পঁচাত্তরের পর সম্ভাবনা আর অধিকার হারিয়েছিলাম

স্বাধীনতা পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী

| শুক্রবার , ৩০ অক্টোবর, ২০২০ at ৬:৩৯ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে, তাদের কথা স্মরণ করে দেশকে গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে স্বাধীনতা পুরস্কার-২০২০ বিতরণ অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে তিনি বলেন, ‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যার পর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নস্যাৎ করা হয়, যে সাতই মার্চের ভাষণ এই দেশের মানুষকে উজ্জীবিত করেছিল সেই ভাষণ নিষিদ্ধ হয়, ইতিহাস থেকে জাতির পিতার নামটা পর্যন্ত মুছে ফেলার প্রচেষ্টা করা হয়, ইতিহাসকে বিকৃত করা হয়। পরবর্তীতে ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে বাংলাদেশের ইতিহাস মানুষের সামনে তুলে ধরে। আমরা তো মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী জাতি। বিজয়ী জাতি কেন আমরা অন্যের কাছে হাত পেতে চলব, মাথা নিচু করে চলব? বিজয়ী জাতি সারাবিশ্বে বিজয়ীর বেশেই চলবে। পঁচাত্তরের পর আমরা সেই সম্ভাবনা এবং অধিকার হারিয়েছিলাম। কিন্তু সেটা আবার পুনরুদ্ধার করে জাতির পিতার যে স্বপ্ন এবং যে চেতনায় লাখো শহীদ বুকের তাজা রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা এনে দিয়ে গেছে,তাদের সেই আত্মত্যাগের কথা, লাখো মা-বোনের আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করেই আমরা এই বাংলাদেশকে আবার গড়ে তুলতে চাচ্ছি ক্ষুধামুক্ত দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা হিসেবে।’
অনুষ্ঠানে পুরস্কারপ্রাপ্তদের অভিনন্দন জানান প্রধানমন্ত্রী। অন্যান্য বছর ২৫ মার্চ স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়া হলেও এই বছর করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে নির্দিষ্ট সময়ে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া সম্ভব হয়নি বলেও জানান শেখ হাসিনা। খবর বিডিনিউজের।
তিনি বলেন, প্রত্যেকটা মানুষ যখন একটা সমাজের জন্য, একটি জাতির জন্য, একটি দেশের জন্য অবদান রাখে তাদের সম্মান করা, গুণীজনের সম্মান করা এটা আমি মনে করি আমাদের কর্তব্য। সেই থেকে আমরা এই ব্যবস্থাটা নিয়েছি, দিচ্ছি স্বাধীনতা পুরস্কার।
মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে খুন, ধর্ষণ, গণহত্যায় সহযোগিতা করতে তাদের এদেশীয় কিছু দোসর আলবদর, আল শামস বাহিনী গড়ে তুলেছিল উল্লেখ করে স্বাধীনতার পর জাতির পিতা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে যুদ্ধাপরাধে জড়িত প্রায় ২১ হাজারের মতো পাকিস্তানি বাহিনীর দোসরকে গ্রেপ্তার করে তাদের বিচার শুরু করেছিলেন বলে জানান শেখ হাসিনা। তবে জাতির পিতাকে হত্যার পর থেকে সেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করা হয় এবং তাদের মুক্তি দেওয়া হয়। যারা অবৈধভাবে সংবিধান লক্সঘন করে ক্ষমতা দখল করেছিল, মিলিটারি ডিক্টেটর জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসেই এই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করে দিয়ে যারা কারাগারে বন্দি ছিল, তাদেরকে মুক্তি দেয়। আর যারা দেশ ছেড়ে চলে গিয়েছিল এমনকি পাকিস্তানি পাসপোর্ট নিয়ে পাকিস্তানে চলে গিয়েছিল তাদেরকেও ফিরিয়ে আনে। শুধু এখানেই শেষ না তাদেরকে মন্ত্রিত্ব দেয়, উপদেষ্টা করে। জাতির পিতার হত্যাকারী, আত্মস্বীকৃত হত্যাকারী. যারা খুব গর্ব করে বলত কে তাদের বিচার করবে? সেই খুনিদেরকে পুরস্কৃত করেছিল বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে। স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে একবার আপনারা চিন্তা করে দেখেন যে, আপনাদের দেশ, স্বাধীন দেশ-বাংলাদেশ। বাংলাদেশের দূতাবাসে কারা আছে রাষ্ট্রদূত হিসেবে অথবা দূতাবাসের প্রতিনিধি হিসেবে? তারা হল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনি, হত্যাকারী। তাহলে সেই দেশের ভাবমূর্তি কি হতে পারে?- বলেন সরকার প্রধান।
জাতির পিতার আদর্শে বাংলাদেশকে গড়ে তোলার সংকল্পের কথা জানিয়ে দেশের উন্নয়নে এবং করোনাভাইরাস মোকাবেলায় সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথাও তুলে ধরেন তিনি। দেশবাসীকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আবার নতুনভাবে এর প্রাদুর্ভাব দেখা গেছে ইউরোপে..ব্যাপকভাবে এবং ইউরোপে যখন আসে এর ধাক্কাটা আমাদের দেশেও আসে। আমরা এখন থেকে প্রস্তুত, আমরা এখন থেকেই তৈরি হচ্ছি। বিভিন্নভাবে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। অনুষ্ঠানে গণভবন প্রান্তে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিমসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তন প্রান্ত থেকে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়রুল ইসলাম অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন। প্রধানমন্ত্রীরে পক্ষে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক পুরস্কারজয়ী ও তাদের প্রতিনিধিদের হাতে পদক তুলে দেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৫৭ কর্মকর্তার পদোন্নতির অনিয়ম অনুসন্ধানে দুদক
পরবর্তী নিবন্ধবাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ এমপির বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা