নিউজপেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (নোয়াব) সম্মাননা পেল দৈনিক আজাদী। ৫০ বছরের বেশি সময়ের দীর্ঘ পথ অতিক্রম করা পত্রিকা দৈনিক সংবাদ, দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক আজাদী এবং দৈনিক পূর্বাঞ্চলকে এবং ২৫ বছরের পথ অতিক্রম করা দৈনিক মানবজমিন এবং দৈনিক প্রথম আলোকে নোয়াব এ সম্মাননা প্রদান করে। এ উপলক্ষে গতকাল ঢাকার গুলশান ক্লাবে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। দৈনিক আজাদীসহ সম্মাননা পাওয়া পত্রিকাগুলোকে অভিনন্দন জানান তিনি। এ ধরনের উদ্যোগ নেওয়ার জন্য নোয়াবকেও অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, যেসব পত্রিকা ৫০ বছর অতিক্রম করেছে তারা দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনসহ সার্বিক উন্নয়নে অনন্য ভূমিকা রেখেছে।
ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, সংবাদপত্র গণতন্ত্রের অভিভাবক। বস্তুনিষ্ঠ সমালোচনাকে গ্রহণ করতে হবে। সংবাদপত্র প্রকাশের মূল লক্ষ্য জনমত গঠন ও জনগণকে সচেতন করা। সংবাদমাধ্যমকে সেখান থেকে সরে আসলে চলবে না। দেশ স্বাধীন হওয়ার ৫৩ বছর পার হয়েছে। সেখানে গণমাধ্যমের অনেক বড় ভূমিকা রয়েছে। তিনি সংবাদের বস্তুনিষ্ঠতার ওপর গুরুত্বারোপ করে ছয়টি বিশেষ দিকে সজাগ থেকে সংবাদ পরিবেশনের আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী আরাফাত এমপি বলেন, গণমাধ্যমকে সরকার নিয়ন্ত্রণ করতে চায় না। সরকার স্বাধীন সাংবাদিকতাকে উৎসাহিত করে। তবে অবশ্যই তথ্যনির্ভর ও বস্তুনিষ্ঠ সমালোচনা হতে হবে। ভুল তথ্য দিয়ে জনমানুষকে বিভ্রান্ত করা সংবাদমাধ্যমের দায়িত্বশীল আচরণ হতে পারে না। এতে শুধু দেশই নয়, একই সাথে সংবাদ মাধ্যমও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তিনি সম্মাননা পাওয়া পত্রিকাগুলোকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, দেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা আছে। ডেটাভিত্তিক তথ্য উপাত্ত নিয়ে যে সংবাদ প্রকাশ করুন। সমালোচনা করুন। সত্য সমালোচনা গ্রহণ করার মানসিকতা সরকারের রয়েছে।
নোয়াবের সভাপতি এ কে আজাদ এমপির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে দৈনিক সংবাদের ব্যারিস্টার নিহাদ কবীর, দৈনিক ইত্তেফাক সম্পাদক তাসমিমা হোসেন, দৈনিক মানবজমিনের সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, দৈনিক প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান, দৈনিক আজাদীর নির্বাহী সম্পাদক শিহাব মালেক বক্তব্য রাখেন। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন নোয়াবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মাহফুজ আনাম।
সভাপতির বক্তব্যে এ কে আজাদ এমপি তথ্য প্রতিমন্ত্রী আলী আরাফাতকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করার সময় আমাদের সঙ্গে আলোচনা করার জন্য অনেকবার চিঠি দিয়েছি। কিন্তু আমাদেরকে এক রকম অন্ধকারে রেখেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করা হয়েছে। তিনি বলেন, বিষয়টি আমাদের জন্য অত্যন্ত দুঃখের এবং লজ্জারও বটে। আমরা তো সরকারের প্রতিপক্ষ নই। আমরা সরকারকে সবসময় সাহায্য করতে চাই এবং করে যাব। আমরা এমন দেশ গড়ে তুলতে চাই, যে দেশ গড়তে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বপ্ন দেখেছিলেন।
