অজুহাত ছাড়াই বেড়ে যায় পণ্যের দাম। তার জন্য কোনো কারণ লাগে না। যে কোনো সময়ে হুড়হুড় করে বেড়ে যেতে পারে সব ধরনের পণ্যের দাম। বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় প্রতিটি পণ্যের দাম বাড়তি। পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, মৌসুমের শেষ দিকে এসে সবচেয়ে বেশি ভুগিয়েছে আলু ও পেঁয়াজের দাম। মাসখানেক আগে থেকেই নতুন আলু ও পেঁয়াজ উঠতে শুরু করেছে। দুটি পণ্যেরই সরবরাহ প্রচুর, তবু দাম কমছে না। ডিম ও মুরগির দাম বেড়ে একটা জায়গায় গিয়ে থমকে আছে, কমছে না। আদা, রসুন, মসলার দামও অনেকটাই বেড়েছে। শীতের সবজিতে বাজার সয়লাব, কিন্তু দাম তুলনামূলকভাবে অনেকটাই বেশি। এই অবস্থায় নিম্ন ও স্থির আয়ের ভোক্তারা সংকটে আছে। চাহিদা অনুযায়ী কেনাকাটা করতে পারছে না।
বলা অনাবশ্যক যে, বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় সব পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় অধিকাংশ ক্রেতারা পড়ছেন বিপাকে। সাধ্যের মধ্যে ভরছে না তাদের বাজারের ব্যাগ। মাছ–মাংস, শাক–সবজিসহ প্রায় সব ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম নাগালের বাইরে। সীমাহীন বিপাকে সাধারণ মানুষ। বিশেষত নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ বেশি বেকায়দায় পড়েছেন। বাধ্য হয়ে পণ্য কেনার পরিমাণ কমিয়ে দিচ্ছেন তাঁরা। আগে থেকে চড়া দামের অনেক পণ্যের দাম নতুন করে আরও বাড়ছে। এসব পণ্যের সহসা দাম কমার কোনো লক্ষণ নেই। তাই অস্বস্তি নিয়ে বাজার থেকে ফিরছেন ক্রেতারা। এতে ভোক্তাদের নাভিশ্বাস বাড়ছেই।
তাঁরা বলছেন, বাজারে খাদ্যপণ্যের কোনো সংকট নেই। চাহিদার সবটুকু পাওয়া যাচ্ছে, তারপরও দাম বেশি। কারণ বাজার তদারকি সংস্থাগুলোর তৎপরতা নেই। আর এ সুযোগে ব্যবসায়ীরা ভোক্তার পকেট কাটছে। এমতাবস্থায় একটা মওকা পেয়ে বসেছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। চাহিদার তুলনায় সবজির সরবরাহ বেশি থাকা সত্ত্বেও দাম বেড়েছে। ভোক্তারা বলছেন, বাজার চাহিদাকে কাজে লাগিয়ে অতিরিক্ত মুনাফার জন্য কারসাজির মাধ্যমে দাম বাড়িয়ে থাকেন ব্যবসায়ীরা।
বাজারের অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, বাজার চলছে ইচ্ছেমতো। এতে কর্তৃপক্ষের কোনো নিয়ন্ত্রণ বা নজরদারি নেই। বিশেষজ্ঞরা বলেন, ‘সাধারণত পণ্যের সংকট থাকলে দাম বাড়ে। কিন্তু দেশে এখন খাদ্যপণ্যের কোনো সংকট না থাকলেও দাম বাড়ছে, এমনকি আমদানিকৃত যে পণ্যের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে কমেছে, দেশের বাজারে সে পণ্যের দামও ঊর্ধ্বমুখী। ফলে স্বল্পআয়ের মানুষ বাজারে গিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ছে। তারা প্রয়োজনীয় পণ্য না কিনেই ফিরে যাচ্ছে। অবস্থা এমনই দাঁড়িয়েছে যে মানুষ বাজার করতে গিয়ে এখন কাঁদছে। পরিস্থিতি অনেকটাই তাই। এ পরিস্থিতির জন্য শুধু বৈশ্বিক সংকটকে দায়ী করা যায় না।
এ বিষয়ে ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরকে তৎপর হতে হবে। সেই সঙ্গে বাজারে যারা কৃত্রিম সংকট তৈরির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর হতে হবে। কেউ যেন কোনোভাবেই বাজারব্যবস্থাকে জিম্মি করে সুবিধা আদায় করতে না পারে, সেদিকে নজর দিতে হবে।
জানা যায়, মৌসুমে যখন আলু উৎপাদিত হয়, তখন আলুর দাম ১৫ টাকারও নিচে নেমে যায়। অনেক সময়ই উৎপাদনকারী কৃষকের উৎপাদন খরচও ওঠে না। তখন সস্তা দামে এগুলো কিনে নেন মজুদকারী ব্যবসায়ীরা। হাজার হাজার টন আলু কিনে হিমাগারে রেখে দেন। মৌসুমের আলু কমে এলে হিমাগার থেকে সেসব আলু বাজারে আসে। তখনই মজুদকারীদের সিন্ডিকেট তাদের কৌশল খাটাতে শুরু করে। এভাবে দাম বাড়তে থাকে।
ভোক্তারা প্রতিদিনই কোনো না কোনোভাবে কিছু কিছু বিড়ম্বনার শিকার হন। প্রায়শই তাঁরা বেশি টাকা দিয়ে পণ্য কেনেন। আবার কখনো কখনো মেয়াদ উত্তীর্ণ পণ্য কিনেও বিড়ম্বনায় পড়েন, পণ্য ফেরত দিতে চাইলে করতে হয় অনেক বাক–বিতর্ক। এ রকম পণ্য কিনতে গিয়ে নানা সময়ে প্রতারণার শিকার হয়ে থাকেন। কিছুটা অভ্যস্ত হয়ে গেছেন বলে নীরবে সয়ে যান সবাই, বেশিরভাগটা ইচ্ছার বিরুদ্ধে। নিরাপদ এবং ন্যায্যমূল্যে পণ্য কিনতে পারাটা ভোক্তার অধিকার এবং তা আইন দ্বারা সংরক্ষিত। কেননা একটি রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিকই ভোক্তা। তবে এই ভোক্তার স্বার্থ দেখার দায়িত্ব সরকারের। বিশেষজ্ঞরা বলেন, পণ্যমূল্য সহনীয় রাখতে সরকারকে পরিকল্পিত ও দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ নিতে হবে। বাজারে পণ্যের সরবরাহ নির্বিঘ্ন রাখার পাশাপাশি বিকল্প বাজার ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।