নীল নদ তার নাম

রিয়াজুল হক

| বুধবার , ১৮ জানুয়ারি, ২০২৩ at ৬:২৭ পূর্বাহ্ণ

তোমরা কী বলতে পারো বাংলাদেশের উপর দিয়ে প্রবাহিত নদীগুলো কোন দিক থেকে কোন দিকে প্রবাহিত হয়েছে? ঠিকই বলেছো, উত্তর দিক থেকে দক্ষিণ দিকে। বাংলাদেশের নদীগুলো দক্ষিণে বঙ্গপোসাগরে গিয়ে মিশেছে। পৃথিবীর অধিকাংশ নদীই কিন্তু উত্তর দিক থেকে দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয়। তোমরা কী এমন একটি দীর্ঘ নদীর নাম বলতে পারো যা দক্ষিণ দিক থেকে উত্তর দিকে প্রবাহিত হয়? কেউ কেউ হয়তো বলতে পারবে। হ্যাঁ, এটি পৃথিবীর দীর্ঘতম নদী। নীল নদ তার নাম। এর দু’টি উৎস আছে। শ্বেত নীলের দৈর্ঘ্য ৬,৬৫০ কিলোমিটার। শ্বেত নীল নদ আফ্রিকার মধ্যভাগের হ্রদ হতে উৎপন্ন হয়ে তাঞ্জানিয়া, ভিক্টোরিয়া হ্রদ, উগান্ডা ও দক্ষিণ সুদানের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। নীলাভ নীল নদের উৎস ইথিওপিয়ার তানা হ্রদ। শ্বেত এবং নীলাভ নিলের শ্রোতধারা সুদানের রাজধানী খার্তুমের কাছে মিলিত হয়েছে। এর পর এটি মিশরের প্রাচীন রাজধানী থিবস(বর্তমান লুঙর) এবং এক সময়ের প্রসিদ্ধ শহর মেমফিস (কায়রোর কাছে) এবং হেলিওপোলিসএর কাছ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে আলেঙান্দ্র্র্রিয়ায় গিয়ে ভূমধ্যসাগরে পড়েছে।

প্রাচীন পৃথিবীর সর্বোচ্চ স্থাপনা যা এখনও টিকে আছে, পিরামিড, কিন্তু তৈরি হয়েছে নীল নদ থেকে মাত্র ১৩ কিলোমিটার দূরে। এর কারণ কী জানো? বড় বড় পাথর খণ্ড যাতে সহজেই নদী দিয়ে বহন করা যায়। তাই নদীর কাছেই তৈরি হয়েছে পিরামিড। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় উন্মুক্ত জাদুঘর, কার্নাক মন্দির জাদুঘর, লুঙর মন্দির, আবু সিম্বল সবই কিন্ত গড়ে উঠেছে নীল নদের তীরেই। নীল নদ এবং মিশরীয়দের জীবন যেন আষ্টেপিষ্টে বাঁধা। অনেক উপকথা জড়িয়ে আছে নীলকে নিয়ে। মিশরে যেহেতু বৃষ্টিপাত খুবই কম হয় তাই উজানের বানই ছিল মিশরবাসীর জন্য আশীর্বাদ যা দু’কূল প্লাাবিত করে পলিতে আবৃত করতো ফসলের মাঠ। সেখানে ফসল উৎপন্ন হতো অনেক বেশি। সেকারণইে মিশর ছিল একটি সমৃদ্ধ দেশ। তাই এখানে হয় সভ্যতার বিকাশ। তোমরা কী বলতে পারো নদী না হয়ে নীল নদ, নদ কেন? ঠিকই বলেছো, এর কোনো শাখা নদী নেই তাই এটি নদ।

আমাদের মিশর ভ্রমণে ভ্যালি অভ দি কিংস পরিদর্শন করে আমরা নীল নদের পশ্চিম তীরের একটি হোটেলে আমাদের দুপুরের আহার গ্রহণ করি। এরপর ইঞ্জিনের বোটে করে আমরা নদের পূর্ব পাড়ে ফিরে আসি। উদ্দেশ্য ছিল দু’টি বিখ্যাত মন্দির পরিদর্শন করা।

একটি হচ্ছে কার্নাক মন্দির, অপরটি লুঙর মন্দির। মন্দির দু’টি নদের একদম তীরে। উদ্দেশ্য একটাই। মন্দিরের কলাম তৈরির জন্য যে পাথরেব খণ্ড লেগেছে সেগুলো নদের মাধ্যমেই বহন করে আনা হয়েছিল। তোমরা তো জানো জলযানে বড় বড় জিনিস পরিবহন করা সহজ এবং খরচও কিন্তু কম। এখানটায় নদীর পানি স্বচ্ছ। শান্ত প্রবাহমান নদের পানি আমরা ছুঁয়ে দেখি। আমাদের কেউ কেউ নদের পানিতে হাত মুখ ধোয়, কেউবা আবার পবিত্র মনে করে বোতলে ভরে নদের পানি নিয়ে এসেছে দেশে। নদীতে ময়লা আবর্জনা তেমন নেই বললেই চলে। তোমরাও কিন্তু কখনও নীল নদ দেখতে গেলে ময়লা আবর্জনা পানিতে ফেলবে না যেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনাসিরাবাদে শিক্ষাসামগ্রী বিতরণ
পরবর্তী নিবন্ধবিজিসি ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটি আইন বিভাগের ট্রেনিং প্রোগ্রামের সমাপনী