একুশে পদকপ্রাপ্ত ব্যক্তিত্ব ও দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক বলেছেন, হকাররা আমার কাছে বেশ কিছু দাবি–দাওয়া দিয়েছেন। দেখেন, বাংলাদেশে এমন কোনো সৎ ব্যবসা নেই, যেটি ৪০ শতাংশ কমিশন পায় বা লাভ করতে পারে। আমাদের কাগজ তো ফ্রি পাওয়া যায় না। আপনারা (হকার) দাবি করেছেন, আপনাদের কমিশন বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ করার জন্য। এখন আপনারা বলেন, পত্রিকা চালানো ভালো হবে নাকি কমিশন বাড়িয়ে কিছুদিনের মধ্যে বন্ধ করে দেয়া ভালো হবে?
গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নগরীর কেসিদে রোড এলাকার একটি কমিউনিটি সেন্টারে চট্টগ্রাম সংবাদপত্র বিভাগীয় এজেন্ট এসোসিয়েশন আয়োজিত চট্টগ্রাম সংবাদপত্র হকারদের মতবিনিময় সভা এবং সাংস্কৃতিক সন্ধ্যায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
হকারদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমি আপনাদের কাছে প্রশ্ন রাখতে চাই, আপনারা যেসব বাড়িতে কাগজ দেন আর যেসব বাড়িতে কাগজ নেন না, সেখানে গিয়ে কি কখনো জিজ্ঞেস করেছেন, আপনাদের কাগজ লাগবে কিনা। আমার মনে হয় না আপনারা সেটি করেন। আপনারা ফজরের নামাজের পর এসে চার ঘণ্টার মধ্যে পত্রিকা বিলি করে তারপর অন্য কাজে চলে যান। আমি ৪০ বছর নিজে কাগজ বিলি করেছি। আমি মনে করি, আমি যে কাজ করি সেটি গৌরবের কাজ। কাজ কখনো ছোট হতে পারে না। আরেকটি বিষয় হলো, আমি আপনাদের বলতে চেয়েছিলাম, এখন যে ৪০ শতাংশ কমিশন আছে, সেটি যদি ৫ শতাংশ কমানো যায়, তাহলে আপনিও বাঁচবেন, আমিও বাঁচব। আপনারা জানেন, আজকে থেকে ২ বছর আগে পত্রিকায় যে বিজ্ঞাপন ছিল, সেটি এখন আর নেই। আগামী কয়েক বছরে সেই বিজ্ঞাপন আসবে কিনা তাও জানি না। কিন্তু আমাকে কাগজ প্রতিদিন বের করতে হবে। কারণ আমার বাবা আমাকে একটি পবিত্র দায়িত্ব দিয়েছেন।
প্রধান বক্তা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী পাট শ্রমিক দলের সভাপতি ও ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটির পরিচালক সাঈদ আল নোমান বলেন, আমি যখন ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠা করি, তখন আমি নিজে পত্রিকায় ভেতরে প্রতিষ্ঠানের লিফলেট ঢোকাতাম। আমার এই কাজের সহযোগী ছিলেন আমার এই হকার ভাইয়েরা। আজকে এই হকার ভাইদের কিছু কথা শুনে তাদের খুব অসহায় মনে হলো। ইলেকট্রনিক মিডিয়া এবং অনলাইন মিডিয়ার কারণে এখন প্রিন্ট মিডিয়ার গ্রাহক কমে যাচ্ছে–এটি চরম সত্য। কারণ সবাই কাগজের পত্রিকার খবর অনলাইনে পড়ছে। তাই আমার মতে, হকার ভাইদেরও বিকল্প আয়ের চিন্তা করতে হবে। আপনাদের কাজ ছোট নয়। আমি বিমানে ওঠার সময় আমার ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটির ২০০ লিফলেট নিয়ে উঠেছিলাম। বিমানের সহযাত্রীদের আমি সেই লিফলেট দিয়েছি। আমি মনে করি এতে লজ্জার কিছু ছিল না।
অনুষ্ঠানে উদ্বোধক হিসেবে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সদস্য সচিব ও দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার আবাসিক সম্পাদক জাহিদুল করিম কচি। চট্টগ্রাম সংবাদপত্র বিভাগীয় এজেন্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি আব্দুল আলী মজুমদার রান্টুর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন পিচ ইন্টারন্যাশনাল হিউম্যান রাইটসের চেয়ারম্যান কামরুল কায়েস চৌধুরী, চট্টগ্রাম সংবাদপত্র হকার্স ইউনিয়নের সভাপতি মো. আবু তাহের, সাধারণ সম্পাদক ওসমান গনি টিপু ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. হেফাজত ইসলাম প্রমুখ। অনুষ্ঠানের শেষে র্যাফল ড্রতে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেয়া হয়। পরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়।