তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলোপসহ বেশ কিছু বিষয়ে আনা সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী আইন বাতিল প্রশ্নে জারি করা রুল আংশিক যথাযথ (অ্যাবসোলুট) ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়েছে। বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত একটি হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চের স্বাক্ষরের পর ১৩৯ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ এই রায় সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে গতকাল মঙ্গলবার প্রকাশ করা হয়েছে। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে আনা সব বিষয় বাতিল না করে কিছু বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ জাতীয় সংসদের জন্য রেখে গত ১৭ ডিসেম্বর রায় ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। ২০১১ সালে আওয়ামী লীগ সরকার পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের পাশাপাশি সংবিধানের চার মূলনীতি– জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা ফিরিয়ে আনে। সেই সঙ্গে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বহাল রেখে অন্যান্য ধর্মের সমমর্যাদা নিশ্চিত করার বিধান আনার পাশাপাশি ১৯৭১ সালের সাতই মার্চের ভাষণ, ছাব্বিশে মার্চের স্বাধীনতার ঘোষণা ও স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করে। এছাড়া অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করলে রাষ্ট্রদ্রোহে সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান অন্তর্ভুক্ত করার পাশাপাশি সংরক্ষিত নারী আসন ৫০ করা এবং জাতির পিতা হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। খবর বাসসের।
হাইকোর্টের ঘোষিত রায়ে পঞ্চদশ সংশোধনী আইন পুরোটা বাতিল করা হচ্ছে না উল্লেখ করে হাইকোর্ট বলেন, পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের বাকি বিধানগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার জাতীয় সংসদের। সংসদ আইন অনুসারে জনগণের মতামত নিয়ে বিধানগুলো সংশোধন, পরিমার্জন ও পরিবর্তন করতে পারবে। এক্ষেত্রে সংবিধানে চার মূলনীতি, নিজ দলের বিরুদ্ধে ভোটদান, জাতির জনক ও সাতই মার্চসহ কিছু উল্লেখযোগ্য বিষয় সংসদের জন্য ‘রেখে দিয়েছেন’ হাইকোর্ট। তবে রায়ে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলুপ্তি–সংক্রান্ত সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের ২০ ও ২১ ধারা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও বাতিল ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট।
আদালত বলেছেন, পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের এই ধারা দুটি সংবিধানের মৌলিক কাঠামোকে ধ্বংস করেছে, যেটি হচ্ছে গণতন্ত্র। এছাড়া পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের মাধ্যমে সংবিধানে যুক্ত ৭ক,৭খ, ৪৪ (২) অনুচ্ছেদ সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও বাতিল ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। রায়ে হাইকোর্ট বলেন, সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদের গণভোটের বিধান বিলুপ্তি–সংক্রান্ত পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের ৪৭ ধারা সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ বলে বাতিল ঘোষণা করেছেন। ফলে দ্বাদশ সংশোধনীর ১৪২ অনুচ্ছেদে গণভোটের বিধান পুনর্বহাল হয়েছে। হাইকোর্টের তার রায়ে সংবিধানের ৭ক, ৭খ ও ৪৪ (২) অনুচ্ছেদ বাতিল করেন। যেখানে ৭ক অনুচ্ছেদে সংবিধান বাতিল, স্থগিতকরণ, ইত্যাদি রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধ এবং ৭খ অনুচ্ছেদে মৌলিক বিধানাবলি সংশোধন অযোগ্য করার কথা বলা হয়েছে।