নয় বছর ধরে ঝুঁকিপূর্ণ, তবু নেয়া হয়নি কোনো ব্যবস্থা

কাপাসগোলা সিটি কর্পোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ভবন ।। এবার ‘ধসে পড়ার’ শঙ্কার কথা জানাল সেনাবাহিনী ।। ভয়ে ভয়ে ক্লাস করেন প্রাইমারি থেকে কলেজের শিক্ষার্থীরা

মোরশেদ তালুকদার | বৃহস্পতিবার , ৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ at ৪:২৬ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) প্রকৌশল বিভাগের উদ্যোগে ২০১৬ সালে করা র‌্যাপিড ভিজুয়্যাল স্ক্যানিং (আরভিএস) পরীক্ষায় নগরের কাপাসগোলা সিটি কর্পোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ভবনকে ‘লাল’ শ্রেণি বা অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এরপর কেটে গেছে ৯ বছর। দীর্ঘ এ সময়ে ভবনটি ভেঙে ফেলার কোনো উদ্যোগ নেয়নি চসিক। বরং ঝুঁকি নিয়েই ভবনটিতে শিক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে সংস্থাটি। এমন পরিস্থিতিতে স্কুল ভবনটিকে নতুন করে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ অবস্থানে রয়েছে উল্লেখ করে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে চিঠি দিয়েছে নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে চলমান মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রকল্প পরিচালক। এতে ভবনটি ‘যে কোনো সময় ধসে পড়ার’ও সম্ভাবনার কথা বলা হয়। এরপর বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিষয়টি চসিকের প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তাকে অবহিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানান। সর্বশেষ চসিকের প্রকৌশলীরা স্কুল ভবনটি পরিদর্শন করেন। তবে এখনো ভবনটি ভেঙে ফেলা বা অপসারণের বিষয়ে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালের ৪ ডিসেম্বর কাপাসগোলা সিটি কর্পোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নতুন করে নির্মিত ৬ তলা একটি ভবন উদ্বোধন করা হয়। ওই ভবনে জায়গার সংকুলান না হওয়ায় পুরাতন ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটিতে বিভিন্ন শ্রেণির ক্লাস নেয়া হচ্ছে। পুরনো ভবনটি চার তলা। ঝুঁকির কারণে এ ভবনের নিচ তলায় কোনো ক্লাস নেয়া হয় না, সেটা পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। বাকি ফ্লোরগুলোর ২য় তলায় প্রাইমারি স্কুলের ক্লাস নেয়া হয়। তৃতীয় তলায় ষষ্ঠ ও অষ্টম শ্রেণি এবং চতুর্থ তলায় কলেজের শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেয়া হয়। সব মিলিয়ে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটিতে প্রায় ১ হাজার শিক্ষার্থী নিয়মিত পাঠদান করে। স্কুলের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, ভবনের বিভিন্ন শ্রেণিকক্ষে ছাদের আস্তর খসে পড়েছে। দেয়ালে দেখা দিয়েছে ফাটল। ভেঙে পড়েছে সানশেড। ফলে দুর্ঘটনার শঙ্কায় তারা সবসময় আতংকে থাকেন। সম্প্রতি দেশে ঘন ঘন ভূমিকম্প হওয়ায় সেই আতংক আরো বেড়েছে।

শঙ্কার কথা জানিয়েছেন অবিভাবকরাও। সেকান্দর নামে এক অবিভাবক আজাদীকে বলেন, নয় বছর আগে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণার পরও সেখানে ক্লাস নেয়া উচিত হয়নি। আল্লাহর রহমত ছিল বলে এই সময়ে কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি। এখন যেহেতু মেগা প্রকল্পের কর্মকর্তারা চিঠি দিয়েছেন তাই চসিকের উচিত সেখানে আর ক্লাস না নেয়া। দ্রুত ভবনটি ভেঙে নতুন ভবন নির্মাণ করা হোক।

