পক্ষাঘাতগ্রস্ত স্ত্রীকে উঠানে জীবন্ত কবর দিচ্ছিলেন তিনি

| রবিবার , ১০ আগস্ট, ২০২৫ at ১১:১৭ পূর্বাহ্ণ

শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলায় পক্ষাঘাতগ্রস্ত এক বৃদ্ধাকে জীবন্ত কবর দেওয়ার চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে স্বামীর বিরুদ্ধে। এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়েছে। গত শুক্রবার দুপুরে উপজেলার কাকিলাকুড়া ইউনিয়নের খোশালপুর কানিপাড়া বাজার সংলগ্ন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে বলে জানান শ্রীবরদী থানার ওসি মো. আনোয়ার জাহিদ। ভুক্তভোগী খোশেদা বেগম (৭০) ওই এলাকার মো. খলিলুর রহমানের (৮০) স্ত্রী। খলিল খোশালপুর মধ্যপাড়ার প্রয়াত জহুর আলীর ছেলে।

ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, খলিল তার স্ত্রী খোশেদাকে ঘর থেকে টেনে হিঁচড়ে উঠানে বের করছেন। তাকে বের করার আগেই উঠানের একটি অংশে কোদাল দিয়ে গর্ত করে রেখেছেন খলিল। খোশেদাকে বের করার পর সেই গর্তে রেখে তার উপর কোদাল দিয়ে মাটি চাপা দেওয়ার চেষ্টা করছেন।

এ সময় অসুস্থ খোশেদাকে আত্মরক্ষায় চিৎকার করতে দেখা গেছে। এতে খলিল ক্ষিপ্ত হয়ে খোশেদার মুখে চড় মারেন। ঘটনার সময় পাশে একাধিক মানুষ থাকলেও কেউ তাকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসেন নাই। এ ছাড়া ঘটনাটি যিনি ভিডিও করছেন তিনিও খোশেদাকে রক্ষায় এগিয়ে আসেন নাই।

খোশেদার নাতি মো. খোকন (১৯) তার মোবাইলে ভিডিওটি ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করেছেন বলে দাবি প্রতিবেশীদের। পরবর্তীতে ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর এ নিয়ে শুরু হয়েছে নানা আলোচনাসমালোচনা।

প্রতিবেশীরা জানান, প্রায় ছয় বছর ধরে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে শয্যাশায়ী খোশেদা বেগম। একটা সময় অনেক সেবা ও চিকিৎসা করেও কোনো কাজ হয়নি। তবে এখন তাকে আর সঠিক চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে না। দীর্ঘসময় যন্ত্রণা সইতে না পেরে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেন স্বামী খলিল। খলিল দীর্ঘ সময় ধরে এই কষ্ট ভোগ করতে করতে একটা পর্যায়ে রাগে ক্ষোভে এমন ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে ধারণা স্থানীয়দের।

প্রতিবেশী রহিম মিয়া বলেন, খলিল কাকা আসলে খারাপ লোক না। সবার সঙ্গে হাসিখুশি হয়ে চলেন তিনি। তবে স্ত্রীর অসুস্থতার পর থেকে তার মন খারাপ থাকে। তবে তিনি এমন কাণ্ড কেন ঘটালেন বুঝতে পারছি না।

আরেক প্রতিবেশী সুজন বলেন, খলিল কারো সঙ্গে তেমন ঝামেলায় জড়ান না। শুক্রবার তার স্ত্রীর জন্য একটি চেয়ার কমোড কিনে আনেন। তার স্ত্রী চোখেও ভালো দেখেন না। কথা না শোনায় হয়ত এ ঘটনা ঘটেছে। তবে তার নাতি ভিডিওটি ফেসবুকে পোস্ট করার পর তা ছড়িয়েছে।

এ বিষয়ে খলিলুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। ঘটনার পর থেকে তিনি গা ঢাকা দিয়েছেন। শ্রীবরদী থানার ওসি মো. আনোয়ার জাহিদ বলেন, ভিডিও দেখার সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। বিষয়টি সামাজিকভাবে সমাধান হওয়ার কথা শুনেছি। তবে লিখিত অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ফেসবুকে ভিডিওটি দেখে মর্মাহত হওয়ার কথা জানিয়ে শ্রীবরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ জাবের আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, এ বিষয়ে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঢাকা নিউ মার্কেট থেকে সামুরাই চাপাতিসহ ১১শ ধারালো অস্ত্র উদ্ধার
পরবর্তী নিবন্ধবাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি মিরসরাই উপজেলার সম্মেলন