পথচলা ছিল কণ্টকাকীর্ণ

মোহাম্মদ ইউনুছ | শুক্রবার , ১৫ আগস্ট, ২০২৫ at ১০:৪৩ পূর্বাহ্ণ

ইসলামের আলো ছড়ানোর ইতিহাস আর ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রামের গৌরবগাথা এই দুইয়েরই স্মারক আমার জন্মভূমি চট্টগ্রামের বোয়ালখালীর শ্রীপুর গ্রামে। বিপ্লবী কল্পনা দত্তের গ্রাম, ইতিহাসঐতিহ্যে সমৃদ্ধ এই জনপদেই আমার জন্ম, বেড়ে ওঠা ও শৈশবকৈশোরের স্মৃতিমাখা দিনগুলো কেটেছে কর্ণফুলীর জলের কলতানে ভেসে থাকা গ্রামীণ প্রকৃতির স্নিগ্ধ পরশে। স্নাতক শেষ করেই পা রাখি বন্দরনগরীর কর্মব্যস্ত শহরে। ইচ্ছা ছিল ব্যাংকার হওয়ার। সেই স্বপ্ন নিয়েই গিয়েছিলাম ঢাকায়। কিন্তু ভাগ্যের লিখন ভিন্ন ছিলপরিবারের ইচ্ছায় আবেদন করা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের চাকরির পরীক্ষার ডাক এলো, আর সেটাই হয়ে গেল জীবনের প্রথম ও শেষ চাকরির পরীক্ষা। বাবামা ও সুহৃদদের দোয়ায় সাফল্য ধরা দেয়। সরকারি চাকরির মধ্য দিয়ে শুরু হয় নতুন অধ্যায়চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে আমার কর্মজীবনের সূচনা। বাবা বলতেন, ‘এই চাকরিতে মানুষের জন্য কাজ করার অপার সম্ভাবনা রয়েছে।’ সেই কথা মেনে আমি এগিয়ে চলি। যে পদেই ছিলামকোর্ট পেশকার, রাজস্ব শাখার কর্মকর্তা কিংবা প্রশাসনিক দায়িত্বেসব সময় চেষ্টা করেছি দলমত, ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে সেবা ও সহযোগিতা দিতে। ‘পেশকার ইউনুছ’, ‘বড় মিয়া’ বা কর্মনিষ্ঠ ইউনুছ হিসেবেই আমার পরিচিতি গড়ে উঠেছিল। এই দায়িত্ব পালনে আনন্দ পেয়েছি, বাবার স্বপ্নপূরণ হয়েছে বলেই তৃপ্তি অনুভব করি।

আমার ব্যক্তিজীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন, সন্তানদের শিক্ষিত করে দেশ ও মানুষের সেবায় উৎসর্গ করার প্রচেষ্টা। আল্লাহর রহমতে আমার একমাত্র পুত্র ব্যারিস্টার, বড় মেয়ে চিকিৎসক ও কনিষ্ঠ মেয়ে প্রকৌশলী হওয়ার পথে এগিয়ে যাচ্ছে। তিন দশকেরও বেশি সময় ডিসি অফিসে কাজ করেছি। এই দীর্ঘ কর্মজীবনে কখনোই কাউকে খালি হাতে ফেরত দিইনিএটা আমার আন্তরিক চেষ্টার ফল। বিশেষ মনোযোগ দিয়েছি ননক্যাডার কর্মকর্তাকর্মচারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে। প্রথম দিকে আমাদের পদোন্নতি ছিল খুবই দুর্লভ। এই বাস্তবতা বদলাতে সহকর্মীদের নিয়ে সংগঠিত হয়ে কাজ করেছি। আজ সেই প্রচেষ্টা সফল হয়েছেদেশজুড়ে সহকর্মীরা এখন নিয়মিত পদোন্নতি পাচ্ছেন। এই পরিবর্তন আনতে পেরেছি বলেই আত্মতৃপ্তি পাই। চাকরি জীবনের প্রান্তসীমায় দাঁড়িয়ে ফিরে তাকাই লাল দালানের দিকেযেখানে প্রতিটি ইট আর ধুলোকণায় জড়িয়ে আছে আমার কর্মজীবনের গল্প, সেবার রোজনামচা। আমি বিদায় নিলেও ফিরে আসব বারবারস্মৃতির পাতায়, ফুলের গন্ধে, বাতাসের পরশে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমা
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮ ব্যাচের এক অনন্য অনুষ্ঠান