টিকা নিয়ে আতঙ্ক কেটে যাচ্ছে। শুরু হয়েছে উৎসবের আমেজ। মন্ত্রী, এমপি, সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তা, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পর্যায়ের ফ্রন্ট লাইনারদের টিকা দেয়ার কার্যক্রমে বেশ গতিশীলতা তৈরি হয়েছে। প্রথম দিনের প্রায় দ্বিগুন টিকা দেয়া হয়েছে গতকাল। আর শত শত মানুষ টিকা নিয়ে ‘ভি’ সাইন দেখিয়ে অন্যদের আহবান জানিয়ে বলছেন, ‘টিকা ল’ন- ন ডরাইয়ুন।’
টিকা নিয়ে শুরু থেকে মানুষের আগ্রহের কমতি ছিল না। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশ টিকা পাবে কিনা, এদেশের মানুষ টিকা দিতে পারবে কি না তা নিয়েও ছিল ব্যাপক জল্পনা কল্পনা। পৃথিবীর ভ্যাকসিন পলিটিক্সে বাংলাদেশের অবস্থান নিয়ে চুলছেঁড়া বিশ্লেষন হয়। এদেশের লাখ লাখ গরীব মানুষের ভাগ্যে আদৌ টিকা জুটবে কিনা তা নিয়েও হয় নানা যোগ বিয়োগ। কিন্তু সব জল্পনা কল্পনা এবং উদ্বেগ উৎকণ্ঠার অবসান ঘটিয়ে দেশে শুরু হয় টিকা প্রদান। ইতোমধ্যে দেশে ৭০ লাখ ডোজ টিকা এসে পৌঁছেছে। আরো টিকা আসবে।
দেশে টিকা পৌঁছার পর থেকে শুরু হয় ভিন্ন হিসেব নিকেশ। টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে শুরু হয় নতুন আলোচনা। টিকা দিলে শরীরে বিভিন্ন ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখা দেবে, এদেশে ওদেশে মানুষ মরে গেছে ইত্যাদি নানা গুজবও ঢালপালা বিস্তার করে। দেশে টিকা পৌঁছলেও তা দেয়ার ব্যাপারে এক শ্রেনীর মানুষের মাঝে অনীহা দেখা দেয়। আবার কেউ কেউ অন্যরা দিলে কি হয় তা দেখে টিকা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। বিষয়টি নিয়ে চরম অস্থিতিশীল একটি অবস্থার মাঝে গত গত ২৭ জানুয়ারি দেশে টিকা প্রদানের কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়। নার্সসহ কয়েকজন ফ্রন্টলাইনারকে ওইদিন টিকা প্রদান করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে পুরো অনুষ্ঠানটির সাথে সংযুক্ত ছিলেন। ওইদিন তিনি বলেছিলেন, সবার টিকা দেয়া হয়ে গেলে তিনি টিকা নেবেন।
গত ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে চট্টগ্রামসহ সারাদেশে গণ টিকা প্রদান কার্যক্রম শুরু হয়। চট্টগ্রামে চারটি বুথের মাধ্যমে টিকা প্রদান কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। প্রথম দিনেই প্রবীন রাজনীতিবিদ, সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, সীতাকুণ্ডের জাতীয় সংসদ সদস্য দিদারুল আলম, চট্টগ্রামের জিওসি মেজর জেনারেল মোহাম্মদ সাইফুল আবেদীন, চট্টগ্রামের ডিআইজি মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এসএম হুমায়ুন কবির, বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবির, চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন শেখ মোহাম্মদ ফজলে রাব্বি, সাবেক সিভিল সার্জন ডাক্তার খুরশীদ জামিলসহ সর্বমোট ১২১০ জন টিকা গ্রহন করেন। আর টিকা নিয়ে প্রত্যেকেই উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে টিকা প্রদান কার্যক্রমে নতুন মাত্রা যোগ করেছেন। তারা বলেছেন, টিকা নেয়ার পর তাদের শরীরে কোন প্রতিক্রিয়া হয়নি। একাধিক প্রবীন ব্যক্তি বলেছেন, কোন প্রতিক্রিয়াই নেই, বরং উল্টো ভালো লাগছে এই ভেবে যে, টিকা দিয়েছি। করোনা থেকে এই যাত্রায় বেঁচে গেলাম। প্রথম দিনের তুলনায় চট্টগ্রামে গতকাল দ্বিগুনেরও বেশি অর্থাৎ ২ হাজার ৬৭৮ জন টিকা গ্রহন করেছেন। আজ আরো বেশি মানুষ টিকা গ্রহন করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে।
সাবেক সচিব জামালউদ্দিন আহমেদ টিকা পরবর্তী অনুভূতি শিরোনামে ফেসবুকে একটি লিখা পোস্ট করেছেন। যাতে তিনি নিজেকে অনেক বেশি ফুরফুরে লাগছে বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি পরম করুনাময়ের কাছে শোকরানা আদায় করে মন্তব্য করেছেন, পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশই এখনো টিকা দেখেনি। অনেক ধনী দেশ তাদের নাগরিকদের জন্য টিকার ব্যবস্থা করতে পারেনি। অথচ বাংলাদেশে টিকার ব্যবস্থা হয়ে গেছে। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে সকলকে টিকা গ্রহনের আহ্বান জানিয়েছেন।
চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সভাপতি আলী আব্বাস টিকা গ্রহন করেছেন প্রথম দিন। গতকাল তিনি অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে দৈনিক আজাদীকে বলেন, কোন প্রতিক্রিয়াই নেই। একেবারে ঝরঝরে অবস্থায় আছি। তিনি সকলকে আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘ডরের কিছু নাই, আঁরা ন ডরাই, অনেরাও ন ডরাইয়ুন।’
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডাক্তার শেখ ফজলে রাব্বি সকলকে টিকা গ্রহনের আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, টিকা নিলে কারো কোন সমস্যা হচ্ছে না। টিকার কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও নেই। শুধু শুধু গুজবে কান না দিয়ে তিনি সকলকে টিকা গ্রহনের আহবান জানান।