নৃত্যেই মুক্তি খোঁজে নৃত্য নিকেতন

সংস্কৃতি চর্চায় চট্টগ্রাম

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ২৫ নভেম্বর, ২০২১ at ১১:২৮ পূর্বাহ্ণ

নৃত্যে তোমার মুক্তির রূপ, নৃত্যে তোমার মায়া, বিশ্ব তনুতে অণুতে অণুতে কাঁপে নৃত্যের ছায়া; রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এ পংক্তি দুটোর সার্থকতা খুঁজে পাওয়া যায় নৃত্য নিকেতনের সৃষ্টিশীলতায়। নৃত্যেই তারা মুক্তি খোঁজে।
সব সংস্কৃতির আদি জননী হচ্ছে নাচ বা নৃত্য। নাচ সাংস্কৃতিক শিক্ষার অন্যতম মাধ্যম। ফলে গবেষণা ও শিক্ষার উপাদান হিসেবে সারা বিশ্বেই নাচের জনপ্রিয়তা রয়েছে। নাচ মানুষের মেধা ও মননকে বিকশিত করে। নাচে দেহ ভঙ্গিমার মাধ্যমে শৈল্পিকভাবে পার্থিব ও অপার্থিব সব ভাবকে মানুষ প্রকাশের সুযোগ পায়। এই প্রকাশ ভঙ্গিতে থাকে গতি ও ছন্দ। সেই গতি ও ছন্দের তালে তালে ফুটে ওঠে প্রেম, ভালোবাসা, রাগ, অনুরাগ, প্রতিবাদ। সমাজ কিংবা গল্প ইতিহাসের কথাও নাচের মাধ্যমে উঠে আসে। নাচের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা যায় জীবনের কথা, চাওয়া, পাওয়া বা না পাওয়ার কথা। সব মিলিয়ে নাচ শুধু বিনোদনমাত্র নয়। নাচ জীবনের প্রতিবিম্বও।
নৃত্য হোক পরমা প্রকৃতি, নৃত্যের সাথে একাত্মতার সাধনা; এই মন্ত্রে ২০০৯ সালে যাত্রা শুরু নৃত্য নিকেতন চট্টগ্রামের। শুরুর কথা বলতে গিয়ে নৃত্য নিকেতনের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ও প্রশিক্ষক রিয়া দাশ চায়না আজাদীকে বলেন, সেই ২০০০ সালে নাচের হাতে খড়ি হয়েছিল বড় বোন সুবর্ণা দাশের ইচ্ছা ও সহযোগিতায় নৃত্য গুরু শুভ্রা সেনগুপ্তার হাত ধরে শিশু একাডেমিতে। সেই থেকে নৃত্যে মন প্রাণ সঁপে দিয়ে পথ চলেছি। আমার পরিবার সংস্কৃতিমনা। ছোট বেলায় বড় বোনের গান শুনে বাবার আগ্রহে সংস্কৃতি চর্চা শুরু হয় আমাদের পরিবারে। যখন থেকে নাচ শিখছি তখন থেকে মনে প্রাণে চাইতাম নাচ শিখবো এবং একটা পর্যায়ে এসে এ বিদ্যাটা ছড়িয়ে দেবো অন্য অনেকের মাঝে। সেই স্বপ্নকে লালন করে দুরু দুরু বুকে মাত্র ২ জন শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু নৃত্য নিকেতন চট্টগ্রামের। ছাত্রী ছিল প্রথমে আমার ছোট বোন পিয়া ও তার বান্ধবী সৃষ্টি। বর্তমানে নৃত্য নিকেতনের শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৬০ জন। নিজের বাসায় চলছে আমার নাচের স্কুল, আমার স্বপ্নের বাস্তবায়ন।
