নীল রঙে নতুন স্বপ্ন

বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আসবে শৃঙ্খলা, ষোলশহরে কাল পাইলট প্রকল্প উদ্বোধন

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ৩০ নভেম্বর, ২০২১ at ৭:০০ পূর্বাহ্ণ

পুরো এলাকার বাসা-বাড়ি একই রঙের। ওই এলাকায় নেই কোনো খোলা ডাস্টবিন ও উন্মুক্ত ড্রেন-নালা। বরং প্রতি বাড়ির সামনে আছে ঢাকনাযুক্ত ডাস্টবিন। নির্দিষ্ট করা এসব স্থান ছাড়া যেখানে-সেখানে কেউ ময়লা-আর্বজনা ফেলে না। দেয়ালচিত্রের মাধ্যমেও সচেতন করা হচ্ছে এ বিষয়ে। এরপরও কেউ ফেলার চেষ্টা করলেও তা ধরা পড়ে সিসিটিভিতে। আবার নির্দিষ্ট সময়ে এসে পরিচ্ছন্ন কর্মীরা ডাস্টবিন থেকে সংগ্রহ করে নিয়ে যায় ময়লা-আবর্জনা।
চট্টগ্রাম শহরের বর্তমান প্রেক্ষাপটে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার এমন শৃঙ্খলার গল্প শুনে মনে হতে পারে এর বাস্তবায়ন অসম্ভব। তবে বিস্ময় হলেও সত্য নগরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে ঘিরে এ স্বপ্নের বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিচ্ছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। এ লক্ষ্যে গ্রহণ করা হয়েছে একটি পাইলট প্রকল্প। প্রাথমিকভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে নগরের ৭নং পশ্চিম ষোলশহর ওয়ার্ডের নবীনগরে। আগামীকাল বুধবার এর উদ্বোধন করার কথা রয়েছে। পাইলট প্রকল্পের সাফল্য এলে পর্যায়ক্রমে পুরো শহরে এর বাস্তবায়ন করা হবে। বাংলাদেশে এ ধরনের প্রকল্প প্রথম বাস্তবায়িত হবে চট্টগ্রাম শহরে।
চসিক সূত্রে জানা গেছে, পাইলট প্রকল্পের আওতায় আসছে ৮০টি বাড়ির ৩০০ পরিবার। ইতোমধ্যে প্রতিটি বাড়ির সামনে ঢাকানাযুক্ত বিন বসানো হয়েছে। কর্পোরেশন এবং স্থানীয় কমিউনিটির দুইজন পরিচ্ছন্ন কর্মী নির্দিষ্ট সময়ে ওই বিন থেকে বাড়ির মালিকদের ফেলা গৃহস্থলী বর্জ্য সংগ্রহ করে নিয়ে যাবেন। তবে ডাস্টবিনে থাকবে পলিথিন ব্যাগ। অর্থাৎ ব্যাগে মুড়িয়ে বর্জ্যগুলো নিয়ে যাওয়া হবে। এতে ডাস্টবিনটিও অপরিচ্ছন্ন হবে না।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, নালায় ময়লা ফেলার প্রবণতা রোধ করতে নালা-নর্দমায় স্ল্যাব বসানোর কাজ চলছে। ইতোমধ্যে এর ৫০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এছাড়া আকস্মিক অগ্নিকাণ্ড মোকাবেলায় স্থাপন করা হয়েছে ১০ টি অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র। এলাকার প্রতিটি দেয়াল রাঙানো হয়েছে নীল রঙে। স্থানীয়দের সচেতন করতে দেয়ালচিত্র অংকনও শেষ হয়েছে।
প্রকল্পটির সাফল্য নিশ্চিতে তিনটি দল কাজ করবে। এর মধ্যে নবীনগর উন্নয়ন কমিটি বর্জ্য কার্যক্রম তদারকি করবেন। এছাড়া মহিলাদের নিয়ে গঠিত টিম সচেতনতা সৃৃষ্টি এবং শিশুদের নিয়ে গঠিত টিমও অন্য শিশুদের যেখানে-সেখানে ময়লা না ফেলতে উৎসাহী করবেন।
প্রকল্পটির প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, নির্দিষ্ট করে দেয়া বিন থেকে বর্জ্য সংগ্রহের পর তা ডাম্পিং করার আগে যাচাই করা হবে। কারণ গৃহস্থলী বর্জ্যে অনেক সময় এমন কিছু উপকরণ থাকে যা বিভিন্ন ভাঙারি দোকানে বিক্রিযোগ্য। ওসব বিক্রি করে যে আয় হবে তা দিয়ে ডাস্টবিনে দেয়া পলিথিন ব্যাগের ব্যয় নির্বাহ করা হবে। তাছাড়া বর্জ্যকে সম্পদে পরিণত করার জন্য রিসাইক্লিং করা হবে।
জানা গেছে, আর্ন্তজাতিক বেসরকারি সংস্থা ‘সেভ দ্যা চিলড্রেন’র অর্থায়নে ইপসার নগরে ঝুঁকি হ্রাস প্রকল্প প্রয়াস-২ এর মাধ্যমে পাইলট প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে। গতকাল সোমবার সকালে সেভ দ্য চিলড্রেন বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ওনো ভ্যান মানেন প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ইপসার প্রধান নির্বাহী মো. আরিফুর রহমান, উপ পরিচালক নাছিম বানু, সেভ দ্য চিলড্রেন এর ম্যানেজার সায়মন রহমান, সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার ওবাইদুল ইসলাম ও প্রকল্প সমন্বয়ক সানজিদা আক্তার।
সেভ দ্য চিলড্রেন বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ওনো ভ্যান মানেন বলেন, সফল হলে চট্টগ্রামসহ সারা দেশে এই কার্যক্রমের প্রতিলিপি করার সুযোগ তৈরি হবে।
প্রকল্প সমন্বয়ক সানজিদা আক্তার দৈনিক আজাদীকে বলেন, পাইলট প্রকল্পের জন্য বাছাইকৃত এলাকাটিতে নিম্ন আয়ের লোকজন বসবাস করে। এখানকার মানুষকে যুক্ত করে উন্নত বর্জ্য সংগ্রহ পদ্ধতি, পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলা এবং বর্জ্যকে সম্পদে পরিণত করার মাধ্যমে টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দৃষ্টান্ত স্থাপন করার পরিকল্পনা আছে আমাদের।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি ও কাউন্সিলর মো. মোবারক আলী দৈনিক আজাদীকে বলেন, আধুনিক ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যেই পাইলট প্রকল্প গ্রহণ করেছি। সাফল্য পেলে পর্যায়ক্রমে ৪১ ওয়ার্ডে তা কার্যকর করা হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে নির্দিষ্ট স্থান ছাড়া যেখানে-সেখানে ময়লা ফেলার প্রবণতাও বন্ধ হবে। পাশাপাশি বাসা-বাড়ি থেকে সংগৃহীত বর্জ্যের একটি অংশ ডাম্পিং করার আগেই উৎপাদনশীল খাত হিসেবে চিহ্নিত করা হবে। ডাম্পিংয়ের পর রিসাইক্লিং করে বাকি বর্জ্যকে সম্পদে পরিণত করা হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঅবিশ্বাস্য কিছুর আশায় বাংলাদেশ
পরবর্তী নিবন্ধজি কে শামীমের দুর্নীতি তদন্তে চবিতে দুদকের টিম