নোটিশ না দিয়ে চসিকের উচ্ছেদ অভিযান

চকবাজারে ব্যবসায়ীদের বাধাথানায় বসে সমঝোতা

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ১০ অক্টোবর, ২০২১ at ৬:১৪ পূর্বাহ্ণ

নোটিশ না দেয়ায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) উচ্ছেদ অভিযানে বাধা দিয়েছে ব্যবসায়ীরা। এ সময় ক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীদের তোপের মুখে পড়েন অভিযানে নেতৃত্ব দেয়া চসিকের উপ-প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মোরশেদুল আলম চৌধুরী। গতকাল শনিবার বিকেল ৩টার দিকে নগরীর গোলজার মোড়ে এ ঘটনা ঘটে। বিক্ষোভকারীরা সড়কে অবস্থান নেয়ায় চট্টেশ্বরী রোডে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে প্যানেল মেয়র গিয়াস উদ্দিনসহ সংশ্লিষ্টরা চকবাজার থানায় বসে সমঝোতা করেন ব্যবসায়ীদের সঙ্গে। এছাড়া অভিযান চলাকালে সেখানে একটি বৈদ্যুতিক খুঁটিতে আগুন ধরে যায়। চন্দনপুরা ফায়ার সার্ভিসের একটি গাড়ি আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে।
চসিক সূত্রে জানা গেছে, নিয়মিত রুটিন ওয়ার্ক হিসেবে সড়ক ও ফুটপাত থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে দুপুরে কাজীর দেউড়ি মোড় থেকে শুরু হয় অভিযান। পরে অভিযান চলে ওয়াসা মোড় থেকে পল্টন রোড পর্যন্ত। সবশেষে চট্টেশ্বরী মোড় থেকে অভিযান শুরু করে উচ্ছেদকারী দল গোলজার মোড়ে পৌঁছে। গোলজার টাওয়ারের বিপরীতে চট্টেশ্বরী রোডে ওরিয়েন রেস্টুরেন্ট, হাজী বিরিয়ানি, ঢাকাইয়া বাড়িসহ চারটি রেস্টুরেন্টের সাইনবোর্ড স্কেভেটর দিয়ে ভেঙে দেয়া হয়। এসময় রেস্টুরেন্টের মালিক-কর্মচারীরা এবং চট্টেশ্বরী রোডে উচ্ছেদকৃত অন্য স্থাপনার মালিকগণ জড়ো হয়ে বাধা দেয় অভিযানে।
ব্যবসায়ীরা দাবি করেন, তারা দোকান ভাড়া নিয়ে ব্যবসা করছেন। দোকান ফুটপাত বা সড়কের জায়গা দখল করে নির্মাণ করলে তা মূল মালিকই জানবেন। তাছাড়া উচ্ছেদের বিষয়ে নিয়ম মেনে কোনো ধরনের নোটিশও দেয়া হয়নি তাদের।

