চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলায় বিএনপির দুই গ্রুপের নেতাকর্মীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নানা ‘স্ট্যাটাস’ দিয়ে একে অপরকে ঘায়েল করতে অপপ্রচার যোগে বিভ্রান্তি করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এতে আওয়ামী লীগ বা বিরোধী দলের কাউকে দরকার হচ্ছে না। কেননা, স্বয়ং উপজেলা বিএনপি ও বিভিন্ন ইউনিয়ন বিএনপির দুঃসময়ের ত্যাগী নেতাদের নামেও আওয়ামী ট্যাগ লাগিয়ে ফায়দা লুটার চেষ্টা করছে কয়েকটি কুচক্রি মহল।
বিশেষ করে বড়লিয়া ইউনিয়নে একটি মতবিনিময় সভায় বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুল মন্নান তালুকদারের বক্তব্যে আওয়ামী জুয়েল গ্রুপকে দেখলে রামধোলাইসহ এমডি পাবেল নামক একটি ফেসবুক আইডি থেকে নানা অপপ্রচার হচ্ছে বলে তৃণমূল নেতাকর্মীদের অভিযোগ।
এছাড়াও দুই মেরুতে বিভক্ত হয়ে পড়েছে পটিয়া উপজেলা বিএনপির রাজনীতি। দুই ভাগে বিভক্ত বিএনপির এক গ্রুপের নেতৃত্বে দিচ্ছেন পটিয়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক এনামুল হক এনাম ও অন্য গ্রুপে নেতৃত্ব দিচ্ছেন সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপি কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য গাজী মুহাম্মদ শাহজাহান জুয়েল।
প্রায়ই দুই গ্রুপ নানা কর্মসূচি দিয়ে পরস্পরের বিরুদ্ধে কৌশলী ভাবে অভিযোগ করছেন। অচিরেই এসব দলীয় কোন্দল, গ্রুপিং ও অপপ্রচার বন্ধ না করলে যে কোনো সময় অনভিপ্রেত ঘটনার শঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
তথ্য মিলে, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দ্বিধাবিভক্ত পটিয়া বিএনপি। নিজেদের কোন্দলের নিরসন না করে দায়িত্বশীল পদে থাকা নেতারা একে অপরের বিরুদ্ধে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য ও নানা ফেসবুক পোস্টে ভাসমান বিতর্ক। যা নিয়ে মাঠ পর্যায়ের ত্যাগী নেতাকর্মীর মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হচ্ছে। বিভক্তি ভুলে ঐক্যবদ্ধ না হয়ে তৃণমূলকেও বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতিতে ফেলছেন। এ জন্য নেতৃত্ব দেওয়া স্ব স্ব নেতাদের আরো কঠোর হবার আহ্বান তৃণমূলের।
আরও জানা গেছে, পটিয়া বিএনপির শীর্ষ নেতাদের সম্পর্ক ‘সাপে নেউলে’ অবস্থা। তাঁরা কেউ কাউকে যেকোনো কর্মসূচিতে ছেড়ে কথা বলছেন না। সর্বত্র তাঁরা নিজেদের আধিপত্য বজায় রাখতে চেষ্টা করছেন। নিজ নিজ অনুসারীদের নিয়ে পৃথক পৃথক দলীয় কর্মসূচিও পালন করছেন।
এমনকি ২০১৬ সালের শেষদিকে দক্ষিণ জেলা বিএনপির সম্মেলন নিয়ে গাজী মুহাম্মদ শাহজাহান জুয়েলের অনুসারীদের সঙ্গে এনামুল হক এনামের অনুসারীদের মধ্যে পটিয়ার ইন্দ্রপোল এলাকায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে এনামুল হক এনাম আহত হন।
ফলে, এ দুপক্ষের বিরোধ পৌঁছে যায় তুঙ্গে। কেন্দ্রীয়ভাবে ওই ঘটনার দায় চাপিয়ে দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিলো সাবেক সংসদ সদস্য ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক গাজী মুহাম্মদ শাহজাহান জুয়েলকে। এরপর তারা এক বছর দলীয় কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে পারেননি।