অনুষ্ঠানে মানবজমিনের সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী বলেন, আমরা বলতে গেলে সমস্যা, না বলে যাবো কোথায়? সাদাকে সাদা, আর কালোকে কালো বলাই ভালো। আইন কানুন করে আমাদের আটকে রাখা হয়েছে।
এ সময় প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান প্রথম আলোর ২৫ বছর এবং নিজের ৫২ বছরের সাংবাদিকতা জীবনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, এক জীবনে একটি দেশের মানুষকে জেগে উঠতে দেখলাম, সঙ্গে যুক্ত থাকলাম নতুন করে উত্থান পতনের মধ্য দিয়ে। এই সময়ের মধ্যে ৫০ থেকে ৬০ বছরের সাংবাদিকতা জীবনের কত কিছু যে মনে পড়ে, কত ঘটনা কত মানুষ কত সাফল্য, ব্যর্থতা দুঃখ–কষ্ট, আনন্দ ও বেদনা দেখেছি।
মতিউর রহমান বলেন, নিরপেক্ষ সাংবাদিকতা বাংলাদেশের জন্য তো বটেই, এটা গোটা বিশ্বের জন্যই চ্যালেঞ্জ। একটা কঠিন সত্য, আমরা নানা অসুবিধা বাধা–বিপদের মধ্যেও সাংবাদিকতার জন্য আমাদের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। সাহসিকতার সঙ্গে কাজ করে যাওয়াটাই হলো আমাদের দায়িত্ব।
ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম বলেন, সংবাদপত্র এবং সাংবাদিকদের আটকানোর জন্য অন্তত নয়টি আইন হয়েছে, অথচ টাকা পাচারকারী এবং লুটেরাদের আটকাতে অত আইন নেই। তিনি বলেন, পুলিশের সাবেক আইজি বেনজির প্রসঙ্গসহ বহু দুর্নীতিবাজের ব্যাপারে সংবাদ মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পরই সরকারের টনক নড়ছে। দেশের বেশিরভাগ সংবাদপত্রই স্বাধীনতা এবং মুক্তযুদ্ধের স্বপক্ষ শক্তি, সরকারের সহায়ক শক্তি। কিন্তু সরকার সেটা সে দৃষ্টিতে দেখে বলে আমরা বিশ্বাস করতে পারি না। বেনজীরের দুর্নীতির কথা সাংবাদিকেরা বহু আগেই জানতেন, কিন্তু এতো মহাশক্তিশালী একজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে তখন সাংবাদিকেরা লিখতে পারেন নি।
সম্মাননা গ্রহণ করে আজাদীর নির্বাহী সম্পাদক শিহাব মালেক বলেন, বৃহত্তর চট্টগ্রামের অভাব অভিযোগ এবং সমস্যা ও সম্ভাবনার কথা তুলে ধরার জন্য আমার দাদা আলহাজ্ব আব্দুল খালেক ইঞ্জিনিয়ার দৈনিক আজাদী প্রকাশ করেছিলেন। আজ থেকে ৬৪ বছর আগে শুরু হয়েছিল দৈনিক আজাদীর পথ চলা। আজাদী স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম দৈনিক হিসেবেও স্বীকৃতি পেয়েছে। মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয় লাভের পর ১৯৭১ সালে ১৭ ডিসেম্বর সকালে দেশে একমাত্র সংবাদপত্র হিসেবে প্রকাশ হয়েছিল দৈনিক আজাদী। সেদিন আমাদের ব্যানার হেডলাইন ছিল ‘জয় বাংলা, বাংলার জয়’। প্রকাশনার শুরু থেকে আজাদী মাটি ও মানুষের কথা বলে আসছে। সামনের দিনগুলোতেও আজাদী মানুষের পাশে থাকার ব্যাপারে অঙ্গীকারাবদ্ধ। দৈনিক আজাদীকে সম্মাননা দেওয়ায় আজাদী পরিবারের পক্ষ থেকে নোয়াবের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতসহ বিশিষ্টজনরা উপস্থিত ছিলেন।