ভ্লাদিমির জেলেনস্কি ইংলিশ রক ব্যান্ড রোলিং স্টোনের ভক্ত হতে পারেন, নাও পারেন। তবে এবারের ন্যাটো সম্মেলনের পর তিনি সম্ভবত ব্যান্ডটির ইউ কান্ট অলওয়েজ গেট হোয়াট ইউ ওয়ান্ট শিরোনামের গানের সঙ্গে নিজেকে মেলাতে পারছেন। বিবিসি লিখেছে, লিথুয়ানিয়ার ভিলনিয়াসে এবারের ন্যাটো সম্মেলনে প্রবল উচ্চাশা নিয়ে এসেছিলেন ইউক্রেনের এই প্রেসিডেন্ট। দুইদিনের এই সম্মেলন থেকে তিনি রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ শেষেই ন্যাটোতে যোগ দিতে পারবেন এমন আশ্বাস নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী সামরিক জোটের সদস্যপদ তিনি চাইছেন মূলত তার দেশের জনগণকে আশার আলো দেখাতে, রুশ বাহিনী আর কখনো ইউক্রেনে আক্রমণ করার সাহস দেখাবে না–এমন পরিস্থিতি তৈরি করতে। খবর বিডিনিউজের।
কিন্তু তা হয়নি। উল্টো তাকে বলা হচ্ছিল, ইউক্রেনকে তখনই সদস্যপদের আমন্ত্রণ দেওয়া হবে, যখন মিত্ররা একমত হবে এবং সব শর্ত পূরণ হবে। অর্থাৎ, কোনো আশ্বাস নয়। স্বাভাবিকভাবেই ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের মেজাজ সপ্তমে চড়ে গিয়েছিল। ইউক্রেনকে ন্যাটোতে নিতে জোটের নেতারা যে কোনো সময়সীমাও ঘোষণা করেননি, সেটিকে হাস্যকর আর জোটের সদস্য হওয়ার শর্তকে অস্পষ্ট বলে অভিহিত করেছিলেন তিনি। ন্যাটোতে ইউক্রেনের সদস্যপদ ইস্যুকে যুদ্ধপরবর্তী সময়ে রাশিয়ার সঙ্গে দরকষাকষির গুটি হিসেবে ব্যবহার করা হতে পারে, এমন ধারণা স্পষ্টতই তাকে ক্ষেপিয়ে তুলেছিল। কিন্তু জেলেনস্কি যখন ন্যাটো নেতাদের সঙ্গে মুখোমুখি বসলেন, সব কূটনৈতিক ধোঁয়াশা যেন কেটে গেল। ইউক্রেনকে ন্যাটোতে যুক্ত করে নেওয়া হবে, নেতারা জোরের সঙ্গেই তাকে এই আশ্বাস দিয়েছেন। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক বলেছেন, ইউক্রেন ন্যাটো জোটে থাকার শক্তিশালী দাবিদার। ন্যাটোর মহাসচিব ইয়েলেন স্তলতেনবার্গও বুধবার বলেছেন, কিয়েভের জন্য ভবিষ্যতে মিত্ররা আরও কিছু করবে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জেলেনস্কিকে আশ্বস্ত করেছেন। বলেছেন, ইউক্রেনকে ন্যাটোতে নেওয়া হবে। এজন্য দেশটি সঠিক পথেই অগ্রসর হচ্ছে। যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেন ওয়ালেস বলেছেন, সম্মেলনে কোনো দেশই ইউক্রেনের জোটে যুক্ত হওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেনি, তাদের প্রশ্ন ছিল কখন ইউক্রেন যুক্ত হবে, তা নিয়ে।
এমন অনেক মিষ্টি কথা নিয়েই শেষ পর্যন্ত বাড়ি ফিরতে পেরেছেন জেলেনস্কি। সঙ্গে আরও কিছু অর্জন আছে তার। ন্যাটোতে যুক্ত হওয়ার আবেদন প্রক্রিয়া সংক্ষিপ্ত করা হবে– এমন আশ্বাস, নতুন ন্যাটো–ইউক্রেন কাউন্সিল গঠন, যার মাধ্যমে যখন তখন কিয়েভ জোটের বৈঠক ডাকতে পারবে। কিয়েভ এমনকী বিশ্বের একাধিক বড় পরাশক্তির কাছ থেকে নতুন, দীর্ঘমেয়াদী নিরাপত্তা নিশ্চয়তার প্রতিশ্রুতিও পেয়েছে।
শিল্পোন্নত দেশগুলোর জোট জি৭ এর নেতারা নেটোতে যোগ দেওয়ার আগ পর্যন্ত রাশিয়ার আগ্রাসন প্রতিহতে ইউক্রেনকে সামরিক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা দিয়ে যেতে রাজি হয়েছেন। এর অর্থ হচ্ছে–কিয়েভ সামনের দিনগুলোতে আরও আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাপনা, দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র এমনকী যুদ্ধবিমানও পেতে যাচ্ছে। সঙ্গে থাকছে আরও প্রশিক্ষণ, গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় এবং সাইবার প্রযুক্তিগত সহায়তা। জেলেনস্কি এসবকে গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা বিজয় বলে অভিহিত করছেন। অবশ্য এতকিছুর সঙ্গে গলার কাঁটা হয়ে বিঁধে আছে বেন ওয়ালেসের অস্বস্তিকর এক মন্তব্য।
সাংবাদিকদের দেওয়া ব্রিফিংয়ে করা ওই মন্তব্যে ব্রিটিশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেছিলেন, ইউক্রেনকে এখন পর্যন্ত যত সাহায্য দেওয়া হয়েছে, তার জন্য তাদের আরও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা উচিত ছিল। এটা ঠিক কূটনৈতিক কোনো বার্তা নয়, বরং সাহায্যকারী এক মিত্রের খোলামেলা উপদেশ। ওয়ালেস বলেছেন, ইউক্রেনকে সামরিক সহযোগিতা করতে গিয়ে বিভিন্ন দেশ বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রকে যে তুমুল রাজনৈতিক চাপের মুখে পড়তে হচ্ছে, সেটা কিয়েভের বোঝা উচিত।