পদবঞ্চিতদের বিক্ষোভ মিছিলে হামলা, আহত ৩

নগর বিএনপির ওয়ার্ড কমিটি বাতিলের দাবি

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ৫ জুন, ২০২৫ at ৫:৩২ পূর্বাহ্ণ

সদ্য ঘোষিত নগর বিএনপির আওতাধীন ওয়ার্ড কমিটি বাতিলের দাবিতে কয়েকটি ওয়ার্ডে মিছিল করেছেন পদবঞ্চিতরা। একটি ওয়ার্ডে ঝাড়ু মিছিলও হয়েছে। মিছিল থেকে যোগ্য ও ত্যাগী নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করা হয়নি বলে অভিযোগ করা হয়। দাবি করা হয়, নগর বিএনপির শীর্ষ নেতৃবৃন্দরা তাদের পছন্দের লোককে কমিটি স্থান দিয়েছেন। এমনকি দীর্ঘদিন আন্দোলনসংগ্রামসহ দলীয় কর্মসূচিতে নিষ্ক্রিয় এবং আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ঘনিষ্টদের কমিটিতে স্থান দেয়ারও অভিযোগ করা হয়। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে নগর বিএনপির দায়িত্বশীলরা দাবি করেছেন, কমিটিতে ত্যাগী ও যোগ্যদের মূল্যায়ন করা হয়েছে।

এদিকে ২৮ নম্বর ডবলমুরিং ওয়ার্ডে কমিটি বাতিলের দাবিতে আয়োজিত ঝাড়ু মিছিলে অতর্কিত হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। হামলায় মোহাম্মদ আরিফ, বাপ্পা ও মোহাম্মদ রাফি নামে তিনজন আহত হয়েছেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হামলার খবর পেয়ে স্থানীয় লোকজন জড়ো হয়ে নবগঠিত কমিটির এক নেতাকে ধাওয়া দেন। পরে তিনি একটি বাসায় আশ্রয় নেন। মিছিলে অংশ নেয়া প্রবীণ বিএনপি কর্মী কবির আহমদ আজাদীকে বলেন, আওয়ামী লীগের দোসররা অস্ত্র নিয়ে এসে আমাদের ছেলেমেয়েদের উপর হামলা করেছে। এতে তিনজন আহত হয়। যে কমিটি বিএনপি নেতাকর্মীদের উপর হামলা করতে পারে সেই কমিটি আমরা চাই না। সে কমিটি বিলুপ্তি দাবি করছি। এ কমিটি আমরা মানি না। টাকার বিনিময়ে কমিটি দেয়া হয়েছে। এদিকে কমিটি বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে একে খান মোড় এবং ৩নং ওয়ার্ডেও। তবে ৪০ নং ওয়ার্ডে আনন্দ মিছিল হয়েছে।

জানা গেছে, গত মঙ্গলবার রাতে নগর বিএনপির আওতাধীন ৩৫টি সাংগঠনিক ওয়ার্ডে আহবায়ক কমিটি করা হয়েছে। নগর বিএনপির আহবায়ক এরশাদ উল্লাহ ও সদস্য সচিব নাজিমুর রহমান কমিটি অনুমোদন করেন। কমিটি অনুমোদনের বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পক্ষে বিপক্ষে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। কমিটির অনেক নেতার সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতার থাকা ছবি পোস্ট করেও নেতিবাচক মন্তব্য করা হয়। ২৮, ৪১, ১১, ২৯, ২৭, ৩১, ৩ নম্বর ওয়ার্ডসহ বিভিন্ন ওার্ডের নবগঠিত আহ্বায়কসদস্য সচিবের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন নিষ্কিয় থাকা, আওয়ামী লীগ কানেকশনের অভিযোগ করা হয়।

সামগ্রিক বিষয়ে নগর বিএনপির আহবায়ক এরশাদ উল্লাহ আজাদীকে বলেন, প্রতিবাদ করাও একধরনের গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। সেগুলোকে সাদরে গ্রহণ করছি। দলের সর্বোচ্চ হাই কমান্ড কমিটি দিলেও অনেকে অসন্তোষ প্রকাশ করে, সেখানে আমরা কি। যারা কমিটিতে আসতে পারেনি তারা অভিযোগ করবে, এটা স্বাভাবিক। এগুলোকে আমি রাজনীতির সৌন্দর্য মনে করি।

