দক্ষিণ চট্টগ্রামের ১৯ হাজার হেক্টর জমিকে চাষাবাদের আওতায় আনাসহ ২৫ কিলোমিটার বাঁধ কাম সড়ক নির্মাণে ১১৫৮ কোটি টাকার প্রকল্প নিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। ১৫টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া শিকলবাহা থেকে চানখালী পর্যন্ত ২৬টি খালের একপাশে এ বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে পটিয়াকে বন্যার ক্ষতি থেকে নিরাপদ করতে এ প্রকল্প নেয়া হয় বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
সূত্র জানায়, পটিয়া উপজেলার আশিয়া, কাশিয়াইশ, হাবিলাসদ্বীপ, দক্ষিণ ভূর্ষি, ধলঘাট, বড়লিয়া, জঙ্গলখাইন, ভাটিখাইন, কুসুমপুরা, জিরি, হাইদগাঁও, ছনহরা, কচুয়াই, কেলিশহর ও পটিয়া পৌর এলাকায় জোয়ার ভাটাজনিত জলাবদ্ধতা ও লবণাক্ততা সমস্যায় জর্জরিত। এসব ইউনিয়নের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া খালগুলো ভরাট হয়ে যাওয়ায় বর্ষাকালে পানি নিষ্কাশন বাধাগ্রস্ত হয়। ফলে সৃষ্ট বন্যায় ব্যাপক ফসলহানি হয়। আবার শুষ্ক মৌসুমে ভূ-পৃষ্ঠস্থ পানি সংকটে কৃষিকাজ ব্যাহত হয়। এতে প্রস্তাবিত ‘পটিয়ার বন্যা নিয়ন্ত্রণ, সেচ ও নিষ্কাশন প্রকল্প’ এর মাধ্যমে শিকলবাহা, মুরালী, বোয়ালখালী খালের বামতীর ও চানখালী খালের ডান তীরে বাঁধ নির্মাণ, পানি নিয়ন্ত্রণ ও সেচ কাঠামো নির্মাণ হলে জলাবদ্ধতা ও লবনাক্ততার হাত থেকে বসতবাড়ি, কৃষি জমি ও সরকারি-বেসরকারি নানা স্থাপনা রক্ষা পাবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, ২০১৭ সালে প্রকল্পটি নেয়ার প্রস্তাব করা হয়। ইতোমধ্যে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের একাধিক টিম যৌথভাবে বেশ কয়েকবার প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করে। প্রকল্প প্রস্তাবনা সর্বশেষ তৃতীয় দফায় সংশোধন করে প্রতিবেদন দাখিল করেছেন সংশ্লিষ্টরা। প্রস্তাবিত ১১৫৮ কোটি টাকার প্রকল্পে সর্বোচ্চ বরাদ্দ রাখা হয় জমি অধিগ্রহণে। প্রকল্পটিতে বাঁধ নির্মাণে প্রায় ৬০ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণে ৫৬৩ কোটি ৯৪ লক্ষ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। প্রকল্পের ভৌত কাজের মধ্যে ২৬টি ছোট-বড় খালে নতুন রেগুলেটর, ১১টি খালের মধ্যে প্রায় ৩০ কিলোমিটার পুন:খনন, প্রায় সাড়ে ২৫ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ, ৪.১০ কি.মি. ফ্লাডওয়াল নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়।
চট্টগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী (ডিভিশন-১) তয়ন কুমার ত্রিপুরা দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘চট্টগ্রামের পটিয়া একটি বড় উপজেলা। বন্যায় জলাবদ্ধতা, শুষ্ক মৌসুমে জোয়ারের সময় লবণাক্ততা, আবার কোথাও পানি সংকটে চাষাবাদ ব্যাহত হচ্ছে। সবকিছু মিলিয়ে একটি সমন্বিত প্রকল্পের মাধ্যমে পুরো উপজেলা ঘিরে প্রকল্পটি নেয়া হয়েছে। এতে বর্ষাকালে রেগুলেটরের মাধ্যমে অতিরিক্ত পানি প্রবেশ রোধ করা হবে, তেমনি খাল খননের মাধ্যমে শুষ্ক মৌসুমে চাষাবাদে পর্যাপ্ত পানিসেচের সুযোগ তৈরি হবে।’ তিনি বলেন, ‘প্রকল্পটিতে ১১৫৮ কোটি টাকা ব্যয় নির্ধারণ করা হলেও ভূমি অধিগ্রহণে প্রায় ৫৬৪ কোটি টাকা ব্যয় হবে। ভৌতকাজে ব্যয় হবে প্রায় ৬শ কোটি টাকা। ইতোমধ্যে হালনাগাদ কারিগরি প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়েছে। পুরো প্রকল্পাটি বাস্তবায়ন হলে প্রায় ১৯ হাজার হেক্টর জমি চাষাবাদের আওতায় আসবে। পাশাপাশি নির্মিত বাঁধটি সড়ক হিসেবে ব্যবহার উপযোগী করে নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে যোগাযোগ অবকাঠামোর উন্নয়ন হবে।’