গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতার পালাবদলের আড়াই মাসের মাথায় পদ ছাড়লেন আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে দায়িত্ব পাওয়া দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ও দুই কমিশনার। চেয়ারম্যান মুহাম্মদ মইনুউদ্দীন আব্দুল্লাহ, কমিশনার আছিয়া খাতুন ও কমিশনার জহুরুল হক গতকাল মঙ্গলবার ‘ব্যক্তিগত’ কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মইনুউদ্দীন আব্দুল্লাহ বলেন, কিছুক্ষণ আগে পদত্যাগ করেছি। কিছুক্ষণ আগে পদত্যাগ পত্র পাঠিয়ে দিয়েছি। কেন পদত্যাগ করেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি জানি না। পরে কথা বলব। এর পরই ফোন কেটে দেন তিনি। বেলা ২টা ১০ মিনিটে পুরো কমিশন অফিস ত্যাগ করেন। যাবার বেলায় দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমিনের সঙ্গে আলিঙ্গন করেন দুদক কমিশনার আছিয়া খাতুন। আগে কখনো যাবার সময় কথা না বললেও এদিন যাবার সময় দুদকের নিরাপত্তা ও অভ্যর্থনার দায়িত্ব থাকা কর্মীদের উদ্দশে তিনি বলেন, তোমরা ভালো থাইকো। একজন কর্মী বলেন, তখন বুঝেছি ম্যাডাম পদত্যাগ করেছেন। এর আগে কখনো তিনজন স্যার এক সঙ্গে অফিস ছাড়েন নাই, আজ তিনজনই এক সঙ্গে অফিস ছেড়েছেন। খবর বিডিনিউজের।
দুর্নীতি দমন কমিশন আইন অনুযায়ী, একজন কমিশনার রাষ্ট্রপতি বরাবর এক মাসের লিখিত নোটিশ দিয়ে পদত্যাগ করতে পারেন। সাংবদিকদের প্রশ্নের উত্তরে দুদকের উপপরিচালক ও জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম বলেন, ২০০৪ সালের দুদক আইনের ১০ ধারা অনুযায়ী কমিশন মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি বরাবর পদত্যাগপত্র দাখিল করেছে। এখন কমিশনের কর্মকাণ্ড কীভাবে চলবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কমিশন আইনে এ বিষয়ে স্পষ্টভাবেই বলা আছে, সে অনুযায়ী কমিশন পরিচালিত হবে। কমিশনারদের পদত্যাগ পরবর্তী বিষয়ও আইনে স্পষ্টভাবে নির্ধারিত আছে। সে অনুযায়ী সব কিছু বাস্তবায়িত হবে।
মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ এক সময় ছিলেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব। ২০২১ সালের ৩ মার্চ রাষ্ট্রপতি তাকে দুদক চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেন। দুই কমিশনারের মধ্যে মো. জহুরুল হক একজন সাবেক জেলা জজ, আর আছিয়া খাতুন সরকারের সাবেক সচিব। পাঁচ বছর মেয়াদের জন্য তারা দুদকে নিয়োগ পেলেও পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দেড় বছর আগেই তাদের বিদায় নিতে হল। দুদকের চেয়ারম্যান সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ এবং কমিশনাররা হাই কোর্ট বিভাগের বিচারকের সমান মর্যাদা ও সুযোগ–সুবিধা ভোগ করেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন গত অগাস্ট মাসেই দুদক চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের পদত্যাগের জন্য আলটিমেটাম দিয়েছিল। গতকাল বিকালে দুদক সংস্কার কমিশনের সঙ্গে কমিশনের চেয়ারম্যান, কমিশনার ও কর্মকর্তাদের মতবিনিময় সভা হওয়ার কথা ছিল। তার আগেই তারা পদত্যাগ করলেন।