তিনি বলেন, কমিটি আমরা এককভাবে দিইনি, আমি ব্যক্তিগতভাবেও দিইনি। সবার সঙ্গে আলোচনা করে সবার মতামত নিয়ে ঘোষণা করা হয়েছে। যারা কমিটিতে এসেছেন তারা ১৫ বছরের পরীক্ষিত। এরপরও কারো কোনো অভিযোগ থাকলে সেটা কেন্দ্রে করতে পারে।

আওয়ামী নেতাকর্মীদের সঙ্গে থাকা ছবি প্রসঙ্গে বলেন, সামাজিক অনুষ্ঠানে দেখা হলে বা ছবি ওঠলে দোষের না। আ জ ম নাছির মেয়র থাকাকালে বিএনপির অনেকে কাউন্সির ছিল, একসঙ্গে কাজ করেছে। তাই বলে কি তারা আওয়ামী লীগ হয়ে গেছে।

নগর বিএনপির সদস্য সচিব নাজিমুর রহমান বলেন, আওয়ামী লীগের মিছিলমিটিংয়ে থাকলে এক কথা। কিন্তু সামাজিক অনুষ্ঠানে আওয়ামী নেতৃবৃন্দের সাথে দেখা হওয়া দোষের কিছু মনে করি না। সামাজিক অনুষ্ঠানে থাকা ছবি দেখিয়ে যদি অপপ্রচার করা হয় তাহলে সেটা আমলে নেয়ার মত না। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন সাংগঠনিক অনিয়মের মধ্যে থাকা ওয়ার্ড কমিটিগুলো গঠন করা যায়নি, সেটাকে শৃঙ্খলায় আনার জন্য আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। এটা করতে গিয়ে হয়তো কিছু উনিশবিশ হয়েছে, আমরা তো শতভাগ শুদ্ধ করতে পারবো না। তবে ত্যাগী ও যোগ্যদের দিয়ে কমিটি করা হয়েছে এটা নিশ্চিত করে বলতে পারি।

পাঁচলাইশে বিক্ষোভ : পাঁচলাইশ ৩নং ওয়ার্ড বিএনপির আহবায়ক কমিটিতে ত্যাগী, কারানির্যাতিত ও যোগ্য নেতাদের বাদ দিয়ে স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে কমিটি করা হয়েছে দাবি করে এর প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেছে পাঁচলাইশ ওয়ার্ড বিএনপির বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা। গতকাল বিকেলে অঙিজেন কুয়াইশ সংযোগ সড়কের নয়াহাট এলাকায় এই বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করা হয়। সমাবেশ থেকে নেতৃবৃন্দ এই পকেট কমিটি দ্রুত বাতিল করে নতুন কমিটি ঘোষণার দাবি জানান।

পাঁচলাইশ ৩নং ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সিনিয়র সহ সভাপতি মোহাম্মদ ইসমাঈল বালির সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক এস এম আবুল কালাম আবুর পরিচালনায় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বায়েজিদ থানা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদের জসিম। সভায় উপস্থিত ছিলেন বায়েজিদ থানা বিএনপির সাবেক সহ সভাপতি মোরশেদুল আলম, মফজল আহমেদ কোম্পানি, যুগ্ম সম্পাদক সাইফুল ইসলাম সওদাগর, মো. ইউসুফ, আবুল বশর, হাজী মো. আলম, মো. আলমগীর, পাঁচলাইশ ৩ নং ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সি. যুগ্ম সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম, যুগ্ম সম্পাদক মাহবুবুর রহমান কাজল, ওসমান গণি, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল হালিম কালু, প্রচার সম্পাদক মো. চান মিয়া, থানা বিএনপির সাবেক সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আজম নাজের, যুব বিষয়ক সম্পাদক মো. ইলিয়াছ, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আব্দুস ছবুর, তাঁতী বিষয়ক সম্পাদক মো. ইলিয়াস, ওয়ার্ড সহ সভাপতি বাদশা মিয়া, যুগ্ম সম্পাদক মো. ফারুক, মোহাম্মদ মুছা, মহিউদ্দিন জুয়েল, নাজিম উদ্দীন নাজু, জসিম উদ্দিন মান্না, আনোয়ার হোসেন, আইয়ুব খান, মো. নাছির, আনোয়ার হোসেন সুজন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি বাতিলের খবরটি সঠিক নয় : উপদেষ্টা
পরবর্তী নিবন্ধহামজা-সোহেলের গোলে ভুটানকে হারালো বাংলাদেশ