নৌপথে পণ্য পরিবহনে ধস

ভরাট হয়ে গেছে খাল, ঘাটে ভিড়তে পারছে না নৌকা

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ১০ নভেম্বর, ২০২০ at ৪:৩২ পূর্বাহ্ণ

একসময় চাক্তাই খাতুনগঞ্জের সিংহভাগ বাণিজ্য হতো নৌপথে। সময়ের পরিক্রমায় সেটি ধীরে ধীরে কমে আসে। সড়ক যোগাযোগ উন্নত হওয়ায় নৌ পথে বাণিজ্য নেমে আসে মাত্র ১০ শতাংশে। আরেকটু স্পষ্ট করে বললে বর্তমানে কক্সবাজারের কুতুবদিয়া, মহেশখালী এবং চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ ও নোয়াখালীর হাতিয়াতে নৌপথে পণ্য পরিবহন হচ্ছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে নৌপথে পণ্য পরিবহণে সংকটে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, গত ২০১৮ সালের মাঝামাঝি সময়ে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) স্লুইচ গেট নির্মাণের জন্য চাক্তাই খালের একাংশ ভরাট করে ফেলে। যার ফলে পণ্য পরিবহণে নৌকা ঘাটে ভিড়তে পারছে না। আবার জরুরি পণ্য পাঠাতে হলে চাক্তাই খালের মোহনা পেরিয়ে পণ্য লোড আনলোড করতে হয়। এতে পণ্য পরিবহনে খরচও বেড়ে গেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, করোনাকালে এমনিতেই ব্যবসা বাণিজ্যে ধস নেমেছে। এছাড়া চাক্তাই খাতুনগঞ্জের অবকাঠামোগত সমস্যা এবং জলাবদ্ধতার সমস্যা তো রয়েছেই। এরমধ্যে নৌপথে পণ্য পরিবহণে সংকট তৈরি হওয়ায় ব্যবসায়ীদের কপালে আরেকবার ভাঁজ পড়েছে। বর্তমানে নানামুখী সমস্যায় জর্জরিত হয়ে চাক্তাই খাল ‘চীনের দুঃখ হোয়াংহো’ নদীর মতো ব্যবসায়ীদের দুঃখে পরিণত হয়েছে। গত দুই দশকে চাক্তাই খালে দুই পাড়ে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ, পলি জমে খাল ভরাট হয়ে যাওয়া এবং তলা পাকাকরণের কারণে স্থায়ীভাবে নাব্যতা হারায় খালটি। এছাড়া কর্ণফুলী নদীতে কার্যকর ড্রেজিং না হওয়ার কারণে পানির ধারণক্ষমতা কমে গেছে। ফলে বৃষ্টি ছাড়াই চাক্তাই খাতুনগঞ্জের নিচু এলাকার দোকান গুদামে পানি প্রবেশ করছে।
চাক্তাই খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন দৈনিক আজাদীকে বলেন, সিডিএ স্লুইচ গেট নির্মাণের জন্য চাক্তাই খালের একাংশ ভরাট করে বাঁধ দেয়ার পর থেকে নৌকা চলাচল বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে। আগে অনেক বড় বড় নৌকা সহজে ঘাটে ভিড়তে পারতো। এখন তা পারছে না। কিছু অঞ্চল আছে এখনো সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না। সেখানে নৌপথই একমাত্র ভরসা। আমাদের সেইসব অঞ্চলে পণ্য পাঠাতে অনেক ভোগন্তিতে পড়তে হচ্ছে। তারা আমাদের কাছ থেকে পণ্য না নিয়ে অন্য এলাকা থেকে পণ্য কিনছেন। এতে আমরা মার্কেট হারাচ্ছি।
চট্টগ্রাম রাইচ মিলস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রফিক উল্ল্যাহ বলেন, নৌপথে পণ্য পরিবহণ কমে যাওয়ায় আমরা চরম ক্ষতির মুখে আছি। আমন মৌসুমে আমাদের চাক্তাইয়ে হাতিয়া থেকে প্রচুর পরিমাণ ধান আসে। এবার কিন্তু আমাদের বাজারে ধান আসবে বলে মনে হচ্ছে না। সেইসব অন্য জায়গায় চলে যাবে। হয়তো চাল হয়ে ঘুরে চাক্তাই খাতুনগঞ্জের বাজারে আসবে। সরাসরি ধান আনতে পারলে আমরা মিলিং করে সেগুলো বাজারে দিতে পারতাম। একইভাবে মহেশখালী, কুতুবদিয়া এবং সন্দ্বীপের ক্ষেত্রেও বিষয়টি প্রযোজ্য। সিডিএ এখন যে গতিতে স্লুইচ গেটের কাজ করছে, এতে আমরা বুঝতে পারছি না কাজ শেষ হতে কতদিন লাগবে। এমনিতে প্রতি বর্ষাকালে আমদের জলাবদ্ধতার যন্ত্রণা ভোগ করতে হয়। এখন নতুন করে যুক্ত হয়েছে নৌপথে পরিবহন সংকট। সিডিএর কাছে অনুরোধ জানাবো দ্রুত যাতে স্লুইচ গেটের কাজ শেষ করা হয়।
চট্টগ্রাম চাউল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ওমর আজম দৈনিক আজাদীকে বলেন, চাক্তাই খাল হচ্ছে চাক্তাই খাতুনগঞ্জের ব্যবসার প্রাণ। এই খাল দিয়ে শত বছর ধরে নৌপথে সারাদেশের সাথে বাণিজ্য হতো। কালের পরিক্রমায় এটি কমে এসেছে। তবে বর্তমানে সিডিএর স্লুইচ গেট নির্মাণের চাক্তাই খালের মোহনায় বাঁধ দেয়ার কারণে ঘাটে নৌকা আসতে পারছে না। অথচ আমাদেরকে সিডিএর পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, স্লুইচ গেট নির্মাণের সময় নৌপথে পণ্য পরিবহণে কোনো সমস্যা হবে না। কিন্তু বর্তমানে আমরা ঠিকই সমস্যার সম্মূখীন হচ্ছি।
খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক জামাল হোসেন বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির সাথে চাক্তাই খাতুনগঞ্জে নৌপথে ব্যবসা বাণিজ্য কমে যায়। একসময় চট্টগ্রাম নগরীর আশপাশের উপজেলাগুলোতে নৌপথে পণ্য পরিবহন হতো। তবে কিছু এলাকা নৌপথ ছাড়া কোনো অপশন নেই। নৌপথে পণ্য পরিবহনের সুবিধাও অনেক। এতে সড়কে যানবাহনের চাপ কমে। আবার নৌপথে পরিবহন খরচও কম। ট্রাকের চাহিদা বেড়ে গেলে পরিবহণও খরচ বেড়ে যায়। এটি প্রভাব পড়ে দ্রব্যমূল্যে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৯০ শতাংশ কার্যকর ফাইজারের ভ্যাকসিন
পরবর্তী নিবন্ধ৭৮৬