একপর্যায়ে সবাই সড়কে অবস্থান নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে। এতে চট্টেশ্বরী রোডে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। চকবাজার থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে সরিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীদের। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছেন প্যানেল চসিকের মেয়র গিয়াস উদ্দিন। পরে তিনিসহ ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা চকবাজার থানায় বসে সৃষ্ট পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করে সমাধানে পৌঁছান। এক্ষেত্রে ভবিষ্যতে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করলে আগে থেকে ব্যবসায়ীদের নোটিশ দেয়া হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়।
ওরিয়ন রেস্টুরেন্টের স্বত্ত্বাধিকারী ফারুল আল মামুন জুনায়েদ দৈনিক আজাদীকে বলেন, আমরা কোনো নোটিশ পাইনি। তাছাড়া দোকানগুলো তো জমিদারের আন্ডারে। আমরা তো কেবল ভাড়া নিয়েছি। যিনি অভিযান চালাচ্ছেন তাকে বার বার অনুরোধ করে বলেছি, জমিদার আসা পর্যন্ত যেন একটু সময় দেন। কিন্তু তিনি সে কথা শুনেননি। আমাদের যে সাইনবোর্ডগুলো ভেঙে দেয়া হয়েছে তা এক লাখ টাকার উপরে। ত্রিশ মিনিট সময় দিলে সেটা আমরা নিজেরাই খুলে নিতে পারতাম। সময় দেয়ার জন্য কেবল পায়ে ধরা বাকি ছিল। তারপরও সময় দেননি।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চসিকের উপ-প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মোরশেদুল আলম চৌধুরী আজাদীকে বলেন, কাজীর দেউড়ি মোড় থেকে গোলজার মোড় পর্যন্ত শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেছি। চট্টেশ্বরী রোডে একটা নালা ছিল। সেটা খুঁজতে গিয়ে দেখি, বিরিয়ানি হাউজগুলোর ডেকচি নালার উপর লোহার জালি দিয়ে বসানো। সাইনবোর্ডগুলো দেয়া হয়েছে দোকান থেকে ১০ ফুট দূরে রাস্তার পাশে। মার্কেটের ভেতর সিটি কর্পোরেশনের নালা। সেখানে আমরা স্কেভেটর দিয়ে সাইনবোর্ড ভেঙে দিই। তারপরও দেড়ফুট মত নালা দোকানের ভেতর আছে। পরে গোলজার মোড়ে তারা আমাদের উচ্ছেদ অভিযানে হামলা করে।
চসিকের এ কর্মকর্তা বলেন, বিষয়টি সাথে সাথে মেয়র মহোদয়কে জানিয়েছি। তিনি বলেছেন, মামলা করার জন্য। থানায়ও আসি মামলা করতে। আমাদের প্যানেল মেয়রও আসেন। পরে ছেলেগুলো ক্ষমা চায়। শেষে আর মামলা করি নাই। বৈদ্যুতিক খুঁটিতে আগুন লাগা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেখানে তো আমরা কোনো কাজ করিনি। আমাদের উপর দোষ চাপানোর চেষ্টা হচ্ছে।
প্যানেল মেয়র গিয়াস উদ্দিন বলেন, চকবাজারে কিছু ভুল বুঝাবুঝি হয়েছে। বসে সেটা সমাঝোতা করেছি, সমাধান করেছি। তিনি বলেন, আমাদের ধারাবাহিক উচ্ছেদ অভিযান চলছে। নিয়ম হচ্ছে, উচ্ছেদ অভিযানের আগে নোটিশ দিয়ে জানানো। এখানে ব্যবসায়ীরা নোটিশ দেয়া হয়নি বলে জানিয়েছে। সেটা নিয়ে বাকবিতণ্ডা হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যাদের স্থাপনা তাদেরও কিছু ভুল আছে। আমাদের নোটিশ না দেয়ায়ও ভুল আছে। যেহেতু সিটি কর্পোরেশন প্রশাসন তাই আমাদেরও নিয়ম মেনে চলতে হবে। কি সমাধান হয়েছে জানতে চাইলে বলেন, সেখানে যদি অবৈধ কোনো স্থাপনা থাকে সেটা উচ্ছেদ করা হবে। সেক্ষেত্রে তাদের আগে নোটিশ দেয়া হবে।
এ বিষয়ে চকবাজার থানার ওসি ফেরদৌস জাহান বলেন, সিটি কর্পোরেশন রুটিন ওয়ার্ক হিসেবে উচ্ছেদ অভিযান চালায়। দোকান মালিকপক্ষ এতে বাধা দেয়। এক্ষেত্রে দোকান মালিকরা বলেন, তাদের নোটিশ দেয়া হয়নি। আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি বুঝার চেষ্টা করি। পরে মেয়র মহোদয়ের নির্দেশে প্যানেল মেয়রের উপস্থিতিতে মালিকক্ষসহ সবার সঙ্গে বসে বিষয়টি সমাধান করি। তিনি বলেন, সাধারণত বড় ধরনের কোনো অভিযান হলে ম্যাজিস্ট্রেট থাকে এবং আমাদেরকে অবহিত করা হয়। আমরাও সহযোাগিতা করি। তবে নিয়মিত যে কাজ সেখানে আমাদের সবসময় বলা হয় না। আজকের যে অভিযান সেটাও নিয়মিত কাজের অংশ হওয়ায় আমাদের বলেনি বলে জানিয়েছে। ভবিষ্যতে অভিযান চালানোর ক্ষেত্রে আমাদের অবহিত করার জন্য বলেছি।
বৈদ্যুতিক খুঁটিতে আগুন লাগা প্রসঙ্গে চন্দনপুরা ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার শহীদুল ইসলাম আজাদীকে বলেন, খুঁটিতে ইন্টারনেটের তার ছিল। সেখানে বৈদ্যুতিক সংযোগ দিতে গিয়ে শর্টসার্কিট থেকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। শুধু তার পুড়ে গেছে। অন্য কোনো ক্ষতি হয়নি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধশাহ আমানতে বসছে পিসিআর ল্যাব
পরবর্তী নিবন্ধকাদের চৌধুরীর যত ‘কীর্তি’