ভোগ্যপণ্যের বৃহৎ পাইকারি বাজার চাক্তাই–খাতুনগঞ্জে শুরু হয়েছে রমজানের প্রস্তুতি। এ বছর রমজান শুরু হতে পারে মার্চের তৃতীয় সপ্তাহে সেই হিসেবে সময় আছে দুই মাসেরও কম। ব্যবসায়ীরা বলছেন, পণ্য বুকিং থেকে শুরু করে গুদামে আসা পর্যন্ত দেড় থেকে দুই মাস সময় লাগে। অনেক সময় বন্দর থেকে পণ্য ছাড় করতেও সময়ের প্রয়োজন হয়। এখন থেকে পণ্য গুদামজাত না করলে মার্কেট ধরা কঠিন হবে। ইতোমধ্যে প্রচুর পরিমাণ ছোলা, মটর ও মসুর ডাল আমদানি হয়েছে। এছাড়া গত বছরের অনেক পণ্য গুদামে অবিক্রিত থেকে গেছে। সব মিলিয়ে রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় এসব পণ্যের দাম সহনশীল পর্যায়ে থাকবে। তবে ডলারের দাম বৃদ্ধির কারণে এ বছর আমদানি ব্যয় বেড়ে গেছে। তাই পণ্যের দাম গত বছরের তুলনায় কিছুটা বেশি।
এদিকে রমজানের নিত্যপণ্যের তুলনামূলক বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত বছর এমন সময় অস্ট্রেলিয়ার ছোলার দাম ছিল কেজিপ্রতি ৯০ টাকা, বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৯৫ টাকায়। এছাড়া গত বছর ভারতীয় ছোলার দাম ৯২ টাকা এবং বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৮৫ টাকা। গত বছর প্রতি মণ (৩৭.৩২ কেজি) চিনি বিক্রি হয়েছে ৩ হাজার ১০০ টাকা, এ বছর বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার ৯০০ টাকায়, মসুর ডাল গত বছর বিক্রি হয়েছে ৮২ টাকা, বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা, খেসারি ডাল গত বছর ছিল ৯০ টাকা, বর্তমানে ৯৮ টাকা, মটর ডাল গত বছর বিক্রি হয়েছে ৫৫ টাকা, বর্তমানে ৬৫ টাকা, সাদা মটর গত বছর বিক্রি হয়েছে ৫২ টাকা এবং বর্তমানে ৬৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে মুগ ডাল গত বছর বছর রমজানের আগে বিক্রি হয়েছে ৭২ টাকা, কিন্তু বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ১৩২ টাকা এবং সয়াবিন তেল প্রতি মণ (৩৭.৩২ কেজি) গত বছর বিক্রি হয়েছে ৬ হাজার ৮০০ টাকা, বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৫ হাজার ৮০০ টাকা। এছাড়া পাম তেল প্রতি মণ গত বছর বিক্রি হয়েছে ৫ হাজার ৩০০ টাকা, বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার ৭৫০ টাকা, পেঁয়াজ গত বছর এমন সময়ে বিক্রি হয়েছে ৪০ টাকা, বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৭৫ টাকা, রসূন গত বছর ছিল ১২০ টাকা, বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ২০৫ টাকা, চীনা আদা গত বছর ছিল ১৬০ টাকা, বর্তমানে ১৭০ টাকা এবং মিয়ানমারের আদা গতবছর বিক্রি হয়েছে ৭০ টাকা, বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকায়।
খাতুনগঞ্জের আড়তদাররা জানান, রমজানকে কেন্দ্র করে ভোগ্যপণ্যের আমদানি আগের চেয়ে বেড়েছে। ব্যবসায়ীদের দোকান ও গুদামে প্রচুর পরিমাণ পণ্য মজুদ রয়েছে। সাধারণত রমজান এলে শরবতের চাহিদা বেড়ে যায়। তাই চিনির ব্যবহারও বাড়ে কয়েক গুণ। বর্তমানে বাজারে চিনির কোনো ঘাটতি নেই। এছাড়া সারা দেশে প্রায় ৮০ হাজার টন ছোলার চাহিদা থাকে। অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়া থেকে প্রচুর পরিমাণে ছোলা এসেছে। এছাড়া এর বাইরে রমজানে সাদা মটর ও মসুর ডালেরও চাহিদা বেড়ে যায়। ভোজ্যতেল, চিড়া এবং খেজুরের চাহিদাও বৃদ্ধি পায়। সাধারণত খেজুর আমদানি হয় ইরান, তিউনিসিয়া, দুবাই ও সৌদি আরব থেকে।
চাক্তাই আড়তদার ও ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম বলেন, রমজান উপলক্ষে ইতোমধ্যে ব্যবসায়ীরা আমদানিকৃত পণ্য গুদামজাত শুরু করছেন। আমদানিকৃত পণ্য চট্টগ্রামের পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা–উপজেলাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্রি করবেন ব্যবসায়ীরা। তবে এ বছর আমদানি ব্যয় বাড়ার কারণে কিছু কিছু পণ্যের দাম বেশি।
চাক্তাই খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন দৈনিক আজাদীকে বলেন, গত তিন চার মাস আগে থেকে রমজানের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির জন্য এলসি (ঋণপত্র) খুলেন ব্যবসায়ীরা। ইতোমধ্যে সেইসব পণ্য গুদামজাত হচ্ছে। আমাদের দেশে প্রতি বছর ভোগ্যপণ্যের চাহিদা বাড়ছে। আবার তার সাথে পাল্লা দিয়ে আমদানির পরিমাণও বাড়ছে। বর্তমানে যে পরিমাণ পণ্য আমদানি হয়েছে, রমজানে পণ্যের দাম বাড়বে না।