পবিত্র ঈদুল আজহা কাল

ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর সমতা ও ভ্রাতৃত্বের অনন্য দৃষ্টান্ত

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ২৮ জুন, ২০২৩ at ৭:০৩ পূর্বাহ্ণ

ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর পবিত্র ঈদুল আজহা আগামীকাল বৃহস্পতিবার। ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎসব এই ঈদ। এ দিন চট্টগ্রামসহ সারা দেশে পশু কোরবানি দেবেন সামর্থ্যবান মুসলমানরা। এর মাধ্যমে পরম করুণাময়ের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ ও সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করবেন তারা। একইসঙ্গে মহান রাব্বুল আলামীনের নির্দেশনা মেনে দরিদ্র ও কোরবানি করতে অক্ষম লোকদের মাঝে জবাইকৃত পশুর মাংস বিলি করে সৃষ্টি করবেন সমতা ও ভ্রাতৃত্বের অনন্য দৃষ্টান্ত। এর আগে ঈদের নামাজে ধনীগরিব সবাই এক কাতারে শামিল হয়ে মহান সৃষ্টিকর্তার সান্নিধ্য কামনা করবেন।

আজহা’ অর্থ কোরবানি বা উৎসর্গ করা। ঈদের উৎসবের সাথে মিশে আছে চরম ত্যাগ ও প্রভু প্রেমের পরাকাষ্ঠা। প্রতিবছর চন্দ্র মাসের ১০ জিলহজ পশু কোরবানির মধ্য দিয়ে উদযাপন করা হয় ঈদুল আজহা। অবশ্য ১০, ১১ ও ১২ তারিখের যে কোনো এক দিন কোরবানি করা যায়। কোরবানিকৃত পশুর তিন ভাগের এক ভাগ গরিবমিসকিন, এক ভাগ আত্মীয়স্বজনের মধ্যে বিলিয়ে দেওয়ার বিধান আছে। আবার পুরোটাও বিলিয়ে দেওয়া যায়।

উল্লেখ্য, মহান আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি লাভের জন্য হজরত ইবরাহীম (.) নিজ পুত্র হজরত ইসমাইল (.)’কে কোরবানি করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহ রাব্বুল আ’লামিনের অপার কুদরতে হজরত ইসমাইল (.) এর পরিবর্তে একটি দুম্বা কোরবানি হয়ে যায়। হজরত ইবরাহীম (.) এর ত্যাগের মহিমার কথা স্মরণ করে বিশ্বব্যাপী মুসলিম সম্প্রদায় জিলহজ মাসের ১০ তারিখে আল্লাহ পাকের অনুগ্রহ লাভের আশায় পশু কোরবানি করে থাকে।

আর্থিকভাবে সামর্থ্যবান মুসলিমের জন্য মহান আল্লাহ কোরবানি ওয়াজিব করে দিয়েছেন। রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকার পরও কোরবানি দিল না, সে যেন আমার ঈদগাহে না আসে (মুসনাদে আহমদ)। আল কোরআনের সুরা কাউসারে বলা হয়েছে, ‘অতএব, তোমার পালনকর্তার উদ্দেশে নামাজ পড়ো এবং কোরবানি করো।’

ঈদুলআজহা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীসহ বিশ্বের সকল মুসলমানদের আন্তরিক অভিনন্দন ও মোবারকবাদ জানিয়ে পৃথক বাণী দিয়েছেন।

রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেন, কোরবানি আমাদের মাঝে আত্মদান ও আত্মত্যাগের মানসিকতা সঞ্চারিত করে, আত্মীয়স্বজন ও পাড়াপ্রতিবেশীর সঙ্গে সুখদুঃখ ভাগাভাগি করে নেয়ার মনোভাব ও সহিষ্ণুতার শিক্ষা দেয়।

প্রধানমন্ত্রী পবিত্র ঈদুলআজহার মর্মবাণী অন্তরে ধারণ করে নিজ নিজ অবস্থান থেকে জনকল্যাণমুখী কাজে অংশ নিয়ে বৈষম্যহীন, সুখী, সমৃদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি তার বাণীতে বলেন, আমি প্রত্যাশা করি, প্রতিবারের মতো এবারও ঈদ ধনীগরিব নির্বিশেষে সকলের জীবনে সুখ ও আনন্দের বার্তা বয়ে আনবে।

এছাড়া শুভেচ্ছা জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহীবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, সাবেক মেয়র এম মনজুর আলম। এছাড়া চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দীন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এটিএম পেয়ারুল ইসলাম, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ, সাবেক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, সাবেক মন্ত্রী মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন, সাবেক মেয়র মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী, বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, নগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন, সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর নগরবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

ঈদ জামাত : চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের তত্ত্বাবধানে ঈদের প্রথম ও প্রধান জামাত সকাল সাড়ে ৭টা এবং দ্বিতীয় জামাত সকাল সাড়ে ৮টায় জমিয়তুল ফালাহ জাতীয় মসজিদে অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম ও প্রধান জামাতে ইমামতি করবেন মসজিদের খতিব আল্লামা সৈয়দ আবু তালেব মোহাম্মদ আলাউদ্দীন আল কাদেরী। এছাড়া চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের তত্ত্বাবধানে ৮টি মসজিদে সকাল সাড়ে ৭টায় ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হবে।

মসজিদগুলো হচ্ছেলালদীঘি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন শাহী মসজিদ, হযরত শেখ ফরিদ (.) চশমা ঈদগাহ মসজিদ, সুগন্ধা আবাসিক এলাকা জামে মসজিদ, চকবাজার সিটি কর্পোরেশন জামে মসজিদ, জহুর হকার্স মার্কেট জামে মসজিদ, দক্ষিণ খুলশী (ভিআইপি) আবাসিক এলাকা জামে মসজিদ, আরেফীন নগর কেন্দ্রীয় কবরস্থান জামে মসজিদ, সাগরিকা গরুবাজার জামে মসজিদ ও মা আয়েশা সিদ্দিকী চসিক জামে মসজিদ (সাগরিকা জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়াম সংলগ্ন)। পাশাপাশি চসিকের ৪১টি ওয়ার্ডে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলরগণের তত্ত্বাবধানে একটি করে প্রধান ঈদ জামাত স্ব স্ব মসজিদ অথবা ঈদগাহে অনুষ্ঠিত হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ‘লাব্বাইক’ ধ্বনিতে মুখর আরাফাত ময়দান
পরবর্তী নিবন্ধমিনার তাঁবুতে বোয়ালখালীর এক হাজীর মৃত্যু