৫ দিন পরেও খোঁজ নেই বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের বর্তমান সভাপতি এবং সদ্য বিলুপ্ত সংসদের সংসদ সদস্য নাজমুল হাসান পাপনের। গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের আগে–পরে অনেক সংসদ সদস্যই দেশ ছেড়ে চলে গিয়েছেন কিংবা অবস্থান নিয়েছেন নিরাপদ আত্মগোপনে। তবে নাজমুল হাসান পাপন ঠিক কোন অবস্থায় বিরূপ এই পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছেন, তা অবশ্য এখনো জানা যায়নি। এদিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতা বুঝে নিয়েছে। সেখানে ছাত্র প্রতিনিধি আসিফ মাহমুদ পেয়েছেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। সবশেষ এই দায়িত্ব ছিল ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের কাছেই। এখন প্রশ্ন উঠেছে বিসিবি নিয়ে। জাতীয় সংসদের পদ চলে গেলেও ক্রিকেট বোর্ডের অভিভাবক এখন পর্যন্ত পাপনই থাকছেন। বর্তমান মেয়াদ অনুযায়ী ২০২৫ সাল পর্যন্ত তিনিই থাকছেন ক্রিকেটের শীর্ষকর্তা। ক্ষমতার পালাবদলে তাকে সরানোরও কোনো সুযোগ থাকছে না। বোর্ডের ওপর সরকার বা অন্য কোনো শক্তির উপস্থিতিতে নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়বে বাংলাদেশ ক্রিকেট। গেল বছর লঙ্কান ক্রিকেট বোর্ডকে সরকারি হস্তক্ষেপের অভিযোগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসি। তাই অন্তর্বর্তী সরকারের সামনে সুযোগ থাকছে না পাপনকে সরিয়ে দেয়ার। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, বর্তমান পরিস্থিতিতে বোর্ড সভাপতি পদে নাজমুল হাসান পাপনের থাকা কিংবা না থাকা নিয়ে কোনো প্রকার ব্যাখ্যা নেই। তবে গঠনতন্ত্রের ১৩তম অনুচ্ছেদের এক ধারা অনুযায়ী মৃত্যু, পদত্যাগ, মানসিক ভারসাম্যহীনতা অথবা শৃঙ্খলাজনিত শাস্তি প্রদানের প্রেক্ষিতে পরিচালকের পদ শূন্য হওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। মানসিক ভারসাম্যহীনতার ক্ষেত্রে মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্ত থাকতে হবে। এছাড়া বোর্ডের গঠনতন্ত্রের ১৫(২) এর ধারা অনুযায়ী, শারীরিক অসুস্থতা, বিদেশ গমন বা যথাযথ কারণ ছাড়া পরিচালনা পরিষদের পরপর ৩ সভায় অনুপস্থিত থাকলে পরিচালকের সদস্যপদ বাতিল হবে। নাজমুল হাসান পাপন ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতির পাশাপাশি একজন পরিচালকও বটে। পাপনের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্তের জন্য তাই এমন নিয়মের দিকেই নজর থাকবে। বোর্ড গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, প্রতি দুই মাসে একটি করে পরিচালক সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। সেই বিবেচনায় অন্তত ৬ মাসের জন্য সময় পেতে পারেন নাজমুল হাসান পাপন। এর মাঝে নিজ থেকে পদত্যাগ না করে সময়ক্ষেপণ করলে বিসিবির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তার পরিচালক পদের মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে। আর সেখানেই ইতি ঘটবে সভাপতি হিসেবে তার মেয়াদের। ঢাকার ক্লাব প্রতিনিধি হিসেবে ২০২১ সালের সবশেষ নির্বাচনে বিসিবি পরিচালক হয়েছিলেন নাজমুল পাপন। পরবর্তীতে ২৫ পরিচালকের মধ্য থেকেই নির্বাচিত হয়েছিলেন বোর্ড সভাপতি হিসেবে। আইসিসির পক্ষ থেকে নিষেধাজ্ঞা এড়াতে নাজমুল হাসান পাপনের মেয়াদ শেষের অপেক্ষা করতেই হচ্ছে। বর্তমানে ক্রিকেট বোর্ডে তিনি চার বছরের জন্য সভাপতি নির্বাচিত। এছাড়া আছে ৬ মাসের অপেক্ষা। যদিও সেই পথে বোর্ড হাঁটবে কি না কিংবা চলমান অস্থিরতার সময়ে বোর্ড মিটিং আয়োজন নিয়েও আছে প্রশ্ন। বোর্ডের পরিচালনা সভা সাধারণত সভাপতিই আহ্বান করে থাকেন।
এছাড়া পরিচালকদের মধ্যে এক–তৃতীয়াংশের উপস্থিতি বৈঠকের জন্য অপরিহার্য। যাকে কোরাম হিসেবে অভিহিত করা হয়। বর্তমান পরিচালনা পরিষদের একটা বড় অংশই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলেন। এমন অবস্থায় বোর্ডের সভা নিয়েও আছে প্রশ্ন। ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বরে বিসিবি সভাপতি পদে বর্তমান মেয়াদ শেষ হবে। এরপরেই দেখা যেতে পারে অন্তর্বর্তী একটি কমিটি। সেখান থেকেই দেখা যাবে নতুন বোর্ড সভাপতি। এর আগে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে দুবার দেখা গিয়েছিল অন্তর্বর্তীকালীন কমিটি। ২০০৭ সালে সে সময়ের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে দেয়া হয়েছিল অ্যাড–হক কমিটি। এছাড়া ২০১৩ সালে আ হ ম মুস্তফা কামাল ও নাজমুল হাসান পাপনের মধ্যবর্তী সময়েও ছিল অন্তর্বর্তীকালীন এক কমিটি।