নৃত্য নিকেতন এ পর্যন্ত চারটি গীতি নৃত্যনাট্য করেছে। এগুলো হলো ৭১ এর মা জননী, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শ্যামা, ধর্মীয় নৃত্যনাট্য নটি বিনোদিনী এবং দক্ষ যজ্ঞ। এছাড়া অভিনেতা ও পরিচালক তৌকির আহমেদ পরিচালিত সাড়া জাগানো চলচ্চিত্র হালদা ও অভিনেত্রী মৌসুমী অভিনীত পবিত্র ভালবাসায় নৃত্য নিকেতনের পরিচালক ও শিক্ষার্থীরা কাজ করেছে। চট্টগ্রামে ছোট বড় সকল মঞ্চে সফল পরিবেশনার কৃতিত্ব আছে নৃত্য নিকেতনের শিক্ষার্থীদের। চট্টগ্রাম শহর ছাড়াও ঢাকা, খুলনা, কক্সবাজার, রাউজান, ফটিকছড়িসহ বিভিন্ন জায়গায় ডাক পড়ে নৃত্য নিকেতনের। নিয়মিত টেলিভিশন চ্যানেলেও কাজ করছে সংগঠনটির শিক্ষার্থীরা।
রিয়া দাশ চায়না স্মৃতিচারণ করে বলেন, বড় বোন সবসময় বলতেন, প্রতিযোগিতায় গা ভাসিয়ে না দিয়ে নিজেকে তৈরি কর, যাতে প্রতিযোগিতার জন্য নিজেও তুমি কাউকে তৈরি করে পাঠাতে পারো। আজ আমার শিক্ষার্থীদের পরিবেশনা দেখে কেউ যখন উচ্ছ্বসিত হয়, নিজেকে কিছুটা হলেও সার্থক বলে মনে হয়।
চট্টগ্রামে নৃত্য শিল্পের সম্ভাবনা প্রসঙ্গে এ গুণী শিল্পী জানান, চট্টগ্রামে নৃত্যের সম্ভাবনা অনেক। যদি এই খাতে ভালো অনুদান কিংবা বৃত্তির ব্যবস্থা থাকে তবে নৃত্যকলার মান আরও বাড়বে। তিনি বলেন, মেয়েদের ছোট বেলায় নাচ শিখানো হয়, কিন্তু হাইস্কুলের গন্ডিতে গেলে তা বন্ধ করে দেন অভিভাবক; এটা খুবই দুঃখজনক। তাছাড়া নৃত্যকলা বিভাগ অন্য বিভাগের চাইতে একটু বেশি খরুচে। মধ্যবিত্ত পরিবারে সাধ থাকলেও সাধ্য থাকে না।
রিয়া দাশ চায়নার স্বপ্ন নৃত্য নিকেতন ছড়িয়ে পড়ুক সারা দেশে। প্রতিটি জেলায় নৃত্য নিকেতনের শাখা গড়ে উঠুক। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে নৃত্য নিকেতন এবং এ প্রতিষ্ঠান থেকে পাস করে বেরুনো শিক্ষার্থীরা এ দেশের নাম, চট্টগ্রামের মান আরও ঊর্ধ্বে তুলে ধরবে, এটাই প্রত্যাশা। তিনি নৃত্য নিকেতনকে শুধু নাচের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে সামাজিক ভাবেও এগিয়ে নিতে চান। সমাজের উন্নয়নে কাজ করতে চান। কারণ যে কোনো দেশের মানুষের এগিয়ে যাওয়ার পেছনে প্রেরণা হয়ে কাজ করে সে দেশের সংস্কৃতি। সংস্কৃতির মাধ্যমেই মানুষ বৃহৎ পরিসরে নিজেকে মেলে ধরতে পারে। সংস্কৃতির মধ্য দিয়েই একজন মানুষের যেমন, তেমনি একটি জাতির রুচিবোধেরও পরিচয় মেলে। সংস্কৃতি চর্চার মধ্য দিয়েই সংহতি, সহমর্মিতা, ভ্রাতৃত্ববোধ, সহযোগিতার বন্ধন তৈরি হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধখাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির স্মারকলিপি
পরবর্তী নিবন্ধওপিএ লিটারেসী স্কুল ছাত্রদের মাঝে শিক্ষা সামগ্রী বিতরণ