নয়ডার সুপারটেক টুইন টাওয়ার ধসিয়ে দিতে লাগল ৯ সেকেন্ড

| সোমবার , ২৯ আগস্ট, ২০২২ at ১১:১৪ পূর্বাহ্ণ

বড়সড় বিস্ফোরণের মাধ্যমে ভারতের উত্তর প্রদেশের নয়ডার বিখ্যাত সুপারটেক টুইন টাওয়ার গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বেআইনিভাবে আকাশচুম্বি এ ভবনদুটি নির্মাণের প্রমাণ পাওয়ায় সুপ্রিম কোর্টের আদেশে গতকাল রোববার দুুপুর আড়াইটার দিকে নিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরণ ঘটিয়ে তা ভেঙে দেওয়া হল। ৯ সেকেন্ডের ওই বিস্ফোরণে নয়ডার সেক্টর ৯৩এ- এর সুপারটেক এমারেল্ড কোর্টের বাসিন্দাদের সঙ্গে ভবন দুটির নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের নয় বছরের আইনি লড়াইয়েরও ইতি ঘটল বলে জানিয়েছে এনডিটিভি। খবর বিডিনিউজের।
তবে গুঁড়িয়ে দেওয়া গেলেও নয়ডা কর্তৃপক্ষকে এখন ভবন দুটির পাহাড় সদৃশ ধ্বংসস্তূপ সরাতে হবে। বিস্ফোরণের কারণে এই জোড়া টাওয়ারের ৫৫ হাজার টন ধ্বংসস্তূপ সৃষ্টি হতে পারে বলে কর্মকর্তারা আগে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। সব পরিষ্কার করতে তিন মাসের মতো সময় লাগতে পারে, এই বর্জ্য নির্ধারিত একটি জায়গায় ডাম্প করা হবে। বিস্ফোরণের কয়েক ঘণ্টা আগেই ভবনদুটির আশপাশ থেকে লোকজনকে সরিয়ে নেওয়া হয়; বিস্ফোরণে আশপাশের স্থাপনাগুলোর ক্ষতি রোধেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়। যানবাহনকে নিকটবর্তী সড়ক থেকে অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়, জরুরি পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে কী করতে হবে তার নির্দেশনাও আগেই জানিয়ে দেওয়া হয়। বিস্ফোরণের আগে টাওয়ারদুটিতে তিন হাজার ৭০০ কেজি বিস্ফোরক প্যাঁচানো হয়; এমনভাবে বিস্ফোরণের পরিকল্পনা হয়, যেন ভবনদুটি সোজা নিচের দিকে ভেঙে পড়বে, এটি জলপ্রপাত কৌশল নামে পরিচিত। এনডিটিভি জানায়, বিস্ফোরণের আগে রোববার সকালেই টাওয়ারদুটির কাছাকাছি এলাকার প্রায় ৭ হাজার বাসিন্দাকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়। আশপাশের এলাকার গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগও বন্ধ রাখা হয়েছে। স্থানীয় সময় বিকাল ৪টা নাগাদ ওই সংযোগগুলো ফেল চালু হওয়ার কথা। বাসিন্দাদের তাদের বাড়িতে ফিরতে দেওয়া হবে সাড়ে ৫টার দিকে। তবে বাড়ি ফিরলেও ধুলার হাত থেকে বাঁচতে ঘরের ভেতর মাস্ক পরে রাখার পরামর্শ দিয়েছে পুলিশ।
বিস্ফোরণের আগের ১৫ মিনিট ও বিস্ফোরণপরবর্তী ১৫ মিনিট টুইন টাওয়ার সংশ্লিষ্ট সড়কে যান চলাচল বন্ধ রাখার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। ধুলা প্রতিরোধে টাওয়ারদুটির কাছাকাছি থাকা অনেকগুলো ভবনকে বিশেষ কাপড় দিয়ে মুড়ে দেওয়া হয়। আশপাশের এক নটিকাল মাইল এলাকাজুড়ে ঘোষণা করা হয় ‘নো ফ্লাই জোন’। বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে ১০০ কোটি রুপি বীমার আওতায়। আশপাশের কোনো ভবনের ক্ষতি হলে ওই বীমা থেকে অর্থ দেওয়া হবে। এই বীমার প্রিমিয়াম ও অন্যান্য খরচ বহন করছে নির্মাণ প্রতিষ্ঠান সুপারটেক। ভবন দুটি গুঁড়িয়ে দেওয়ার খরচ ২০ কোটি রুপি ছাড়িয়ে যেতে পারে; টুইন টাওয়ার ভেঙে ফেলায় ক্ষতি দাঁড়াতে পারে ৫০ কোটি রুপির বেশি। নির্মাতা প্রতিষ্ঠান সুপারটেকের পরিকল্পনা ছিল নয়ডার এই ভবনদুটির প্রত্যেকটি ৪০ তলা উঁচু হবে। কিন্তু আদালতের নির্দেশের কারণে কয়েকটি তলা বানানো যায়নি, কয়েকটি বিস্ফোরণের আগে স্বাভাবিক নিয়মেই ভেঙে পড়েছে। বহুতল এ ভবনদুটির মধ্যে অ্যাপেক্স ছিল ৩২ তলার, উচ্চতা ছিল ১০৩ মিটার। সেয়ানের ছিল ২৯ তলা, উচ্চতা ৯৭ মিটার। নির্মাতাদের পরিকল্পনা ছিল টাওয়ার দুটিতে ৯০০-র বেশি ফ্ল্যাট বানানো। যার দুই তৃতীয়াংশই পরে বুকড বা বিক্রি হয়ে যায়। যারা সেখানে ফ্ল্যাট কিনেছে তাদের টাকা সুদসহ ফিরিয়ে দিতে বলেছে ভারতের সর্বোচ্চ আদালত।

পূর্ববর্তী নিবন্ধলিবিয়ায় গৃহযুদ্ধের আশঙ্কা সংঘর্ষে নিহত ৩২
পরবর্তী নিবন্ধকম ঘুমালে কিপটে হয়ে যেতে পারেন