ধসে পড়ার সম্ভবানা : গত ৫ নভেম্বর জলাবদ্ধতা নিরসনে চলমান মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল মোহাম্মদ মহসিনুল হক চৌধুরী স্কুলের প্রধান শিক্ষককে একটি চিঠি দেন। এতে বলা হয়, প্রকল্পের আওতায় হিজরা খালে রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। এ আরসিসি রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ এলাকায় অবস্থিত কাপাসগোলা সিটি কর্পোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে। রিটেইনিং ওয়ালের কাজের কারণে যে কোনো সময় ধসে পড়ার বা ফাটল ধরার সম্ভাবনা রয়েছে। এ ব্যাপারে অবগত করা হলো।’

এরপর ১৭ নভেম্বর চসিকের প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তাকে একটি চিঠি দেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক রোমা বড়ুয়া। এতে তিনি মেগা প্রকল্পের পরিচালকের দেয়া চিঠির বিষয়টি তুলে ধরে বিদ্যালয়ের প্রায় দুই হাজার ৫০০ শিক্ষার্থীর নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন করেন।

জানা গেছে, ২০২২ সালের ২২ আগস্ট অনুষ্ঠিত চসিকের সাধারণ সভায় কাপাসগোলা সিটি কর্পোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ভবনে পাঠদান কার্যক্রম চলা অবস্থায় ও বিভিন্ন সময়ে শ্রেণি কক্ষসহ অন্যান্য কক্ষের ছাদের আস্তর (প্লাস্টার) খসে পড়ার কথা উল্লেখ করে দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনার কথা বলা হয়।

কী বলছেন সংশ্লিষ্টরা : বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রোমা বড়ুয়া আজাদীকে বলেন, নতুন ভবনে জায়গার সংকুলান না হওয়ায় বাধ্য হয়ে পুরাতন ভবনে আমাদের স্কুলের ক্লাস নিতে হয়। পুরাতন ভবনটি আশির দশকে নির্মিত। প্রাইমারি স্কুল এবং কলেজেরও ক্লাস নেয়া হয় সেখানে। এখন তো পরীক্ষার হলও ওখানে। তিনি বলেন, পুরাতন ভবনের একতলা এমনিতেই পরিত্যক্ত। যাতে মশার উপদ্রব বৃদ্ধি না পায় সেজন্য ওখানে বালি ভরে রেখেছি। এছাড়া অনেক পুরনো ভবন হওয়ায় অনেক জায়গায় আস্তর পড়ে গেছে। গতবছর ওখানে আমরা রং করিয়েছি। সেনাবাহিনীর চিঠির প্রেক্ষিতে সিটি কর্পোরেশন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে কিনা জানতে চাইলে বলেন, আমরা জানিয়েছি, কর্পোরেশন আমলে নিয়েছে। প্রকৌশল বিভাগ থেকে এসে দেখে গেছেন।

চসিকের প্রধান প্রকৌশলী মো. আনিসুর রহমান আজাদীকে বলেন, সরেজমিন পরিদর্শন করে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট নির্বাহী প্রকৌশলীকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর ব্যবস্থা নিব। যদি ঝুঁকিপূর্ণ হয় এবং ব্যবহার করার মত অবস্থায় না থাকে তাহলে স্কুল ভবনটি ভেঙে ফেলব। যদি ব্যবহার উপযোগী হয় সেক্ষেত্রে সংস্কার করব।

চসিকের নির্বাহী প্রকৌশলী ফারজানা মুক্তা আজাদীকে বলেন, সরেজমিন পরিদর্শন করেছি। বাইরে থেকে দেখলে ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ মনে হয়। কিন্তু প্রকৌশলগত জায়গা থেকে ঝুঁিকপূর্ণ ঘোষণার আগে ভবনের ডিটেইল ইঞ্জিনিয়ারিং এসেসমেন্ট (ডিইএ) করতে হয়। তাই ডিইএ করার সুপারিশসহ ভবনের বর্তমান অবস্থান তুলে ধরব। এরপর কর্তৃপক্ষ উপযুক্ত সিদ্ধান্ত নিবেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদেশের বিভিন্ন অঞ্চল হানাদারমুক্ত হতে থাকে
পরবর্তী নিবন্ধদেশে ডেঙ্গুতে হাসপাতালে ভর্তি রোগী ৯৬ হাজার ছাড়াল