চট্টগ্রাম মহানগর যুবদলের জন্য ‘নেতা’ খুঁজতে বছর পার করেছে কেন্দ্র! গত বছরের (২০২৪) ২০ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাতে যুবদলের চট্টগ্রাম মহানগর সাংগঠনিক কমিটি এবং মহানগরের আওতাধীন সকল থানা ও ওয়ার্ড কমিটি বিলুপ্ত করে কেন্দ্র। আজ তার এক বছর পূর্ণ হচ্ছে। কিন্তু এখনো কমিটিহীন রয়েছে বিলুপ্ত ইউনিটগুলো। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ ও হতাশা দুটোই রয়েছে নগর যুবদলের শীর্ষ থেকে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মাঝে। তবে নতুন কমিটিতে পদ না পাওয়ার ভয়ে প্রকাশ্যে কেউ বলতে রাজি হননি।
তাদের কাছে প্রশ্ন ছিল, নগরে যোগ্য নেতার অভাব নাকি কেন্দ্রের ব্যর্থতায় এক বছরেও কমিটি হয়নি। তারা বলেছেন, যোগ্য নেতার অভাব বলা যাবে না। দলের প্রতি অনুগত নেতাকর্মীও আছে। চট্টগ্রামে বিগত সময়ে যত আন্দোলন–সংগ্রাম হয়েছে সেখানে নগর যুবদলের নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণ ছিল। সাংগঠনিক কর্মসূচিও পালিত হয়েছে। এরপরও কমিটি দিতে না পারা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের ব্যর্থতা। যুবদলের বিলুপ্ত মহানগর, থানা ও ওয়ার্ড কমিটির নেতৃত্বে ছিলেন এমন একাধিক নেতার সঙ্গে কথা হয় আজাদীর। তারা জানিয়েছেন তারা হতাশ। কমিটি না থাকায় যুবদলের সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে চট্টগ্রাম শহরে। কেউ কেউ বলছেন, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। যে কোনো নির্বাচনে মাঠের কর্মী হিসেবে বিভিন্ন পর্যায়ে মূল দলের পাশাশি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলো সক্রিয় ভূমিকা রাখে। কিন্তু মহানগর কমিটি না থাকায় ‘শক্তিশালী’ অঙ্গসংগঠন হিসেবে পরিচিত যুবদল নির্বাচনকে ঘিরে প্রস্তুতি নিতে পারছে না। আবার থানা ও ওয়ার্ড কমিটি না থাকায় সাংগঠনিক তৎপরতাও কার্যত বন্ধ রয়েছে।
এ বিষয়ে নগর বিএনপির সদস্য সচিব নাজিমুর রহমান আজাদীকে বলেন, আমরা চাই সহসা মহানগর যুবদলের কমিটি দেয়া হোক। স্ট্রাকচার ছাড়া তো চলা যায় না। হয়তো কোনো কারণে এতদিন কমিটি দেয়া হয় নি। এখন আশা করবো দ্রুত দেয়া হবে। আমরাও এ বিষয়ে কেন্দ্রের সাথে কথা বলবো, যেন আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনের আগে কমিটি দেয়া হয়। তবে দেরি হলেও যাচাই–বাছাই করে কমিটি দেয়া উচিত বলে মনে করেন বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সহ–সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন। তিনি আজাদীকে বলেন, নতুন কমিটির বিষয়ে কেন্দ্র কাজ করছে। আশা করছি দ্রুত সময়ে কমিটি দিয়ে দিবে। তিনি বলেন, বিশেষ প্রেক্ষাপটে চট্টগ্রাম মহানগর যুবদলের কমিটি বিলুপ্ত হয়েছিল। তাই একটু দেরি হলেও সুচিন্তিভাবে সবকিছু হওয়া ভালো। একটু সময় লাগলেও ভালোভাবে যাচাই–বাছাই করেই কমিটি দেয়া হবে, সেভাবেই কাজ করছে কেন্দ্র। এমন না যে, কমিটি নেই বলে যুবদলের কর্মসূচি পালিত হচ্ছে না। আগের কমিটিতে যারা ছিলেন তারা এবং যুবদলের কর্মীরা কিন্তু সবগুলো কর্মসূচি পালন করছেন।
এদিকে যোগ্য নেতার অভাবে কমিটি দেয়া হচ্ছে না কীনা জানতে চাইলে যুবদলের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক নুরুল ইসলাম সোহেল আজাদীকে বলেন, ওরকম কিছু না। প্রেসিডেন্ট–সেক্রেটারি যাচাই–বাছাই করছেন। তবে এখানে দলের হাই–কমান্ডেরও সিদ্ধান্তের বিষয় আছে।
