নেপালে নিরাপত্তার দায়িত্বে সেনা, রাস্তায় রাস্তায় টহল

সাড়া দেননি বালেন্দ্র, সুশীলাকে নেপালের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে চায় জেন-জি

| বৃহস্পতিবার , ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ at ৭:৪৫ পূর্বাহ্ণ

নেপালে প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলির পদত্যাগের পরও পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়ায় দেশের সার্বিক নিরাপত্তার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে সেনাবাহিনী। নতুন সরকার গঠন না হওয়া পর্যন্ত দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ভার নিয়েছে তারা। মঙ্গলবার স্থানীয় সময় রাত ১০টার পরই সেনারা বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান নেয়। জারি করা হয়েছে কারফিউ। নেপালের পত্রিকা ‘কাঠমাণ্ডু পোস্ট’ জানায়, বুধবার ভোর সকাল থেকে কাঠমাণ্ডুর রাস্তা ছিল মোটামুটি জনশুন্য। সংবেদনশীল এলাকাগুলোতে টহল দিচ্ছে সেনাবাহিনী। দেশে লুটপাট চালালে, ভাঙচুর করলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে সেনাবাহিনী। দেশের নাগরিকদেরও সহযোগিতা চেয়েছে তারা। নেপাল সরকারের প্রধান সচিবালয় ভবন নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে সেনাবাহিনী। বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশে সেনাবাহিনীর জেনারেল সিগদেল অশোকরাজ আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ‘প্রতিবাদ কর্মসূচি ছেড়ে শান্তিপূর্ণ সমাধান খুঁজে পেতে আলোচনায় বসুন। কঠিন পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে হবে আমাদের।’

সামরিক বাহিনী এখন জেনজি বিক্ষোভকারীদের আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছে। ছাত্রনেতারা তাদের দাবিনামা প্রস্তুত করছে। তরুণ বিক্ষোভকারীরা প্রথমে কাঠমান্ডুর মেয়র বালেন্দ্র শাহকে অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। তবে আন্দোলনকারীদের ডাকে কোনো সাড়া দেননি বালেন্দ্র। ফলে এখন তার বদলে সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কির হাতে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব তুলে দিতে চান তারা।

এক খবরে বলা হয়, কার্কি জেনজি বিক্ষোভকারীদের প্রতিনিধি হয়ে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনে সেনাবাহিনীর সঙ্গে আলোচনায় বসতে যাচ্ছেন। নিজেদের মধ্যে ৬ ঘণ্টার টানা বৈঠক শেষে বিক্ষোভকারীরা সাবেক এ নারী প্রধান বিচারপতিকেই তাদের প্রতিনিধি ঠিক করেছেন বলে জানা গেছে।

সেনাবাহিনীর সঙ্গে আলোচনার আগে নিজেদের দাবিদাওয়াও তুলে ধরেছে জেনজি বিক্ষোভকারীরা। এসব দাবির মধ্যে আছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ওলি ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ যারা বিক্ষোভে গুলি চালিয়ে হত্যার নির্দেশ দিয়েছিল তাদের যত দ্রুত সম্ভব গ্রেপ্তার করা, কেউ দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবে না এমন বিধান যুক্ত করাসহ সংবিধান সংশোধন, নিপীড়ন তদন্তের দায়িত্বে থাকা কমিশন সিআইএএ, বিচার বিভাগ ও মেধাভিত্তিক নিয়োগে রাজনৈতিক প্রভাব বাদ দেওয়া।

নেপালের প্রথম নারী প্রধান বিচারপতি কার্কি ২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত বিচারিক প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন। তার মেয়াদকালে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কড়া অবস্থানের জন্য সুপরিচিত ছিলেন তিনি। কৃষক পরিবারের সন্তান কার্কি ৭ ভাইবোনের মধ্যে সবার বড়, তার পরিবারের সঙ্গে নেপালের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিপি কৈরালার পরিবারের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে। কৈরালা ১৯৫৯ সাল থেকে ১৯৬০ পর্যন্ত নেপালের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন। ১৯৭২ সালে মাহেন্দ্র মোরং ক্যাম্পাস থেকে বিএ পাস করা কার্কি ১৯৭৫ সালে ভারতের বানারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পলিটিকাল সায়েন্সে এমএ শেষ করেন। পরে তিনি ১৯৭৮ সালে ত্রিভুবন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনশাস্ত্রে ডিগ্রি নেন। তিনি প্রধান বিচারপতি থাকাকালে সেসময়কার তথ্য ও যোগাযোগমন্ত্রী জয়প্রকাশ প্রসাদ গুপ্ত দুর্নীতির মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন। তার রায়ে দুর্নীতি দমন কর্তৃপক্ষের প্রভাবশালী এক প্রধান অপসারিত হওয়ার পর ‘পক্ষপাতদুষ্ট রায় দেওয়ার অভিযোগে’ সেসময় ক্ষমতাসীন নেপালি কংগ্রেস ও কমিউনিস্ট পার্টি অব নেপাল (মাওয়িস্ট সেন্টার) তাকে অভিশংসনের প্রক্রিয়া শুরু করে। এ কারণে সাময়িক সময়ের জন্য বরখাস্তও ছিলেন তিনি।

গতকাল বুধবার কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন বিমানবন্দর পুনরায় চালু হয়েছে, বেশিরভাগ বাসিন্দা কারফিউ মেনে চলায় রাজধানী অন্য দুই দিনের তুলনায় বেশ শান্ত, তার মধ্যেই পুড়তে থাকা ভবনগুলো থেকে ধোঁয়া বের হতে দেখা গেছে। দেশজুড়ে আজ বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত কারফিউ দেওয়া হয়েছে, সহিংসতা ও ভাঙচুরে জড়িতদের কঠোর শাস্তি দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে সেনাবাহিনী। তারা সহিংসতা ও লুটপাটে জড়িত ২৭ জনকে গ্রেপ্তার এবং ৩১টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারের তথ্যও দিয়েছে। কাঠমান্ডুর বিভিন্ন এলাকায় সামরিক চেকপয়েন্ট বসানো হয়েছে। কর্মকর্তারা মঙ্গলবারের বিক্ষোভের কেন্দ্রবিন্দু নিউ বানেশ্বর সড়ক দিয়ে যাতায়াতকারী যানবাহনগুলোর পরিচয়পত্র খতিয়ে দেখছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএস আলম ও সিকদারদের বিরুদ্ধে মামলা করছে দুদক
পরবর্তী নিবন্ধচান্দগাঁওয়ে ব্যবসায়ীর ছিনতাই হওয়া সাড়ে ১৪ লাখ টাকা উদ্ধার