সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ঢুকে ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়েছে ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজসহ কয়েকটি কলেজের শিক্ষার্থীরা। গতকাল রোববার দুপুরে এ ঘটনার পর সোহরাওয়ার্দী কলেজে চলমান অনার্স প্রথম বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা স্থগিত করা হয়।
ঢাকা মহানগর পুলিশের লালবাগ জোনের উপকমিশনার জসিম উদ্দিন বলেন, ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মাহাবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থী অভিজিতের মৃত্যুর ঘটনায় গতকাল ঘেরাও কর্মসূচি দেওয়া হয়েছিল। পূর্বঘোষিত সেই ‘সুপার সানডে’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজসহ প্রায় দশটি কলেজের শিক্ষার্থীরা এদিন দুপুরে ন্যাশনাল মেডিকেলের সামনে অবস্থান নেয়। খবর বিডিনিউজের।
আব্দুর রউফ কলেজ, বিজ্ঞান কলেজ, নটরডেম, সিদ্ধেশ্বরী, ডিএমআরসি, ঢাকা কলেজ, সিটি কলেজ, খিলগাঁও মডেল কলেজ, তেজগাঁও কলেজ, যাত্রাবাড়ী আইডিয়াল কলেজসহ রাজধানীর বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ ঘেরাওয়ে অংশ নেয়। এক পর্যায়ে তারা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের প্রধান ফটক ভাঙচুর করে। পরে দুপুর সোয়া ১টার দিকে সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের গেট ভেঙে ভিতরে প্রবেশ করে ভাঙচুর শুরু করে। সে সময় সেখানে কবি নজরুল কলেজের শিক্ষার্থীরা অনার্স প্রথম বর্ষের ইতিহাস পরীক্ষা দিচ্ছিল। গণ্ডগোলের মধ্যে নিরাপত্তার কারণে মাঝপথে পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সোহরাওয়ার্দী কলেজে ঢুকে পড়লে পরীক্ষার্থী ও শিক্ষার্থীরা অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। এ সময় কলেজের উপাধ্যক্ষের কক্ষসহ অধিকাংশ কক্ষে ভাঙচুর চালায় বিভিন্ন কলেজ থেকে আসা আন্দোলনকারীরা।
কলেজ প্রাঙ্গণে থাকা একটি প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস, অ্যাম্বুলেন্স ও মোটরসাইকেল এ সময় ভাঙচুর করা হয়। কলেজের ট্রফি, চেয়ারসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র নিয়ে যেতে দেখা যায় হামলাকারীদের। পরে শিক্ষক ও কর্মচারীদের অনুরোধে শিক্ষার্থীরা কলেজ প্রাঙ্গণ ছেড়ে দেয়। কলেজে থাকা পরীক্ষার্থীরাও তখন ধীরে ধীরে বেরিয়ে যায়।
সোহরাওয়ার্দী কলেজের উপাধ্যক্ষ ড. ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, ওই কলেজের প্রিন্সিপাল ও আমাদের প্রিন্সিপাল একটা সমঝোতায় এসেছিলেন। আমরা আশ্বস্ত ছিলাম যে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু হবে না। কিন্ত তা হলো না।”
সোহরাওয়ার্দী কলেজের অধ্যক্ষ ড. কাকলী মুখোপাধ্যায় বলেন, গতকাল রাত পর্যন্ত মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের প্রিন্সিপালের সাথে কথা বলেছি। তারা বলল শিক্ষকদের সাথে কথা বলেছে, অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলেছে। তারা বলল কোনো সমস্যা হবে না। সোয়া ১টার দিকে কিছু বোঝার আগেই সিসিটিভিতে দেখি প্রচুর ছেলেমেয়ে এসেছে। গেট ভেঙে ঢুকেছে। ইচ্ছামতো ভাঙচুর করেছে। গাড়ি ভাঙচুর করেছে। গ্যাস লাইন ছেড়ে দিছে। আজ আমাদের কলেজে পরীক্ষা ছিল। ওরা মার্কশিট, খাতা, ল্যাপটপ সবকিছু নিয়ে চলে গেছে। আমি ঢাবিতে জানিয়েছি। প্রোভিসি বলেছিলেন অ্যাপ্লিকেশন পাঠাতে। ভাঙচুরের জন্য তাও পাঠাতে পারিনি। এরা কি ছাত্র হতে পারে? এত নাশকতা তো কোনো ছাত্র করতে পারে না।
কবি নজরুল কলেজের অধ্যক্ষ মোহম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন, আসলে এটা আমাদের কলেজ ক্যাম্পাসের ভেতরের ঘটনা না। আমাদের পরীক্ষা চলছে। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে আমরা গেইটগুলো বন্ধ রেখেছি। আমি আর কিছু এখনই বলতে চাচ্ছি না।
কেন এই হামলা : ১৮ নভেম্বর ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মাহাবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের (ডিএমআরসি) শিক্ষার্থী অভিজিৎ মারা যায়। ডেঙ্গু আক্রান্ত অভিজিতের প্লাটিলেট কমে গেলে আগের দিন তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে নিতে চেয়েছিল তার পরিবার। কিন্তু ন্যাশনাল মেডিকেল কর্তৃপক্ষ তাকে নিতে দেয়নি বলে অভিজিতের সহপাঠীদের অভিযোগ।
তারা বলছেন, অভিজিতের মৃত্যুর পর টাকার জন্য লাশ আটকে রাখে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ২০ নভেম্বর ডিএমআরসি কলেজের শিক্ষার্থীরা লাশ নিতে এলেও কোনো সমাধান না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ শুরু করেন।
পরে সন্ধ্যার পর লাঠিপেটা করে পুলিশ শিক্ষার্থীদের সরিয়ে দেয়। পরদিন ২১ নভেম্বর ডিএমআরসি আবার ন্যাশনাল মেডিকেলে গেলে কবি নজরুল ও সোহরাওয়ার্দী কলেজ ছাত্রদল নেতাকর্মীরা তাদের ওপর হামলা করে। তাতে অনেক শিক্ষার্থী আহত হন।
পুলিশ উপকমিশনার জসিম উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবি, অভিজিতের অবহেলাজনিত মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বারবার বলেছে যে তারা তদন্ত করবে। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে চাপের মুখে রাখা হয়েছে। আজ ছাত্র প্রতিনিধি ও মৃতের বাবার সাথে হাসপাতালে মিটিং ছিল। কিন্তু আমরা জানতে পারি তারা আসে নাই। এদিকে আজ ফের শিক্ষার্থীরা হাসপাতালে এসেছে। তারা যাত্রাবাড়ী থেকে অনেক সংখ্যায় এসেছে। আজ সকালবেলা থেকে আমরা চেয়েছি তাদের বোঝাতে। অবশেষে আমরা সংখ্যা বাড়িয়ে বিকেলে তাদের বুঝাতে সক্ষম হই, তারা চলে গেছে।