শরতের নীল আকাশে মাঝে মধ্যে সাদা মেঘ ভেসে বেড়ালেও চট্টগ্রাম মহানগরীর হালিশহরে ধোঁয়ার মেঘে ঢেকে যায় আকাশ। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) আউটার রিং রোড প্রকল্পে সড়কের বিটুমিন কাজের জন্য বসানো অ্যাসফল্ট প্লান্টের কালো ধোঁয়ায় পরিবেশ দূষণ চলছে। একদিকে সিটি কর্পোরেশনের বর্জ্যাগার অন্যদিকে সিডিএ’র অ্যাসফল্ট প্লান্টের ধোঁয়ায় নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার যোগাড় সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দাদের। পরিবেশ অধিদপ্তর বলছে, তারা পরিদর্শন করে ব্যবস্থা নেবেন।
সূত্রে জানা গেছে, ২ হাজার ৪২৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘চিটাগাং সিটি আউটার রিং রোড’ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। প্রকল্পের অধীনে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত ১৭ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়ক কাম বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে বলে জানিয়েছে সিডিএ।
জানা যায়, ওই প্রকল্পের সড়ক নির্মাণে বিটুমিন কাজের জন্য রিং রোডের বড়পোল সড়কের সংযোগস্থলে হালিশহর সিটি কর্পোরেশনের গার্বেজ ডাম্পিং স্টেশনের পাশেই অ্যাসফল্ট প্লান্ট বসিয়েছে সিডিএ। বর্তমানে সড়কের বেশিরভাগ কার্পেটিং কাজ শেষ পর্যায়ে। প্রকল্পের বর্ধিতাংশের কাজ চলছে।
বুধবার বিকেলে সরেজমিন দেখা গেছে, নির্মাণাধীন বে-টার্মিনালের বিপরীতে হালিশহর গার্বেজ ডাম্পিং স্টেশনের লাগোয়া স্থানে অ্যাসফল্ট প্লান্টে উপকরণ মেশানোর কাজ চলছে। আর মেশিনের ধোঁয়া থেকে সৃষ্ট কালো ধোঁয়ার কুণ্ডলিতে চারিদিক ছেয়ে গেছে। আর ধোঁয়ার মধ্যেও কাজ করছে বেশ কয়েকজন শ্রমিক। কথা হলে স্থানীয় জেলে সমীর বলেন, মেসিনটি চালু করলে এখানে আকাশ কালো ধোঁয়ায় ঢেকে যায়। সংশ্লিষ্টরাও বলছেন, কালো ধোঁয়া থেকে নির্গত কার্বন মনোঅঙাইড শুধু পরিবেশের ক্ষতি করে না, মানুষের শরীরে ক্যান্সারও সৃষ্টি করে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মাহবুবুল মতিন দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘কালো ধোঁয়া মানে, যে বস্তুটা পোড়ানো হচ্ছে, সেটি ভালো মতো পুঁড়ে না। এতে বাতাসে কার্বন মনোঅঙাইড নির্গত হয়। অনেক সময় কার্বনও থাকে। এসবের কারণে ওজোন স্তর ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে সূর্য্যের অতিবেগুনি রশ্মি মানুষের শরীরের সংস্পর্শে এলে ত্বকের ক্যান্সারসহ নানা রোগ হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।’
সিডিএর প্রকৌশলী ও আউটার রিং রোড প্রকল্পের উপ-প্রকল্প পরিচালক রাজীব দাশ বৃহস্পতিবার দৈনিক আজাদীকে বলেন. ‘বর্তমানে প্রকল্পে বিটুমিনের কাজ তেমন একটি হচ্ছে না। অ্যাসফল্ট প্লান্টটি মাঝে-মধ্যে চলে। আমাদের পরিবেশগত বিষয়গুলো মনিটরিং করার জন্য একটি টিম রয়েছে। তারা এসব দেখভাল করেন। এখন পরিবেশগত কোন সমস্যা হয়ে থাকলে, বিষয়টি খতিয়ে দেখতে হবে।’
এ ব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মহানগর কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মিয়া মাহমুদুল হক দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘কালো ধোঁয়ার মধ্যে এসপিএম (সাসপেন্ডেড পার্টিকুলেট ম্যাটার) ২০০পিপিএম মাত্রার অধিক হলে পরিবেশ আইন ভঙ্গ হয়। আমরা হালিশহরের ওই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় আইনগত পদক্ষেপ নেবো।’