নগর যুবদলের বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি মোশাররফ হোসেন দিপ্তী আজাদীকে বলেন, কমিটি না থাকলেও গত এক বছর কোনো কর্মসূচিতে চট্টগ্রাম মহানগর যুবদলের অনুপস্থিতি ছিল না। যুবদলের প্রতিটি কর্মসূচির পাশাপাশি বিএনপির বিভিন্ন কর্মসূচিতেও যুবদল নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণ ছিল। তবে এটাও ঠিক সামনে একটা চ্যালেঞ্জিং নির্বাচন রয়েছে। বিভিন্ন প্রোপাগান্ডার মাধ্যমে বিভিন্ন অপশক্তি বিএনপির বিরুদ্ধে সেই নির্বাচনকে সামনে রেখে ষড়যন্ত্র করছে। সাংগঠনিক কাঠামো থাকলে আরো সুন্দরভাবে দলের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় থেকে যুবদল এসব ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে মাঠে থাকতে পারতো এবং দলের জন্য কাজ করতে পারত। তবে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।
নগর যুবদলের বিলুপ্ত কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. শাহেদ আজাদীকে বলেন, দলের কাছে যেটা ভালো মনে হয়েছে সেভাবেই হচ্ছে সবকিছু। তবে এর মধ্যে স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটি হয়েছে, তাদের থানা ও ওয়ার্ড কমিটিও দেয়া হয়েছে। স্বাভাবিকভাবে যুবদলের নেতাকর্মীরাও নেতৃত্বের মাধ্যমে সুসংগঠিত হওয়ার অপেক্ষা করছেন। ১৫টি থানা ও ৪৩ সাংগঠনিক ওয়ার্ডে যুবদলের অসংখ্য নেতাকর্মী আছেন, যারা বিগত আন্দোলন–সংগ্রামে রাজপথে ছিলেন এবং হামলা–মামলার শিকার হয়েছেন। তারা সবাই নেতৃত্বের অপেক্ষা করছেন, এদের অনেকই আবার পদ প্রত্যাশী। তারা সবাই হয়তো কর্মী হিসেবে দলের জন্য কাজ করছেন, কিন্তু সাংগঠনিক কাঠামোর মধ্যে থেকে কাজ করার বিষয়টি আলাদা। এটাও ঠিক সবকিছু কেন্দ্রের বিবেচনায় আছে।
জানা গেছে, নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি মহানগরের পদ প্রত্যাশী ৩২ জনের সাক্ষাৎকার নেয় কেন্দ্র। এর আগে গত বছর বিলুপ্ত করা নগর যুবদলের কমিটি গঠন করা হয় ২০১৮ সালের ১ জুন। এদিন কেন্দ্র থেকে ঘোষণা করা হয়েছিল পাঁচ সদস্যের কমিটি। এতে মোশাররফ হোসেন দিপ্তীকে সভাপতি এবং মো. শাহেদকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। পরবর্তীতে একই বছরের ৪ অক্টোবর কমিটির আকার বৃদ্ধি করে ২৩১ সদস্যে উন্নীত করা হয়। দুই বছরের জন্য গঠিত ওই কমিটি ৬ বছর সাড়ে তিন মাসেরও বেশি সময় দায়িত্ব পালন করে। দায়িত্ব পালনকালে নগরের ১৫ থানা ও ১৭টি ওয়ার্ডে আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়।
এর আগে ২০১১ সালের ১৯ নভেম্বর কাজী বেলালকে সভাপতি ও মোশোরফ হোসেন দিপ্তীকে সাধারণ সম্পাদক করে ১১ সদস্যের নগর যুবদলের কমিটি ঘোষণা করেছিল কেন্দ্রীয় সংসদ। তবে কমিটি ঘোষণার সাথে সাথেই চট্টগ্রাম বিএনপির শীর্ষ নেতাদের বিরোধিতায় ওইদিন রাতেই বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা কমিটিটি স্থগিত করতে নির্দেশ দেন। এরপর কিছুদিনের মধ্যেই সরকার বিরোধী আন্দোলনের জন্য ওই স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করা হয়। এর আগে ১৯৯৬ সালে গঠিত কমিটি ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করে।