পথে যেতে যেতে

মারুফ শাহ চৌধুরী | সোমবার , ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ at ৭:২৮ পূর্বাহ্ণ

রমনা পার্কে যমুনার পাশ দিয়ে দুই পাশের হকারদের কাছে সকাল বেলা মাছ মাংস থেকে শুরু করে সরিষার তেল, কচু শাক সবকিছু পাবেন। আসাযাওয়া দুই দলই কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে দরাদরি করে, কিছু হাতে নিয়েই বাসায় ফেরে।

রুটিন মাফিক হাঁটা হয় না। যে দুই দিন রোজা রাখি সে দুদিন হাঁটা বন্ধ রাখি।

কানাডায় থাকতে হাঁটার মধ্যে একটি নিঃশব্দতা, আকাশের নীল, গ্রীষ্মের আগমনে গাছের মধ্যে হলুদ ফুল, মাঝে মাঝে দমকা হাওয়া সে অন্য এক স্বপ্নীল জগতে নিয়ে যেত।

তবে কোন মতে ঘাম হতো না। এখানে কি হাঁটা যায়, দুই কদম হাঁটলেই আপনি ভিজে যাবেন। তারপরও আমার স্বদেশ।

এক মনে হাঁটছি, বেইলি রোড মোড় কাটিয়ে রমনা থানার পাশাপাশি আসতেই একটি খালি রিক্সা আমার পাশে সাঁ করে থেমে গেল।

রিক্সাওয়ালা সালাম দিল, যেন অনেক দিনের চেনা। আমারও একটু দোষ আছে, কেউ যেচে সালাম দিলে মনে করি লোকটি আমার চেনা। রিক্সাওয়ালা আমার হাতের লাঠি ধরে ফেলল, স্যার কষ্ট হচ্ছে, আমার রিক্সায় উঠুন আমি আপনাকে পৌঁছে দেব। আমি বললাম না না, লাগবে না। আমি হাঁটতে পারি। কিন্তু সে নাছোর বান্দা। আমাকে রিক্সায় তুলবে, বললো স্যার আপনার বাসা চিনি। একা খালি রিক্সা, উঠুন স্যার, মুরুব্বি মানুষ। আপনাকে কতবার মিন্টু রোডে দেখেছি, যাক আমি একটু ক্লান্ত বোধ করছিলাম, উঠে গেলাম তার অনুরোধে। মনে মনে ভাবছি হয়তো তার কথা সত্যি হতে পারে, কোন সময় তার রিক্সায় উঠছি, আমার মনে নেই হাজার মুখের মধ্যে, হয়তো সে মনে রেখেছে। মগবাজার মোড়ে আসতেই যেখানে আনুদিপ গ্যাস স্টেশন আছে, এখান থেকে সে সে ডান দিকে পুলিশ বক্স এর একটু ফাঁকা জায়গায় রিক্সাটা ওপারে নিয়ে যেতে চাইলে আমি বাধা দিলাম, বললাম তো সেদিকে নয় আমার বাসা তো বাংলা মোটর এর দিকে। সে বলল স্যার বাঁদিকে ভীড় আছে, ওইদিকে মোড় ঘুরে যাব। আমি বললাম, না তুমি বাম দিকে যাও। পরে ভাবলাম সে আমার বাসা চিনে না, অনুমান করতে পারছে না কাছে কোথায় হবে। একটু বুদ্ধি খাটিয়ে ঠিকানাটা নিয়ে নিল। মগবাজারের কাছে আমাদের এপার্টমেন্ট, রিকশা গেট দিয়ে ঢুকে লিফটের সামনে চলে এলো। অনেক সময় রিক্সায় বাজার থাকলে সিকিউরিটিরা নামিয়ে দেয়। আমি নেমে রিক্সাওয়ালাকে ধন্যবাদ দিয়ে ২০ টাকা দিলাম। সে টাকাটা নিয়ে আমার সাথে লিফটের গোড়ায় চলে আসলো। বলল স্যার আমি একটু আপনার বাসায় যাব, আপনার সাথে একটু কথা আছে। আমি বললাম বাসায় যেতে হবে না তুমি এখানে বল। বললো স্যার, পরশু আমার মেয়ে বিয়ে, আমি আগামী কাল পটুয়াখালী চলে যাব। একটি মাত্র মেয়ের বিয়ে দিচ্ছি কিছু টাকাপয়সার দরকার। আমাকে একটু সাহায্য করেন। একটু বিস্মিত হলাম, বললাম তুমি আমাদের অফিসে বসো, আমি আসছি। বাসায় উঠতে হবে না। ঘরে বসে চিন্তা করতে লাগলাম, জীবনে সরল মনে বিশ্বাস করে অনেক ঠকেছি, মাঝে মাঝে বোকা বনে গেছি। ইন্টারকমে টেলিফোন করলাম। ম্যানেজারকে সব ঘটনা খুলে বললাম। যদি মনে কর তাকে পরীক্ষা করে তার মেয়ের সত্যি বিয়ে তবে ৫০০ টাকা দিয়ে দিও। আর যদি মনে কর এটাতে ভেজাল আছে তবে ২০০ টাকা দিও। মনে করলাম অভাবী মানুষ ২০০ টাকা দিয়ে দিলাম। কিছুক্ষণ পর ম্যানেজার জসিমকে টেলিফোন করলাম বললাম কী ব্যাপার? বলল স্যার ৫০০ টাকা দিয়ে দিয়েছি।

আমি একটু চিন্তায় পড়ে গেলাম। আমি মনে মনে ভাবলাম একটি কন্যাদায়গ্রস্ত পিতাকে হয়তো সাহায্য করলাম, কেয়ারটেকার কে বললাম ভালো মত পরীক্ষা করেছিস। স্যার কিছু মনে করবেন না মনে করলেন যাকাত দিয়ে দিলেন। আমার তো ঠিক মনে হল। গিন্নীকে কিছু বললাম না, চেপে গেলাম।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের মৃত্যু ফাঁদ থেকে পরিত্রাণ চাই
পরবর্তী নিবন্ধতওবা