ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর দীর্ঘ ১২ বছরের শাসনের অবসান ঘটেছে পার্লামেন্টে বিরোধীদের নতুন জোট সরকার অনুমোদন পাওয়ায় মধ্য দিয়ে। রোববার সন্ধ্যায় ইসরায়েলের পার্লামেন্ট নেসেটে নতুন সরকার গঠন নিয়ে বিতর্কের পর মাত্র ৬০-৫৯ ভোটের ব্যবধানে অনুমোদন পেয়েছে নাফতালি বেনেটের নেতৃত্বাধীন পরিবর্তনের এই সরকার।
আর নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন নেতানিয়াহুর এক সময়ের মন্ত্রী কট্টর জাতীয়তাবাদী নেতা নাফতালি বেনেট। বিরোধীদের নতুন জোটের এই প্রধানমন্ত্রী নিয়ম অনুযায়ী ২ বছর দায়িত্ব পালন করবেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী হবেন ইয়ার লাপিদ।
এখন ভোট শেষের পরপরই শপথ নেওয়ার কথা রয়েছে ইয়ামিনা পার্টির নাফতালি বেনেটের। ক্ষমতা ভাগাভাগি চুক্তি অনুযায়ী নতুন সরকারের প্রথম দুই বছর প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের কথা রয়েছে বেনেটের। তারপর পালা বদল হয়ে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার কথা রয়েছে ইয়ার লাপিদের। খবর বিডিনিউজের।
নেতানিয়াহু শুরু থেকেই এই জোট সরকারের ক্ষমতায় যাওয়া ঠেকাতে মরিয়া ছিলেন। আর এখন তাতে ব্যর্থ হয়ে তিনি আবারও খুব শিগগিরই ক্ষমতায় ফিরে আসার অঙ্গীকার করেছেন।
ইসরায়েলে ৭১ বছরের নেতানিয়াহুর জনপ্রিয়তায় সমপ্রতি দেখা গেছে ভাটার টান। যার ফলে গত দুই বছরে ইসরায়েলে চারটি পার্লামেন্ট নির্বাচন আয়োজন করতে হয়েছে। কিন্তু তারপরও নতুন সরকার গঠন করা যায়নি। কারণ, ভোটে কোনও দলই সরকার গঠনের মত পর্যাপ্ত সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। সর্বশেষ গত ২৩ মার্চের ভোটের পর নেতানিয়াহুর দল পার্লামেন্টে সবথেকে বেশি আসন পেলেও সরকার গঠনের জন্য তা যথেষ্ট ছিল না।
এ পরিস্থিতির মধ্যে নেতানিয়াহুর একসময়ের ঘনিষ্ঠজনরাসহ তার সরকারে কয়েক দফায় মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা কট্টর জাতীয়তাবাদী নেতা নাফতালি বেনেট মধ্যপন্থি দল ইয়েস আতিদের সঙ্গে জোট গড়তে রাজি হওয়ায় পরই শাসনক্ষমতা টলে যায় নেতানিয়াহুর।
এখন পার্লামেন্টে এই জোটের সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ হওয়ায় নেতানিয়াহু এখন হয়ে গেলেন বিরোধী দলের নেতা। তবে বিরোধী দলে গেলেও নতুন জোট সরকারের পতন ঘটানোর হুমকি তিনি এরই মধ্যে দিয়ে রেখেছেন।
ওদিকে, লাপিদের নতুন জোট সরকারে ডানপন্থি, মধ্যপন্থি এবং বামপন্থি; সব মতাদর্শের দলই রয়েছে। এমনকি ইসরায়েলের ইতিহাসে প্রথমবারের মত সংখ্যালঘু আরব দলগুলো থেকেও সরকারের প্রতিনিধিত্ব করতে চলেছে। ইসরায়েলে মোট জনসংখ্যার ২১ শতাংশ আরব। তাই বৈচিত্রে ভরা লাপিদের এই জোট কতদিন ঐক্য ধরে রাখতে পারবে তা নিয়ে তাই অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। তবে নতুন সরকার ফিলিস্তিনের মত সংবেদনশীল আন্তর্জাতিক বিষয়ে নিজেদের অবস্থান পরিবর্তন এড়িয়ে যেতে বড় ধরনের পরিকল্পনা করেছে। তারা আন্তর্জাতিক বিষয়ের পরিবর্তে দেশের উন্নয়নে বেশি মনযোগ দিতে চায়। ফিলিস্তিন নেতারাও অবশ্য নতুন সরকার নিয়ে খুব একটা আশাবাদী নন। বরং তারা বলেছেন, নেতানিয়াহু ও বেনেটের মধ্যে তারা কোনো পার্থক্য দেখতে পাচ্ছেন না। বেনেট নিজেও উগ্র ডানপন্থি হিসেবে পরিচিত। ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের ধারণা প্রত্যাখ্যান করে আসা এই নেতা এ বিষয়ে নিজেকে নেতানিয়াহুর চাইতেও ‘কট্টর’ হিসেবে দাবি করে থাকেন। ইসরায়েলের বড় শত্রু ইরানের বিষয়েও বেনেটের অবস্থান নেতানিয়াহুর মতই থাকবে।












