চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ কিংবা এক্সপ্রেসওয়ে হিসেবে গড়ে তোলার সমীক্ষা প্রায় নয় মাস ধরে বন্ধ রয়েছে। করোনা সংক্রমণের শুরুতে কার্যক্রম বন্ধ করে চলে যাওয়া বুয়েটের বিশেষজ্ঞ টিম কাজ শুরু করেনি। কার্যক্রম কবে শুরু হবে তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
এই মহাসড়কটির প্রধান অন্তরায় অগুনতি ‘বাঁক’। মৃত্যু ফাঁদে পরিণত হওয়া বাঁকগুলো কাটিয়ে এটাকে কীভাবে গতিশীল করা যায় তা নিয়ে শুরু হয়েছিল বুয়েটের সমীক্ষা। বুয়েটের একটি বিশেষজ্ঞ টিম রাস্তাটির উপর গড়ে ওঠা অপরিকল্পিত বাজার, বাঁক, সেতু এবং অ্যালাইমেন্ট নিয়ে সমীক্ষা পরিচালনা করছিল। তাদের সমীক্ষা রিপোর্টের ওপরই নির্ভর করছে প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পটির ভবিষ্যৎ।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের একটি সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের দৈর্ঘ্য ১৫৫ কিলোমিটার। দুই ঘণ্টায় এই দূরত্ব অতিক্রম করার সুযোগ থাকলেও সময় লেগে যায় চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা। রাস্তাটির বেহাল দশা দেশের সেরা পর্যটন কেন্দ্রের বিকাশে অন্তরায় হয়ে উঠেছে। মহাসড়কের জন্য ৬০ ফুট থেকে ১০৪ ফুট পর্যন্ত জায়গা অধিগ্রহণ করা থাকলেও দুই লেনের মূল সড়কটি মাত্র ২৪ ফুটের। সড়কের উভয় পাশের শত শত একর জমি অবৈধ দখলে চলে গেছে। দখলে সরু সড়কের অবস্থা নাজুক করে তুলেছে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা বাজার ও অগুনতি বাঁক। একেকটি বাঁক যেন মৃত্যুফাঁদ। সড়কের বিভিন্ন অংশে থাকা বাঁকগুলো এতই বাঁকানো যে, একদিক থেকে গাড়ি এলে অন্যদিকে দেখা যায় না। একটু অসতর্ক হলেই দুর্ঘটনা ঘটে। এই বাঁকগুলো অনেক মানুষের প্রাণহানির কারণ হয়েছে। এসব বাঁক সোজা না করে মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত কিংবা এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হলেও সুফল পাওয়া নিয়ে সংশয় রয়েছে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা আজাদীকে জানান, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করার ব্যাপারে একটি প্রকল্প তৈরি করা হয়েছিল। ১২ হাজার ৯০০ কোটি টাকা ব্যয় নির্ধারণ করে প্রস্তুতকৃত প্রজেক্ট প্রোফাইল পাঠানো হয়েছিল পরিকল্পনা কমিশনে। কিন্তু ওই প্রকল্পটি আলোর মুখ দেখেনি। পরে ২০১৭ সালের ৬ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কক্সবাজারে মেরিন ড্রাইভ সড়কের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মহাসড়কটি চার লেনে উন্নীত করার ঘোষণা দেন। এরই প্রেক্ষিতে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় ১৩৬ কিলোমিটার চার লেনে উন্নীত করার পৃথক একটি প্রকল্প তৈরি করে। এই প্রকল্পটিতে পটিয়ার মইজ্যারটেক থেকে কক্সবাজারের রিং রোড পর্যন্ত ১৩৬ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের খুঁটিনাটি তুলে ধরা হয়।
এতে বলা হয়, চার লেন সড়কের মূল সড়ক হবে ৮২ ফুট প্রস্থ। সড়কের উভয় দিকে ২৪ ফুট চওড়া ফুটপাত এবং মধ্যে ডিভাইডার থাকবে। ১২ ফুট প্রস্থ একটি সাবলেনও রাখা হবে; যাতে স্থানীয় হালকা যানবাহন চলাচল করতে পারে। মহাসড়কের চট্টগ্রাম অংশে ৫ম পৃষ্ঠার ৭ম কলাম
৬৮ কিলোমিটার এবং কক্সবাজার অংশে ৬৮ কিলোমিটার রয়েছে। প্রজেক্ট প্রোফাইল অনুযায়ী প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে প্রায় ৭৮ হাজার একর ভূমি অধিগ্রহণ করতে হবে। এছাড়া ৩৩টি সেতু, ১৩৯টি কালভার্ট, ১৩টি ফুট ওভারব্রিজ এবং কেরানীহাট ও চকরিয়ায় দুটি ফ্লাইওভার রয়েছে। এতে প্রকল্প ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছিল প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকা।
প্রকল্পটি বাস্তবায়নের আগে একটি সমীক্ষা পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বুয়েটকে দেওয়া হয় এই দায়িত্ব। বুয়েটের বিশেষজ্ঞ টিম প্রকল্পটি নিয়ে কাজ শুরু করে। এতগুলো বাঁক সরিয়ে রাস্তাটিকে গতিশীল করার ক্ষেত্রে কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া যায় তা নিয়ে কাজ করেছে বুয়েট টিম। রাস্তার উপর অপরিকল্পিত বাজার নিয়েও সমস্যা। রাস্তার অ্যালাইমেন্ট নিয়ে কাজ করা হয়। বেশ কিছুদিন কার্যক্রম পরিচালনা করলেও করোনার শুরুতে বুয়েট টিমের সমীক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। নয় মাসের বেশি সময় ধরে সমীক্ষা বন্ধ রয়েছে। কবে নাগাদ শুরু হবে তা অনিশ্চিত।
সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, এই সমীক্ষা রিপোর্টের ওপরই প্রকল্পটির ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে। মহাসড়কটি চার লেনে উন্নীত হবে নাকি এক্সপ্রেসওয়ে হবে, সেই সিদ্ধান্তও নেওয়া হবে সমীক্ষা রিপোর্টের পর। আবার এটা ভূমি দিয়ে যাবে নাকি পুরোটাই ফ্লাইওভার টাইপে করা হবে, সেই সিদ্ধান্ত নিতেও সমীক্ষা রিপোর্টের ওপর নির্ভর করতে হবে। কিন্তু বুয়েটের সমীক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকায় মহাসড়কের উন্নয়ন কাজ বন্ধ আছে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ দোহাজারীর নির্বাহী প্রকৌশলী সুমন সিংহ বলেন, বুয়েট সমীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছিল। তবে করোনার জন্য বর্তমানে তাদের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।