এক প্রশ্নের জবাবে জঙ্গলখাইন ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সেলিম সিকদার বলেন, ‘কারো শৃঙ্খলা পরিপন্থি কাজ করা ঠিক নয়। আর এখন বিভেদ করারও সময় নয়। কেন্দ্রের নির্দেশনা অনুযায়ী কোন্দল মিটাতে সাংগঠনিক টিম কাজ করছে।’
ভিডিও বক্তব্যের বিষয়ে খোলাসা করে বড়লিয়া ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক ও দক্ষিণ জেলা যুবদলের সহ সভাপতি আলহাজ্ব আব্দুল মন্নান তালুকতার বলেন, ‘যে সব লোকজন আওয়ামী লীগ থেকে বিএনপিতে আসতে চেয়েছে বার বার। কিন্তু আ.লীগ থেকে বিএনপিতে আসার সুযোগ ছিলো না। পরে দেখি এ ধরনের কিছু লোকজন জুয়েল ভাইয়ের গ্রুপে গিয়ে আমাদের পটিয়া বিএনপিকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছিলো। এজন্য আমি আওয়ামী জুয়েল গ্রুপ বলতে তাঁদেরকেই উদ্দেশ্য করে কথাটি বলেছিলাম। কিন্তু আমাদের সিনিয়র নেতা জুয়েল ভাইকে নয়। কেউ ভুল বুঝবেন না।’
এছাড়াও বড়লিয়া বিএনপির এই আহ্বায়ক আরও বলেন, ‘আমার অতীতের কিছু সামাজিক অনুষ্ঠানের সার্বজনীন ছবি নিয়ে ‘ফেসবুকে ছুড়ে’ নানা কুৎসা রটাতে ব্যস্ত একটি মহল। এতে নেতা-কর্মীদের বিব্রত বোধ হওয়ার কিছুই নেই। আমরা কারা নির্যাতিত। এসব সত্যের অপলাপ ছাড়া আর কিছুই নয়।’
এসব প্রসঙ্গে পটিয়া উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব খোরশেদুল আলম বলেন, ‘বড়লিয়া ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক মন্নান তালুকদার ও জঙ্গলখাইন ইউনিয়নের সম্পাদক সেলিম সিকদার নিঃসন্দেহে দলের ত্যাগী ও কারা নির্যাতিত নেতা। ৫ আগস্টের পরে তারা জেল থেকে মুক্ত হন। দলের দুঃসময়ে মাঠে ময়দান আর রাজপথে তাঁরা সব সময় সক্রিয় ছিলেন। এদের বিরুদ্ধে কেউ উল্টাপাল্টা লিখেও লাভ নেই। কারণ আমরা জানি কে কোন ধরনের রাজনীতি করেছেন।’
পটিয়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক এনামুল হক এনাম বলেন, ‘আমি একটা মিটিং এ আছি। তবুও বলছি দেশের এই সঙ্কট মুহুর্তে কাদা ছোড়াছুড়ি না করে এখন সব নেতা-কর্মীদের একটাই কাজ হোক জনগণের জন্য ভালো কিছু করা। কাজেই দলের ভেতরে বাহিরের সকল মিথ্যাচার, অপপ্রচার বন্ধ করে জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী সকলের দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করা উচিত।’
পটিয়ার সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপি কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য গাজী মুহাম্মদ শাহজাহান জুয়েল বলেন, ‘দলীয় প্রোগ্রাম ও সার্বজনীন প্রোগ্রাম সম্পর্কে পার্থক্য আমাদের সবাইকে বুঝতে হবে। সার্বজনীন ও সামাজিক কোন অনুষ্ঠানে সব দলের লোকজন যেতেই পারেন। এটা স্বাভাবিক বিষয়। এ ধরনের কোন ছবি নিয়ে কাউকে বিব্রত করা উচিত নয়।’
সাবেক এমপি আরও বলেন, ‘আমি কর্মী সভায় সব সময় বলি। ফেসবুকে অপপ্রচার যেই করুক না কেন? সন্মিলিতভাবে সবাইকে এসব বয়কট করতে হবে। প্রয়োজনে ফেসবুকে ব্লক করে দিতে পারে। কারো ব্যক্তিগত চরিত্র হরণ করার অধিকার আমার আপনার কারো নেই। সেই প্রকৃত মানুষ যার কাছে শত্রুও নিরাপদ থাকে। সেটা হলে পটিয়ায় সবার জন্য রাজনীতিটা সুন্দর হয়।’