সাধারণত ব্যস্ত সড়কের পাশে ফুটপাত তৈরি করা হয় সাধারণ মানুষের নির্বিঘ্নে চলাচলের জন্য। মানুষ যেন অনায়াসে চলাফেরা করতে পারে, ফুটপাত ব্যবহার করতে পারে; সেজন্য ফুটপাত পরিচ্ছন্ন রাখতে হয়। এর পাশে দোকানপাট নির্মাণ বা ফুটপাতের ওপর হকারদের বসতে দেওয়া কোনোভাবেই উচিত নয়। কিন্তু বাস্তবে আমরা কী দেখি! দেখি এর বিপরীত চিত্র। ফুটপাতের পাশে গড়ে ওঠা দোকানগুলোর মালামালেই দখলে থাকে ফুটপাতের অর্ধেক জায়গা। ফলে ফুটপাতে চলাচল করতে পথচারীদের অসুবিধা হয়। অনেক সময় ফুটপাতের এ অবস্থার জন্য পথচারীদের রাস্তার পাশ দিয়ে চলতে হয়। বিশেষ করে নারীদের চলাচলে বেশি অসুবিধা দেখা দেয়। এসব দোকানে জনসাধারণের ভিড়ের কারণে নারী পথচারীদের চলাচল করতে হিমশিম খেতে হয়। ফলে বাধ্য হয়ে তাদের প্রধান সড়কে হাঁটতে হয়। নগর বিশেষজ্ঞরা বলেন, ফুটপাত শুধু রাস্তা বা সড়কের সৌন্দর্যই বাড়ায় না। পথচারীদের নিরাপদে হাঁটতে সাহায্য করে। নির্বিঘ্নে চলাচলের উপযুক্ত স্থান ফুটপাত। প্রশস্ত ফুটপাতের কারণে যানজট বা দুর্ঘটনাও কমে অনেক। ব্যস্ত নগরীকে যানজটমুক্ত রাখতে স্বল্প দূরত্বে হেঁটে চলারও কোনো বিকল্প নেই।
নগরের ফুটপাতগুলোর দিকে তাকালে করুণ চিত্র ভেসে ওঠে। ফুটপাত যে মানুষের চলাচলের অনুপযোগী হয়ে যাচ্ছে, একটা চরম বিশৃঙ্খলা এবং সময়ের বিশাল অপচয় হচ্ছে- যার ফলে মানুষের জন্য নগর বসবাসের অনুপযোগী হয়ে যাচ্ছে, সেদিকে যেন তাকানোর সময় নেই কারো।
ছোট ছোট দোকান, নির্মাণসামগ্রী, ব্যবসাসামগ্রী আর হকারদের ঠেলে গন্তব্যে পৌঁছাতে প্রতিদিনই হয়রানি পোহাচ্ছেন পথচারীরা। আবার কোথাও কোথাও পাশের দোকানের পণ্যসামগ্রী রাখা হয় সামনের ফুটপাত দখল করে। এমতাবস্থায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন সড়ক-ফুটপাত দখলমুক্ত করতে ‘স্ট্রাইকিং ফোর্স’ নামানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ২৫ জুলাই প্রকাশিত দৈনিক আজাদীতে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সড়ক ও ফুটপাত থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ এবং দখলদারমুক্ত করতে প্রায় অভিযান চালায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সকালে অভিযান চালালে বিকেলে আবারো দখল হয়ে যায়। এ অবস্থায় উচ্ছেদকৃত জায়গা পুনর্দখল রোধে ‘স্ট্রাইকিং ফোর্স’ বা বিশেষ দল মাঠে নামাচ্ছে সংস্থাটি। দলটি উচ্ছেদ হওয়া জায়গাগুলো নিয়মিত পরিদর্শন করবে। এ সময় কোথাও পুনর্দখল হতে দেখলে সাথে সাথে আবারো উচ্ছেদে ‘অ্যাকশন’ শুরু করবে। এ ছাড়া সারা শহর ঘুরে ঘুরে কোথাও সড়ক ও ফুটপাত দখল হয়েছে কীনা তা চিহ্নিত করবে নবগঠিত ‘স্ট্রাইকিং ফোর্স’ এর সদস্যরা।
সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী এ বিষয়ে দৈনিক আজাদীকে বলেন, আলাদা বিশেষ দল গঠন করেছি। শীঘ্রই তারা মাঠে নামবে। সবসময় টহলে থাকবে দলটি। উচ্ছেদকৃত জায়গাগুলো মনিটরিং করবে। উচ্ছেদকৃত জায়গায় যদি কেউ আবারো স্থাপনা নির্মাণ করে তাহলে তারা সাথে সাথে অ্যাকশনে নামবে। উচ্ছেদ করবে। দলটির আলাদা ইক্যুপমেন্ট থাকবে।
এক প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, শুধু উচ্ছেদকৃত জায়গা না। পুরো শহর ঘুরে ঘুরে কোথাও সড়ক এবং ফুটপাত দখল হয়েছে কীনা তা চিহ্নিত করে প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মর্কর্তাকে রিপোর্ট করবে বিশেষ দলের সদস্যরা। এরপর ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান চালানো হবে। তিনি বলেন, ফুটপাত ও রাস্তায় কোনো অবৈধ দখলদার থাকতে পারবে না। যত বড় শক্তিশালীই হোক না কেন আমরা উচ্ছেদ করবো এবং পুনরায় যাতে দখল না হয় সেটাও নিশ্চিত করব। শহরের সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনতে যা যা করণীয় সবটুকই করব।
আজাদীর প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় যে, সড়ক ও ফুটপাত অবৈধ দখলমুক্ত করে শহরের সৌন্দর্য ফেরানোর পাশাপাশি সাধারণ মানুষের চলাচল নির্বিঘ্ন করতে চান সিটি মেয়র। এর অংশ হিসেবে সমপ্রতি উচ্ছেদ অভিযানও জোরদার করা হয়। পরিচ্ছন্ন বিভাগ এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সমন্বয়ে নিয়মিত অভিযানও পরিচালিত হচ্ছে।
ফুটপাত দখলমুক্ত করার জন্য বিভিন্ন সময় সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে অভিযান পরিচালনা করা হয় এবং ফুটপাত দখলমুক্ত করাও হয়। কিন্তু কিছুদিন পরই অবৈধ শক্তির ছত্রছায়ায় সেই ফুটপাত আবার দখল হয়ে যায়। প্রভাবশালীদের আশ্রয়ে ফুটপাত দখল করে যারা, তাদের দুর্বল বা অসহায় ভাববার অবকাশ নেই। তারা প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ফুটপাত দখল করে রাখে। তাদের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষ আইনের প্রয়োগ করতেও সক্ষম হয় না।
পথচারীদের অবাধ যাতায়াতের সুবিধার জন্য ফুটপাত উন্মুক্ত থাকা দরকার। ফুটপাত নাগরিকদের চলাচলের সুবিধার্থে পরিচ্ছন্ন থাকবে-সেই প্রত্যাশা সবার। দখলমুক্ত ফুটপাত নাগরিক অধিকার। নগর বিশ্লেষকরা বলেন, প্রশাসনিক ঔদাসিন্যতার কারণে নাগরিক অধিকার নষ্ট হতে পারে না।