা মেনে কোরবানিদাতারা দরিদ্র ও কোরবানি করতে অক্ষম লোকদের মাঝে জবাইকৃত পশুর মাংস বিলি করে সৃষ্টি করবেন সমতা ও ভ্রাতৃত্বের অনন্য দৃষ্টান্ত। তাই বলা যায়, কোরবানি কোরবানিদাতাদের মাঝে আত্মদান ও আত্মত্যাগের মানসিকতা সঞ্চারিত করে, আত্মীয়স্বজন ও পাড়া–প্রতিবেশীর সঙ্গে সুখ–দুঃখ ভাগাভাগি করে নেয়ার মনোভাব ও সহিষ্ণুতার শিক্ষা দেয়।
অবশ্য কোরবানির সঙ্গে জড়িয়ে আছে ত্যাগের মহিমা। কারণ মহান আল্লাহ্ পাকের সন্তুষ্টি লাভের জন্য হজরত ইবরাহীম (আ.) নিজ পুত্র হযরত ইসমাইল (আ.)’কে কোরবানি করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহ্ রাব্বুল আ’লামিনের অপার কুদরতে হযরত ইসমাইল (আ.)-এর পরিবর্তে একটি দুম্বা কোরবানি হয়ে যায়। হযরত ইবরাহীম (আ.)-এর ত্যাগের মহিমার কথা স্মরণ করে হিজরি দ্বিতীয় সন থেকে মুসলিম উম্মাহ আল্লাহ পাকের অনুগ্রহ লাভের আশায় পশু কোরবানি করে থাকেন।
চান্দ্র মাসের ১০, ১১ ও ১২ জিলহজের যে কোনো এক দিন কোরবানি করা যায়। তবে সারা বিশ্বে ১০ জিলহজ পশু কোরবানির মধ্য দিয়ে উদযাপন করা হয় ঈদুল আজহা। তাছাড়া ৯ জিলহজ ফজরের নামাজের পর থেকে ১৩ জিলহজ আসর পর্যন্ত প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর তাকবিরে তালবিয়াহ পাঠ করা ওয়াজিব। তালবিয়াহ হল– আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা–ইলাহা ইল্লাল্লাহি আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়ালিল্লাহিল হামদ।
ঈদ জামাত :
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের তত্ত্বাবধানে ঈদের প্রথম ও প্রধান জামাত সকাল সাড়ে ৭টা এবং দ্বিতীয় জামাত সকাল সাড়ে ৮টায় জমিয়াতুল ফালাহ জাতীয় মসজিদে অনুষ্ঠিত হবে। প্রধান জামাতে ইমামতি করবেন জমিয়তুল ফালাহ মসজিদের খতিব সৈয়দ আলাউদ্দিন আবু তালেব মোহাম্মদ আলাউদ্দিন আল কাদেরী। দ্বিতীয় জামাতে ইমামতি করবেন মসজিদটির পেশ ইমাম মাওলানা মোহাম্মদ আহমুদুল হক।
দায়েম নাজির জামেয়া মসজিদে ঈদুল আজহার জামাত সকাল ৮ টায়
আনজুমান–এ রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্ট পরিচালিত পশ্চিম ষোলশহরস্থ দায়েম নাজির জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া জামে মসজিদে ঈদুল আজহার জামাত সকাল ৮ টায় শুরু হবে। মুসল্লী ও পীর ভাইদের ঈদের জামাতে শরীক হয়ে উভয় জাহানের কামিয়াবী হাসিলের আহবান জানিয়েছেন আনজুমান ট্রাস্টের সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন ও দায়েম নাজির জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া জামে মসজিদের মোতোয়াল্লী মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন চৌধুরী।
এছাড়া সিটি কর্পোরেশনের তত্ত্বাবধানে ৯টি মসজিদে সকাল সাড়ে ৭টায় ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হবে। মসজিদগুলো হল– লালদীঘি সিটি কর্পোরেশন শাহী জামে মসজিদ, হযরত শেখ ফরিদ (র.) চশমা ঈদগাহ মসজিদ, সুগন্ধা আবাসিক এলাকা জামে মসজিদ, চকবাজার সিটি কর্পোরেশন জামে মসজিদ, জহুর হকার্স মার্কেট জামে মসজিদ, দক্ষিণ খুলশী (ভিআইপি) আবাসিক এলাকা জামে মসজিদ, আরেফীন নগর কেন্দ্রীয় কবরস্থান জামে মসজিদ, সাগরিকা গরুবাজার জামে মসজিদ এবং মা আয়েশা সিদ্দিকী চসিক জামে মসজিদ (ফ্লাইট লেফট্যানেন্ট মতিউর রহমান স্টেডিয়াম সংলগ্ন)। এছাড়া নগরের প্রতিটি ওয়ার্ডে স্থানীয় মসজিদ ও ঈদগাহে স্থানীয়দের তত্ত্বাবধানে ঈদের জামাত আয়োজন করা হবে।
এদিকে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় ও চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় ঈদ–জামাত কমিটির উদ্যোগে কাজীর দেউড়িস্থ জেলা স্টেডিয়াম সম্মুখ মাঠে সকাল ৮ টায় অনুষ্ঠিত হবে। এতে ইমামতি করবেন নগরীর বায়তুশ শরফ আদর্শ কামিল মাদ্রাসার সাবেক প্রিন্সিপ্যাল হযরত মাওলানা অধ্যক্ষ ড. সাইয়েদ মুহাম্মদ আবু নোমান।
মোমিন রোডস্থ শাহ আনিস জামে মসজিদে পবিত্র ঈদুল আজহার জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৭টায়। ঈদ জামাতে ইমামতি করবেন মসজিদের খতিব হাফেজ মাওলানা মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন।