পণ্যমূল্য স্বাভাবিক থাকুক স্বস্তি আসুক ভোক্তার মনে

| রবিবার , ৩ এপ্রিল, ২০২২ at ৬:৪৫ পূর্বাহ্ণ

ভোগ্যপণ্যের বাজার পাইকারিতে নিম্নমুখী ধারায় প্রবাহিত হচ্ছে- এমন একটি সংবাদ দিলো দৈনিক আজাদী। গত ৩১ মার্চ প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়েছে, রমজানের ঠিক আগে ভোক্তাদের স্বস্তি বয়ে এনেছে ভোগ্যপণ্যের বাজার। পাইকারিতে গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে রমজানের ইফতারির অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ছোলার দাম কমেছে মানভেদে ১০ টাকা পর্যন্ত। এছাড়া খেসারি ডাল, পেঁয়াজ, রসুন, আদা, গরম মসলা এবং চিড়ার দাম নিম্নমুখী। এদিকে পাইকারিতে রমজানের কিছু অত্যাবশ্যকীয় উপাদানসহ ভোগ্যপণ্যের দাম কমের ধারায় থাকলেও খুচরাতে আদৌ এর প্রভাব পড়বে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন সাধারণ ভোক্তারা।
খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা বলছেন, রমজানকে কেন্দ্র করে এ বছর বিপুল পরিমাণ ছোলা, চিড়া এবং ডাল জাতীয় পণ্য আমদানি হয়েছে। তবে অপরিবর্তিত রয়েছে তেল-চিনির বাজার। গতকাল খাতুনগঞ্জে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে অস্ট্রেলিয়ার ছোলার দাম কেজিতে ১০ টাকা কমে এখন বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। এছাড়া সাদা মটর ৩ টাকা কমে ৪২ টাকা, মশুর ডাল ১০ টাকা কমে ১১০ টাকা, চিড়া ৫ টাকা কমে ৪০ টাকা, এলাচ ৫০ টাকা কমে ১ হাজার ৭০০ টাকা, লবঙ্গ ২০ টাকা কমে ২ হাজার ৩০ টাকা, জিরা ২০ টাকা কমে ৩৪০ টাকা, দারুচিনি ১০ টাকা কমে ২৯৫ টাকা, পেঁয়াজ ৫ টাকা কমে ২৫ টাকা, চীনা রসুন ১০ টাকা কমে ৯৫ টাকা, চীনা আদা ১০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকায়। অপরদিকে পাম তেলের দাম সপ্তাহের ব্যবধানে মণপ্রতি ১০০ টাকা কমে গিয়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ৫ হাজার ৫০ টাকায়। এছাড়া মণপ্রতি সয়াবিন তেলের দাম ১৫০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ৫ হাজার ৪০০ টাকায়।
রমজানকে সামনে রেখে ভোগ্যপণ্যের দাম সবসময় উর্ধ্বমুখী হয়ে ওঠে। এটা এখন রীতিতে পরিণত হয়েছে। যদিও সেই বাজার স্থিতিশীল রাখতে চায় সরকার। এ জন্য ভোজ্যতেল, চিনি, মসুর ডাল, ছোলা ও খেজুরের সরবরাহ বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়ে থাকে। এ ছাড়া স্বল্প আয়ের কোটি পরিবারকে টিসিবির মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যের খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়ে থাকে। পাশাপাশি নিত্যপণ্যের বাজার মনিটরিং টিমও শক্তিশালী করা হয়।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলেন, আমদানি পণ্যের দাম নির্ভর করে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম এবং দেশে পণ্যের সরবরাহের ওপর। এবার আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম স্থিতিশীল আছে। দেশেও রোজার চাহিদার চেয়ে অত্যধিক পণ্য আমদানি হয়েছে। এই দুই কারণেই মূলত এবার রমজান মাসে সর্বোচ্চ চাহিদার সময়ও পণ্যের দাম যৌক্তিক পর্যায়ে আছে। এমনকি অনেক পণ্য আমদানি খরচের তুলনায় কম দামে বিক্রি হচ্ছে। এতে ভোক্তারা সুফল পেয়েছেন, ব্যবসায়ীরা লোকসান দিয়েছেন।
তাঁরা বলেন, বাজার তদারকির কারণে পণ্যের দাম স্থিতিশীল হয় না, এবারও হয়নি। এবার আন্তর্জাতিক বাজারদর এবং সরবরাহব্যবস্থা ভালো থাকায় সুফল মিলেছে। প্রতিবার রমজান মাসে সরকার বাজারে কিছু পণ্যের দাম ঠিক করে দেয়। এবারও হয়েছে। এখন কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজার থেকে কেনা দামের চেয়ে ছোলা, চিনিসহ কয়েকটি পণ্য কম দামে বিক্রি হচ্ছে। তাঁরা বলেন, আমরা বহুবার সরকারকে বলে আসছি ভোগ্যপণ্যের একটি যুগোপযোগী তথ্যভান্ডার গড়ে তোলার জন্য। একটি আলাদা তদারকি সংস্থা এই তথ্যভান্ডার নিয়ে কাজ করবে। কোন পণ্যের চাহিদা কত, উৎপাদন ও আমদানি কত হচ্ছে, পণ্যের সংকট হবে কি না-এসব বিষয়ে পূর্বাভাস থাকলে সরকারের জন্যই ভালো। তাহলে রমজান মাসের আগে দরদাম ঠিক করে দেওয়ার দরকার হবে না। কোনো পণ্যের সংকট হওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হলে সরকার নিজেও সেই পণ্যের মজুত গড়ে তুলতে পারে। সংকটকালীন সেই পণ্য যৌক্তিক মূল্যে বাজারে ছেড়ে সরবরাহব্যবস্থা স্বাভাবিক করতে পারে। তাহলে কেউ অযৌক্তিকভাবে দাম বাড়ানোর সুযোগ পাবে না। তবে এবার ভোগ্যপণ্যের বাজারের নিম্নমুখী ধারার খবরে ভোক্তাদের মনে স্বস্তি এসেছে। কিন্তু খুচরা বাজারে তা কতোটা প্রভাব ফেলতে পারবে-তা দেখার বিষয়। মোট কথা, আমরা রমজানে পণ্যমূল্য স্বাভাবিক দেখতে চাই।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে