যাত্রীবেশেই উঠেছিল গাড়িতে। সৌদিয়া পরিবহনের একটি বাসে চলন্ত অবস্থায় দুর্ধর্ষ ডাকাতি করেছে সংঘবদ্ধ সশস্ত্র ডাকাতদল। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়ার ফাঁসিয়াখালী পাহাড়ি ঢালায় পৌঁছলে অস্ত্রের মুখে চালক, হেলপার ও যাত্রীদের জিম্মি করে। চালকের আসনে বসে এক ডাকাত বাসটির নিয়ন্ত্রণ নেয়। এরপর যাত্রীদের সব কেড়ে নেয় তারা। গতকাল শুক্রবার ভোর রাত সাড়ে তিনটার দিকে মহাসড়কের চকরিয়ার ফাঁসিয়াখালী পাহাড়ি ঢালা থেকে শুরু করে চকরিয়ার সীমান্তবর্তী ইউনিয়ন খুটাখালীর ফুলছড়ি নতুন অফিস পর্যন্ত এই ডাকাতির ঘটনা ঘটে। বাসটিতে সাতজন ডাকাত ছাড়াও ৩৭ জন যাত্রী ছিলেন। এসব যাত্রীর মধ্যে ছিলেন কেউ ব্যবসায়ী, কেউ পর্যটক বা চাকরিজীবী। এ সময় বাধা দেওয়ার চেষ্টা করায় ডাকাতের গুলিতে দুজন বিদ্ধ হন এবং মারধরে আরো অন্তত ১৫ যাত্রী আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ দুজনকে প্রথমে রামু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে, পরে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তবে পেটে গুলিবিদ্ধ হওয়ায় একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ডাকাতের গুলিতে আহতরা হলেন টেকনাফ উপজেলার সাবরাং ইউনিয়নের পানছড়ি গ্রামের এজাহার আহমদের পুত্র আবদুল্লাহ আল মামুন (২৭)। একটি গুলি তার পেটে বিদ্ধ হয়। হাতে গুলিবিদ্ধ হন রাকিব উদ্দিন (৩০) নামে এক যাত্রী। তিনি চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানার হিলভিউ এলাকার বাসিন্দা। মারধরে আহত অন্য যাত্রীদের পরিচয় তাৎক্ষণিক পাওয়া যায়নি। তবে সুব্রত দাশ নামের একজন আহত হয়েছেন বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে।
যাত্রীরা জানান, সংঘবদ্ধ সশস্ত্র ডাকাতদল অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ওই বাসের যাত্রীদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ নগদ টাকা, অন্তত ২০টি মোবাইল ও চার নারী যাত্রীর কাছ থেকে স্বর্ণালঙ্কার লুট করে।
এ ঘটনায় চকরিয়া থানায় একটি মামলা রুজু করেছেন চট্টগ্রামের আন্দরকিল্লা এলাকার মনু খানের পুত্র বিল্লাল হোসেন জনি (২৬)। তিনি ডাকাতির ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এবং ওই বাসের যাত্রী।
মামলার বাদী জনি আজাদীকে জানান, গুলিবিদ্ধ রাকিব ও সুব্রতসহ সাত বন্ধু সেন্টমার্টিন যাওয়ার উদ্দেশ্যে চট্টগ্রামের সিনেমা প্যালেস থেকে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে সৌদিয়া পবিহনের যাত্রীবাহী বাসে (চট্টমেট্রো-ব-১১-১১২৫) উঠেন। একই সময় কাউন্টার থেকে চার নারীসহ মোট ৩৩ জন যাত্রী উঠেন। এরপর বাসটি কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। কিন্তু পথিমধ্যে লুঙ্গি পরিহিত আরো সাতজন যাত্রী নতুন ব্রিজ কাউন্টার থেকে উঠেন। এরপর তাদের বাসটি কক্সবাজারের পথে চলতে থাকে। তখন যাত্রীদের সিংহভাগ ঘুমিয়ে ছিলেন। এই অবস্থায় মহাসড়কের চকরিয়ার ফাঁসিয়াখালী পাহাড়ি ঢালায় বাসটি আসামাত্র সশস্ত্র ডাকাতদল অস্ত্রের মুখে চালক-হেলপার ও যাত্রীদের জিম্মি করে ফেলে। চালকের আসনে বসে বাসের নিয়ন্ত্রণ নেয় এক ডাকাত। আর বাসটি চলন্ত অবস্থায় ডাকাতি করে ডাকাতেরা। এ সময় বাধা দেওয়ার চেষ্টা করায় ডাকাতের গুলিতে দুজন আহত হন। এর মধ্যে মামুন নামের একজনের পেটে এবং তার (বাদী) বন্ধু রাকিবের হাতে বিদ্ধ হয় গুলি। এছাড়া ধারালো অস্ত্রের আঘাতসহ বিভিন্নভাবে মারধরে আরো অন্তত ১৫ যাত্রী কম-বেশি আহত হন। তারাও প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।
তিনি জানান, বাসটি চলন্ত অবস্থায় চকরিয়ার সীমান্তবর্তী ইউনিয়ন খুটাখালীর ফুলছড়ি নতুন অফিস পর্যন্ত গিয়ে থামে এবং লুঠকৃত টাকা, মোবাইল ও স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে বাস থেকে নেমে দ্রুত সটকে পড়ে ডাকাতদল। তখন বাসের ভেতর যাত্রীরা কান্নাকাটি করতে থাকেন। আহতদের হাসপাতালে নেওয়ার জন্য বললে চালক গাড়িটি রামু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানে আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত দুজনকে প্রেরণ করা হয় কক্সবাজার সদর হাসপাতালে।
গুলিবিদ্ধ আবদুল্লাহ আল মামুনের বড় ভাই কামরুল ইসলাম শাকিল আজাদীকে জানান, কক্সবাজার সদর হাসপাতাল থেকে তার ভাইকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। আহত মামুন গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে চট্টগ্রামের চান্দগাঁও আবাসিকের বাসায় থাকেন। সেখান থেকে গত রাতে বাড়ি ফিরছিলেন তিনি।
মামলার বাদী বিল্লাহ হোসেন জনির মতে, সশস্ত্র ডাকাতদল বাসটির ৩৩ জন যাত্রীর কাছ থেকে অন্তত ২০টি মোবাইল, নগদ কয়েক লাখ টাকা ও চার নারী যাত্রীর কাছ থেকে স্বর্ণালঙ্কার কেড়ে নেয়। মোবাইলগুলোর মধ্যে আইফোনসহ অনেক দামি ব্রান্ডের ফোনও ছিল।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা চকরিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. নুরেখোদা সিদ্দিকী আজাদীকে জানান, কী পরিমাণ টাকা, মোবাইল, অলঙ্কার খোয়া গেছে তা বিস্তারিত তদন্তের পর জানা যাবে।
চকরিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আশরাফ হোসেন আজাদীকে জানান, ঘটনার বিস্তারিত জানার জন্য বাস সংশ্লিষ্ট তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। জব্দ করা হয়েছে ডাকাতির শিকার যাত্রীবাহী সৌদিয়া পরিবহনের বাসটি।