জৈষ্ঠ্যের দুপুর। পাহাড়ে ভ্যাপসা গরম। এর মধ্যে ঝাঁক ঝাঁক সুইচোরা পাখির আনাগোনা। কিছুক্ষণ পর পর ঝিরিতে গা ডুবিয়ে উঠছে। ঝিরির পাশে ৩০০ ফুট উঁচু পাহাড়। পাহাড়ের বুকে গর্ত করে বাসা বেঁধেছে প্রায় ৫০০ সুইচোরা। দেখে মনে হয় পুরো পাহাড়টি দখল করে নিয়েছে নীল লেজের এই পাখি। খাগড়াছড়ির মাটিরাঙায় দেখা মেলেছে এমন একটি পাহাড়ের।
জানা যায়, বাংলাদেশে অন্তত ৪ প্রজাতির সুইচোরা পাখির দেখা মিলে। এরা মূলত পাহাড়ি অঞ্চলে বাসা বেঁধে বাস করে। খোলা জায়গা, জলাশয় কিংবা পাহাড় ঘেঁষা ঝিরিই এদের পছন্দ। দেশের আবাসিক এ পাখি লম্বায় ৩০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। দেশে গত ৯ বছর ধরে বন্যপ্রাণী ও পাখির ছবি তুলছেন সৈয়দ আব্বাছ। তিনি জানান, নীল লেজ সুইচোরা এবং বাঁশপাতি সুইচোরা সারা দেশে দেখা যায়। নীল লেজ সুইচোরা পাখির চোখ কাজল টানা, গলা খয়েরি, বুকের ওপরটা বাদামি। এদের পেটে সবুজাভ। কোমর, লেজ ও লেজের নিচের অংশ নীলচে। লেজের আগায় লম্বা নীল সুই–পালক রয়েছে। ঠোঁট সরু ও লম্বা কালো এবং নিচের দিকে বাঁকানো। পা ও পায়ের পাতা কালচে বাদামি। স্ত্রী ও পুরুষ দেখতে একই রকম।
জঙ্গল থেকে কীটপতঙ্গ, ফড়িং, প্রজাপতি, মথ ইত্যাদি ধরে খায় এরা। মার্চ–জুন পর্যন্ত সুইচোরার প্রজননকাল। এ সময়টিতে পাখি ৩ মিটার লম্বা গর্ত করে বাসা তৈনি করে। স্ত্রী সুইচোরা দুই থেকে তিন জোড়া ডিম পাড়ে। ডিমের রং সাদা। তিন সপ্তাহ পর ডিম থেকে বাচ্চা ফোটে। এক মাসের আগে এরা উড়তে পারে না। সুইচোরা পাখি প্রায় ৬ বছর বাঁচে।
খাগড়াছড়ি বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির জানান, নীল লেজ সুইচোরাসহ তিন প্রজাতির সুইচোরা বণ্যপ্রাণী (নিরাপত্তা ও সংরক্ষণ) আইন ২০১২–এর তফশিল ১–এর রক্ষিত প্রাণী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত।












