শিক্ষা, সাহিত্য ও সমাজসেবায় একজন কৃতী ও বরেণ্য ব্যক্তিত্ব নীলিমা ইব্রাহিম। নারী উন্নয়নের পাশাপাশি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বুদ্ধিবৃত্তিক ও মানবকল্যাণমূলক বিভিন্ন সংগঠনের সাথে যুক্ত থেকে সমাজ উন্নয়নে বিশেষ অবদান রেখেছেন। আজ তাঁর ১৮তম মৃত্যুবার্ষিকী।
নীলিমা ইব্রাহিমের জন্ম ১৯২১ সালের ১১ অক্টোবর বাগেরহাটের মূলঘর গ্রামে। খুলনা করোনেশন বালিকা বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক, কলকাতা ভিক্টোরিয়া ইনস্টিটিউট থেকে উচ্চ মাধ্যমিক, স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে বি.এ.বি.টি এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় এম.এ পাস করেন তিনি। মেধাবী নীলিমা কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হন প্রাতিষ্ঠানিক সকল পরীক্ষায়। তিনিই প্রথম নারী যিনি কৃতী শিক্ষার্থী হিসেবে ‘বিহারীলাল মিত্র গবেষণা’ বৃত্তি পেয়েছিলেন। ১৯৫৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচ.ডি ডিগ্রি অর্জন করেন নীলিমা ইব্রাহিম। তাঁর গবেষণার বিষয় ছিল ‘সামাজিক ও রাজনৈতিক পটভূমিকায় ঊনবিংশ শতাব্দীর বাংলা নাটক’। তাঁর কর্মজীবনের সূচনা কলকাতার লরেটো হাউসে লেকচারার হিসেবে। পরবর্তী সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ও সংস্কৃত বিভাগে যোগ দেন। একই বিশ্ববিদ্যালয়ে রোকেয়া হলের প্রাধ্যক্ষ হিসেবেও নিযুক্ত ছিলেন। প্রায় এক বছর বাংলা একাডেমির অবৈতনিক মহাপরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন।
নীলিমা ইব্রাহিম ছিলেন স্থিতধী গবেষক, নিবেদিত শিক্ষাবিদ, নিরন্তর শুভব্রতী ও কল্যাণকামী। উদার মানবতাবোধ, অসাম্প্রদায়িক চেতনা এবং প্রগতিমনষ্কতা ছিল তাঁর জীবনদর্শন। এই দর্শন ফুটে উঠেছে তাঁর জীবনাচরণে, তাঁর সৃষ্টিতে। নীলিমা ইব্রাহিমের উল্লেখযোগ্য রচনাপঞ্জির মধ্যে রয়েছে: গবেষণা গ্রন্থ ‘শরৎ-প্রতিভা’, ‘বাংলা নাটক: উৎস ও ধারা’, ‘সাহিত্য সংস্কৃতির নানা প্রসঙ্গ’; ছোটগল্প ‘রমনা পার্কে’; উপন্যাস ‘বিশ শতকের মেয়ে’, ‘এক পথ দুই বাঁক’, ‘কেয়াবন’; নাটক ‘দুয়ে দুয়ে চার’, ‘রোদ জ্বলা বিকেল’; কথানাট্য ‘আমি বীরাঙ্গনা বলছি’; অনুবাদ ‘এলিনর’, ‘রুজভেল্ট’; আত্মজীবনী ‘বিন্দু-বিসর্গ’ ইত্যাদি।
দেশে-বিদেশে বহু আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন তিনি। সমাজ সেবা ও সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য বাংলা একাডেমি পুরস্কার, বেগম রোকেয়া পদক, বঙ্গবন্ধু পুরস্কার, শেরে-বাংলা পুরস্কার, একুশে পদক সহ বহু পুরস্কার ও সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। সাহিত্য ও কর্মসাধনায় সদাসক্রিয় নীলিমা ইব্রাহিম ২০০২ সালের ১৮ জুন প্রয়াত হন।