নৌকায় জয়ীরা আমার ডান হাত, স্বতন্ত্ররা বাম হাত : শেখ হাসিনা

স্বতন্ত্রদের সঙ্গে বৈঠক ।। নৌকা-স্বতন্ত্র বিরোধ মিটিয়ে ফেলার নির্দেশ

আজাদী ডেস্ক | সোমবার , ২৯ জানুয়ারি, ২০২৪ at ৮:২০ পূর্বাহ্ণ

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে বিজয়ীদের ডান হাত এবং স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের নিজের বাম হাত হিসেবে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল রোববার রাতে গণভবনে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের সঙ্গে বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন। বৈঠক শেষে গণভবন গেটে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা সাংবাদিকদের এ কথা জানান। সংসদ শেখার তাগিদ : দ্বাদশ সংসদের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সংসদের রীতিনীতি ও কর্মপদ্ধতি সম্পর্কে ভালোভাবে জানার তাগিদ দিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল সন্ধ্যায় গণভবনে স্বতন্ত্র এমপিদের সঙ্গে বৈঠকের প্রারম্ভিক বক্তব্যে তিনি বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাস জানতে হবে এবং সংবিধান আত্মস্থ করতে হবে। সংসদ কার্যপ্রণালী বিধি পড়তে হবে।

নতুন সংসদের প্রথম অধিবেশন বসছে আগামীকাল মঙ্গলবার। তার আগে গতকাল স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের নিয়ে এই বৈঠকে বসেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা, যিনি টানা চতুর্থবার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর ই আলম চৌধুরী বৈঠক সঞ্চালনা করেন।

এ বৈঠকের যাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে, সেই ৬২ জন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যের মধ্যে ৫৯ জনই আওয়ামী লীগ নেতা। বিএনপি ও সমমনাদের বর্জনের মধ্যে ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার আবহ সৃষ্টি করতে দলীয় প্রার্থীদের বিরুদ্ধে ভোটে দাঁড়াতে দলের কাউকে মানা করেনি আওয়ামী লীগ। সে কারণে আসনে আসনে নৌকার বিপক্ষে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামেন বিভিন্ন পর্যায়ের আওয়ামী লীগ নেতারা। ৪৬টি আসনে নৌকাকে হারতে হয় স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কাছে।

বৈঠকের শুরুতে স্বতন্ত্র এমপিদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের সংসদ ওয়েস্ট মিনিস্টার টাইপ পার্লামেন্ট। সংসদ প্র্যাকটিস ভালো করে জানতে হবে।

এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয় পেয়েছে ২২৩টি আসনে। তাদের শরিক বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল পেয়েছে একটি করে আসন। আওয়ামী লীগের সমর্থনে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি জিতেছে একটি।

স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জাতীয় পার্টিও। গত দুটি সংসদের প্রধান বিরোধী দলটিকে ছাড় দিয়ে ২৬টি আসনে নৌকার প্রার্থী তুলে নিয়েছিল আওয়ামী লীগ। কিন্তু ১৪টিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে লাঙ্গলের প্রার্থীকে হারিয়ে দেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা। রেকর্ড সংখ্যক স্বতন্ত্র প্রার্থীর জয় এবং সংসদে দ্বিতীয় বৃহত্তম দল জাতীয় পার্টির আসন সংখ্যা ১১টিতে নামার পর সংসদে বিরোধী দল কারা হবে, এ নিয়েও দেখা দেয় প্রশ্ন। তবে শেষ পর্যন্ত জাতীয় পার্টির নেতা জিএম কাদেরকে বিরোধীদলীয় নেতা এবং আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে উপনেতা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী।

স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা জোট করলে সংরক্ষিত নারী আসনের মধ্যে ১০টি তারা পাবে। স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা সংরক্ষিত মহিলা সংসদ সদস্য মনোনয়নে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে দায়িত্বভার অর্পণ করেছেন।

নৌকাস্বতন্ত্র বিরোধ মিটিয়ে ফেলার নির্দেশ : দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নৌকা এবং স্বতন্ত্রভাবে বিভিন্ন প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের নিজেদের মধ্যে বিরোধ মিটিয়ে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন দলটির সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল বৈঠকে তিনি এ নির্দেশনা দেন। বৈঠক শেষে গণভবন গেটে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গণমাধ্যমকে এ কথা বলেন।

সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্যের বিষয়ে কাদের বলেন, সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাদের মনোনীত করবেন তাদের প্রতি সমর্থন থাকবে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের।

ফরিদপুর থেকে নির্বাচিত স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য এ কে আজাদ বলেন, আমরা তো সবাই চেয়েছি, দল থেকে আমরা নৌকা পাইনি সবাই। আমরা দলের বিভিন্ন পদে আছি, বিভিন্ন দায়িত্বে আছি। আমরা আওয়ামী লীগেরই লোক। স্বতন্ত্র হলেও অনেক জায়গায় দেখা যাচ্ছে, আমরা আওয়ামী লীগের পদে আছি, আবার একদিকে স্বতন্ত্র। এলাকায় আমাদের কাজকর্ম করতে সমস্যা হচ্ছে। এজন্য আমরা যেহেতু দলের মধ্যে আছি সেজন্য আমাদের একত্রিত করা হোক।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, স্বতন্ত্র হিসেবেই তোমরা কাজ করো। আমার এখানে কোনো সমস্যা হবে না। কারণ এটা (নৌকায় বিজয়ী) আমার ডান হাত, এটা (স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচিত) আমার বাম হাত। তোমরা এটাও আমার, এইটাও আমার।

পূর্ববর্তী নিবন্ধস্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা স্বতন্ত্রই থাকবে : কাদের
পরবর্তী নিবন্ধ‘লোভনীয়’ প্রস্তাব, গ্রহণ করতে পারছে না চসিক