সূর্যপৃষ্ঠে নতুন এক ধরনের ‘রহস্যময়’ শব্দ তরঙ্গ শনাক্ত করেছেন বিজ্ঞানীরা। যেটি তাদের সম্ভাব্য ধারণার চেয়েও তিন গুণ দ্রুতগতিতে চলাচল করছে। নতুন এই শব্দ তরঙ্গকে ‘হাই-ফ্রিকোয়েন্সি রেট্রোগ্রেড’ (এইচএফআর) ঘুর্ণি তরঙ্গ নামে ডাকা হচ্ছে। সূর্যের প্লাজমার ঘূর্ণনের উল্টো দিকে তরঙ্গ সৃষ্টি করতে গিয়ে প্রথম দেখা মেলে এটির। এক ‘অজানা’ তরঙ্গের বিষয়টি বর্ণিত হয়েছে ২৪ মার্চ প্রকাশিত ‘নেচার অ্যাস্ট্রোনমি’ জার্নালের এক প্রতিবেদনে। খবর বিডিনিউজের।
বিজ্ঞানীরা জ্বলন্ত সূর্যের গভীরতা দেখতে পান না। তারা এটির ভেতরের গতিবিধি অনুমান করতে প্রায়ই শব্দ তরঙ্গগুলো পরিমাপ করেন। যেগুলো সূর্যের পৃষ্ঠ জুড়ে চলাচল করে এবং পৃষ্ঠে বাড়ি খেয়ে আবার ফিরে আসে।
স্পেস ডট কম প্রতিবেদনে লিখেছে, এইচএফআর-এর অস্তিত্ব ও উৎস একটি সত্যিকারের রহস্য এবং হয়ত এটি পদার্থবিদ্যায় আলোড়ন সৃষ্টিকারী কিছুর ইঙ্গিত দিচ্ছে।
বিজ্ঞানীদের ধারণা, সম্ভাব্য তিন প্রক্রিয়ার যে কোনো একটির কারণে এসব তরঙ্গ উৎপত্তির পর ত্বরান্বিত হয়ে ‘এইচএফআর’ তরঙ্গে পরিণত হয়েছে। সূর্যের চৌম্বক ক্ষেত্রের কারণে অথবা মাধ্যাকর্ষণ শক্তির ফলে ‘করিওলিস’ তরঙ্গের গতি বৃদ্ধির কারণে অথবা পৃষ্ঠজুড়ে এবং এর নীচে থাকা অতি উষ্ণ ‘কনভেকশন কারেন্ট’ এর কারণে এদের নজিরবিহীন উচ্চ গতি তৈরি হতে পারে বলে ধারণা করছেন বিজ্ঞানীরা। তবে সম্ভাব্য প্রক্রিয়াগুলোর একটিও তথ্যের সঙ্গেও মিলছে না।
বিজ্ঞানীরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করেছিলেন, ‘করিওলিস ইফেক্ট’-এর কারণে সূর্য-পৃষ্ঠের কাছাকাছি এসব শব্দ তরঙ্গের উৎপত্তি হয়েছে, যেটিতে ঘূর্ণায়মান গোলকটির বিষুবরেখার কোণ বিন্দুগুলো মেরুতে থাকা বিন্দুর চেয়ে দ্রুত গতিতে চলে বলে মনে হচ্ছে। জ্যোতির্পদার্থবিদ ও সৌরপদার্থবিদ বলছেন, সূর্যের ভেতর পর্যাবেক্ষণ করা সম্ভব নয় এমন জায়গাও সমাধানের সম্ভাবনা রয়েছে এটির। যদি ‘এইচএফআর’ তরঙ্গ এ তিনটি প্রক্রিয়ার একটির সঙ্গেও মেলে, তাহলে এটির সন্ধান আমাদের এখনো সূর্য সম্পর্কে থাকা কিছু খোলা প্রশ্নের উত্তর দিতে পারত। এসব নতুন তরঙ্গ কোনো প্রক্রিয়ার ফলাফল মনে হচ্ছে না; এটি রোমাঞ্চকর, কারণ, এটি নতুন অনেক প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে।
বিজ্ঞানীদের জ্ঞানের এ শূন্যতা পূরণ সম্ভব হলে, গবেষকরা হয়ত সূর্যের ভেতর সম্পর্কে আরও ভালো করে বুঝতে পারবেন। এ ছাড়া সূর্য কীভাবে পৃথিবী এবং সৌরজগতের অন্যান্য গ্রহকে প্রভাবিত করতে পারে সেটি সম্পর্কে আরও ভালো ধারণা পেতে সাহায্য করবে।
পাশাপাশি, ‘রসবি’ নামের আরেকটি উচ্চ-কম্পাংকের তরঙ্গ সম্পর্কেও ধারণা দিতে পারবে যেটি পৃথিবীর সমুদ্রের তরঙ্গের চেয়ে চারগুণ দ্রুতগতিতে ঘুরে বেড়াচ্ছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে স্পেস ডট কম।