চট্টগ্রাম বন্দরের পতেঙ্গা কন্টেনার টার্মিনালের (পিসিটি) যাত্রা শুরু হচ্ছে আজ। সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠান ‘রেড সি গেটওয়ে টার্মিনাল’ আজ প্রথমবারের মতো এই টার্মিনালে একটি গিয়ারড কন্টেনার ভ্যাসেল বার্থিং দেবে। একই সাথে তারা শুরু করবে কন্টেনার হ্যান্ডলিং কার্যক্রম। নতুন নির্মিত এ টার্মিনাল বছরে ৫ লাখ টিইইউএস (২০ ফুট সমমানের) কন্টেনার হ্যান্ডলিং করতে পারবে।
চট্টগ্রাম বন্দর তথা বাংলাদেশের কোনো বন্দরের ইতিহাসে পিসিটিই প্রথম কোনো টার্মিনাল যেটি বিদেশি কোম্পানি পরিচালনা করবে। এই উদ্যোগের মাধ্যমে বিদেশি বিনিয়োগের পাশাপাশি চট্টগ্রাম বন্দর একটি ল্যান্ডলর্ড পোর্ট হিসেবেও আত্মপ্রকাশ করলো। সৌদি আরবের জেদ্দাভিত্তিক রেড সি গেটওয়ে টার্মিনালের (আরএসজিটি) সঙ্গে মাস ছয়েক আগে চুক্তি হয় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের। কাস্টমস আনুষ্ঠানিকতা এবং প্রয়োজনীয় ইক্যুইপমেন্ট সংগ্রহ করে রেড সি গেটওয়ে বাংলাদেশ লিমিটেড আজ থেকে কাজ শুরু করছে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক গতকাল দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘মায়ের্কস দাবাও’ নামের একটি কন্টেনার ভ্যাসেল আজ সকালের জোয়ারে জেটিতে ভিড়ানো হবে। খালাস করা হবে আমদানি পণ্যবোঝাই কন্টেনার। এর মধ্য দিয়ে শুরু হবে হ্যান্ডলিং কার্যক্রম। এ উপলক্ষ্যে মঙ্গলবার বিদেশী প্রতিষ্ঠানটি টার্মিনালে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে যাচ্ছে। সিঙ্গাপুরের পতাকাবাহী জাহাজটি গত শনিবার দুপুরে মালয়েশিয়ার পোর্ট কেলাং হয়ে চট্টগ্রাম এসেছে। জাহাজটির দৈর্ঘ্য ১৮৫ দশমিক ৯৯ মিটার ও ড্রাফট (পানির নিচে থাকা অংশ) ৯ মিটার।
সূত্র জানায়, বন্দরের নিজস্ব অর্থায়নে এক হাজার ১৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গা উপকূলে নির্মিত হয়েছে পিসিটি। পাবলিক–প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) আওতায় সৌদি আরবের আরএসজিটি এ টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্ব পায়। তারা শর্তসাপেক্ষে আগামী ২২ বছর টার্মিনাল পরিচালনা করবে। গত বছরের ৬ ডিসেম্বর আরএসজিটির সঙ্গে এ বিষয়ে চুক্তি হয়।
এই টার্মিনালে এখন কেবলমাত্র ক্রেনযুক্ত জাহাজই বার্থিং দেয়া হবে। গ্যান্ট্রি ক্রেন এসে গেলে সব ধরনের জাহাজ বার্থিং দেয়া হবে।
এর আগে একটি অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়াল অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল জানিয়েছিলেন, সব সরঞ্জাম সংগ্রহ করে পিসিটি পূর্ণ সক্ষমতায় যেতে আরও এক থেকে দেড় বছর সময় লাগতে পারে। শর্ত অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সব ইক্যুইপমেন্ট সংগ্রহ করবে দায়িত্ব পাওয়া বিদেশী প্রতিষ্ঠান। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ তাদের কাছ থেকে নির্দিষ্ট হারে চার্জ পাবে।
পিসিটি’তে তিনটি কন্টেনার ও একটি তেল খালাসের (ডলফিন) জেটি রয়েছে। এগুলোতে একসঙ্গে চারটি জাহাজ ভিড়ানো যাবে। কন্টেনার জেটির দুটিতে গ্যান্ট্রি ক্রেন থাকবে। যেখানে ভিড়তে পারবে গিয়ারলেস (ক্রেনবিহীন) জাহাজ এবং অপরটিতে গিয়ার্ড (ক্রেনযুক্ত) জাহাজ। পিসিটির চারটি জেটিতে একসঙ্গে চারটি জাহাজ বার্থিং নিয়ে পণ্য ওঠানামা করার সুযোগ রয়েছে। ফলে বন্দরের বহির্নোঙরে জাহাজের চাপ কমে যাবে। পণ্য খালাসের অপেক্ষায় জাহাজকে দীর্ঘদিন বসে থাকতে হবে না।
সূত্রমতে, এখানে সমুদ্রের গভীরতা বেশি থাকায় ভিড়ানো যাবে অপেক্ষাকৃত বড় আকারের জাহাজ। ১০ মিটার ড্রাফট ও ২০০ মিটার লম্বা জাহাজ ভিড়তে পারবে অনায়াসে। এর আগে ২০০ মিটার লম্বা একটি জাহাজ পরীক্ষামূলকভাবে জেটিতে আনা হয়েছিল।
পিসিটি’র মধ্য দিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর দীর্ঘ প্রায় ১৮ বছর পর পেতে চলেছে নতুন কন্টেনার টার্মিনাল। এর আগে নিউমুরিং কন্টেনার টার্মিনাল নির্মিত হয়েছিল ২০০৬ সালে।
পিসিটি চট্টগ্রাম বন্দর তথা দেশের আমদানি রপ্তানি বাণিজ্যে নতুন মাত্রা যোগ করবে বলেও বন্দর সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক মন্তব্য করেন।