প্রায় সাড়ে তিনশ কোটি টাকা বিনিয়োগে সিডিএ পতেঙ্গা এলাকায় একটি আবাসিক এলাকা গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে। এক যুগেরও বেশি সময় পর সিডিএ নতুন এই আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে। নগরীর পতেঙ্গা এলাকায় আউটার রিং রোডের পাশে ২০ একর জায়গায় বে পার্ল হাউজিং নামের এই আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। এতে শতাধিক আবাসিক প্লট এবং ১৫টি বাণিজ্যিক প্লট রেখে সিডিএ ইতোমধ্যে ডিপিপি প্রণয়ন করেছে। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, প্রতি কাঠা আবাসন প্লটের দাম পড়তে পারে ৩৫ থেকে ৪০ লাখ টাকা এবং বাণিজ্যিক প্লটের প্রতি কাঠার দাম হবে ৭০ থেকে ৮০ লাখ টাকা। এতো টাকা দিয়ে কেউ প্লট কিনবে কিনা বা প্রকল্পটি যথাযথভাবে বাস্তবায়ন সম্ভব কিনা তা নিয়ে নতুন করে চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, নগরীর আবাসন সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) ১২টি আবাসিক প্রকল্পে প্রায় ৬ হাজার ৬৬০টি প্লট বরাদ্দ দিয়েছে। ২০০৮ সালে অনন্যা আবাসিক নামের সর্বশেষ আবাসন প্রকল্প গ্রহণ করে সিডিএ। এরপর চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আর কোন আবাসিক প্লট তৈরি করেনি। ভূমির মৌজা মূল্য অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়ায় সিডিএর পক্ষে প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং তা তুলনামূলক কম খরচে বরাদ্দ দেয়া কঠিন হয়ে উঠে। অপরদিকে সিডিএর আয় বাড়ানোর জন্য আবাসিক প্লট বরাদ্দ অন্যতম নিয়ামক ভূমিকা পালন করে। এক যুগেরও বেশি সময় ধরে আবাসিক এলাকা গড়ে তোলা বা প্লট বরাদ্দ না দেয়ায় সিডিএর আয় অনেকাংশে কম হয়েছে।
সিডিএ প্লটের চেয়ে ফ্ল্যাট নির্মাণ এবং বরাদ্দ দিয়ে কিছু আয় রোজগারের চেষ্টা করে। ২০০৮ সালে নগরীর কাজীর দেউড়ি এলাকায় একটি অ্যাপার্টমেন্ট ভবন নির্মাণ করেছে, যেখানে ৬৪টি ফ্ল্যাট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ষোলশহর দুই নম্বর গেট এলাকায়ও সিডিএ আবাসিক অ্যাপার্টমেন্ট নির্মাণ করে। কিন্তু এতে খুব বেশি সফলতা না আসায় সিডিএ আবাসন সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম অনেকটা গুটিয়ে আনে।
দীর্ঘদিন পর সিডিএ নতুন করে একটি আবাসিক এলাকা গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে। এর আগে বায়েজিদ হাউজিং নামের একটি প্রকল্প নিয়েও সিডিএ কিছুটা অগ্রসর হয়েছিল। কিন্তু সেই প্রকল্পটিও বাস্তবায়িত হয়নি। এরপর পতেঙ্গা থেকে দুই কিলোমিটার আগে আউটার রিং রোডের পাশে ২০ একর জায়গার উপর তুলনামূলকভাবে ছোট একটি আবাসিক এলাকা গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ২০ একর পর্যন্ত আবাসিক এলাকা গড়ে তোলার অনুমোদন মন্ত্রণালয় থেকে দেয়া হয় বিধায় সিডিএ সহজে প্রকল্পটির অনুমোদন নিতে পারবে এমন আশায় ইতোমধ্যে ডিপিপি প্রণয়ন করেছে। প্রকল্পটির আওতায় তিন, চার ও পাঁচ কাঠার আবাসিক প্লট থাকবে। এতে ১২০টির মতো আবাসিক প্লট এবং ১৫টি বাণিজ্যিক প্লট রাখা হয়েছে। এছাড়া প্রকল্পের আওতায় থাকবে সবুজ বেষ্টনী, কৃত্রিম হ্রদ, খেলার মাঠ ইত্যাদি।
জানতে চাইলে সিডিএর সংশ্লিষ্ট একজন প্রকৌশলী বলেন, দীর্ঘদিন ধরে সিডিএ’র কোন আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেনি। পতেঙ্গায় ২০ একর জায়গায় নতুন করে একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। তবে জায়গার দাম অনেক বেশি। আমাদেরকে মৌজা মূল্যের তিনগুণ বাড়তি অর্থ দিয়ে জায়গা হুকুম দখল করতে হয়। এরসাথে জায়গার উন্নয়নসহ নানা খরচ থাকে। ফলে আগে যেমন তুলনামূলক কম দামে সিডিএ প্লট বরাদ্দ দিতে পারতো এখন আর সেভাবে দেয়ার সুযোগ নেই।
প্রকল্প পরিচালক কাজী কাদের নেওয়াজের সাথে যোগাযোগ করা হলে বলেন, আমরা একটি প্রকল্প নিয়েছি। পতেঙ্গা এলাকায়। প্রকল্পটিকে সুন্দরভাবে গড়ে তোলার চেষ্টা আমরা করবো।
সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শাম্স বলেন, প্রায় ১৩ বছর ধরে সিডিএ’র কোন আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়নি। প্রতিবছর ৫০ হেক্টর জায়গায় প্ল্যান এরিয়া বা আবাসিক এলাকা হিসেবে গড়ে তোলার একটি নির্দেশনা রয়েছে। আমরা জায়গার মূল্য বেড়ে যাওয়ায় সেটি বাস্তবায়ন করতে পারছি না। পতেঙ্গা এলাকায় একটি আবাসিক এলাকা করার যে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে সেটি বাস্তবায়ন করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে।
সিডিএ’র দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, পতেঙ্গা এলাকায় প্রকল্প বাস্তবায়নের যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে তা বাস্তবায়ন করা গেলে মানুষ উপকৃত হবে। সাগরপাড়ের নান্দনিক পরিবেশে বে পার্ল হাউজিং নামের প্রকল্পটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটি বসতি হয়ে উঠবে। কিন্তু জায়গার যে দাম তাতে এক একটি প্লটের দাম এক থেকে দেড় কোটি টাকা হবে। এই টাকার পুরোটা সাদা টাকা প্রদান করতে হবে। এতো দাম দিয়ে মানুষ আদৌ প্লট কিনবেন কিনা তা নিয়ে কিছুটা সংশয় রয়েছে।