সমগ্র পশ্চিমা বিশ্বের নেতারা এখন রাশিয়ার প্রতিবেশী লিথুয়ানিয়ায় জড়ো হয়েছেন। সাবেক সোভিয়েত দেশটির রাজধানী ভিলনিয়াসে আগামী দুদিন নেটো সামরিক জোটের শীর্ষ বৈঠক হবে। ধারণা করা হচ্ছে, ইউক্রেনকে দ্রুত এই জোটের সদস্য করা বা না করা বিষয়টিই বৈঠকের মুখ্য বিষয় হবে।
সেইসাথে, জোটের কোনো দেশ রুশ হামলার শিকার হলে, কীভাবে তা মোকাবেলা করা হবে তা নিয়ে নতুন প্রস্তাবিত একটি কৌশল নিয়ে কথা হবে বলে জানা গেছে। এছাড়াও বৈঠকের এজেন্ডায় রয়েছে, এশিয়া–প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলের চারটি দেশের সাথে এই জোটের সহযোগিতার আনুষ্ঠানিক এক কাঠামো তৈরি। ভিলনিয়াসে তাই হাজির থাকবেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা, দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইয়ুন সুক ইয়ল, অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী এ্যান্থনি আলবানিজ এবং নিউজিল্যান্ডের ক্রিস হিপকিন্স। জোটের সদস্য না হয়েও এই চারটি এশীয় দেশ পরপর দ্বিতীয়বারের মত নেটোর শীর্ষ বৈঠকে যোগ দিচ্ছে। ২০২২ সালে মাদ্রিদে নেটোর শীর্ষ বৈঠকে প্রথমবারের মত অংশ নেয় এশিয়া ও প্রশান্ত–মহাসাগরীয় অঞ্চলের এ চারটি দেশ। এর পর থেকেই সন্দেহ দানা বাঁধতে থাকে যে, শীতল যুদ্ধকালে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষার জন্য তৈরি এই পশ্চিমা সামরিক জোট কি এখন এশিয়ায় তাদের সম্প্রসারণ চাইছে? জানুয়ারিতে জাপানে গিয়ে নেটো সেক্রেটারি জেনারেল জেনস স্টলটেনবার্গ টোকিওতে নেটো জোটের একটি লিয়াজো অফিস খোলার বিষয়ে কথাবার্তা বলেছেন–এমন খবর ফাঁস হওয়ার পর সেই সন্দেহ আরও দৃঢ় হয়। আর এখন পরপর দ্বিতীয়বারের জোটের শীর্ষ বৈঠকে এশিয়ায় আমেরিকার ঘনিষ্ঠ এই মিত্রদের অংশগ্রহণ সেই সন্দেহকে শতগুণে বাড়িয়ে দেবে। খবর বিবিসি বাংলার।
লন্ডনে গবেষণা সংস্থা চ্যাটাম হাউজের এশিয়া–প্রশান্ত মহাসাগরীয় কর্মসূচির গবেষক বিল হেইটন সম্প্রতি সংস্থার সাইটে এক নিবন্ধে লিখেছেন, এশিয়াতে নেটো জোটের নজর নতুন নয়। অনেক পর্যবেক্ষকও মনে করেন, উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক এবং ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিতে আতঙ্কিত দক্ষিণ কোরিয়া এবং জাপান নেটোর সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে আগ্রহী। তবে অধিকাংশ পর্যবেক্ষক মনে করেন এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে আমেরিকা এবং নেটোর নজরের প্রধান কারণ এখন চীন। সুইডেনের গবেষণা সংস্থা ইন্সটিটিউট ফর সিকিউরিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পলিসির একটি প্রকাশনায় এক বিশ্লেষণে গবেষক হাসিম টুরকের লিখেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান মনোযোগ এখন ইন্দো–প্যাসিফিক অঞ্চলের দিকে, ফলে নেটোর অগ্রাধিকারে তার প্রভাব পড়তে বাধ্য। তার মতে, গত বছর পাঁচেক ধরেই চীনের ব্যাপারে নেটো জোটের মনোযোগ বাড়ছে।
এশিয়ায় তাদের বৈরি ভাবাপন্ন দেশগুলোর সাথে নেটো জোটের সহযোগিতা চুক্তি চীনের ওপর গভীর প্রভাব ফেলবে বলে একরকম নিশ্চিত গবেষক হাসিম টুরকের। তার মতে, এর ফলে এশিয়ায় অস্ত্র প্রতিযোগিতা বাড়বে, এবং ভূ–রাজনৈতিক ‘ফল্ট লাইন’ বা ফাটল আরও চওড়া হবে।