নীরবে-নিভৃতে দানকারীরা আল্লাহর আরশের নিচে ছায়া পাবেন

ডা. মোহাম্মদ ওমর ফারুক | শুক্রবার , ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ at ৭:১১ পূর্বাহ্ণ

যারা আল্লাহর পথে দান করেন সেটা প্রকাশ্যে হোক, অপ্রকাশ্যে হোকআল্লাহর কাছে খুবই পছন্দনীয়। তবে অপ্রকাশ্যদানকারীরা তথা নীরবে দানকারীরা আল্লাহর কাছে খুবই প্রিয়পাত্র। যে সাত শ্রেণীর মানুষ আল্লাহর আরশের নীচে ছায়া পাবেন, সেই কঠিন কেয়ামতের ময়দানে এই ছায়া ছাড়া অন্য কোন ছায়া থাকবে নানীরবে দানকারীরা তাদের মধ্যে অন্যতম। আল্লাহর কোরআন বলছে, ‘যারা নিজেদের ধনসম্পদ আল্লাহর পথে খরচ করেন, তাদের উদাহরণ হচ্ছে একটি বীজের মতনযে বীজ বপন করার পর তা থেকে সাতটি শীষ বের হল, এর প্রতিটি শীষে রয়েছে একশ করে শষ্যদানা; আল্লাহতায়ালা যাকে চান তার জন্য বহুগুণ বৃদ্ধি করে দেন; আল্লাহতায়ালা অনেক প্রশস্ত, অনেক বিজ্ঞ’সূরা বাকারা২৬১। ইমাম মুসলিম (রহঃ) বর্ণনা করেছেন, এক ব্যক্তি লাগামসহ একটি সুসজ্জিত উট নিয়ে এসে বলেন, হে রাসূল (সাঃ)! এটি আল্লাহর উদ্দেশ্যে দিলাম। তখন রাসূল (সাঃ) বললেনকেয়ামতের দিন তুমি এজন্য ৭০০ টি উট প্রাপ্ত হবে। রাসূল (সাঃ) বলেন, আল্লাহতায়ালা বনী আদমের প্রতিটি সওয়াব ১০ টি সওয়াবের সমান করে দিয়েছেন এবং এটি বাড়তে বাড়তে ৭০০ পর্যন্ত হয়ে যায়। কিন্তু সিয়ামের ব্যাপারে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘এটি বিশেষ করে আমারই জন্য এবং আমি নিজেই এর প্রতিদান দিব। সিয়াম পালনকারীদের জন্য দুটি খুশি রয়েছে, একটি খুশি ইফতারির সময় এবং অন্যটি তার রবের সাথে সাক্ষাতের সময়। সিয়াম পালনকারীর মুখের দুর্গন্ধ আল্লাহতায়ালার নিকট মেশকের সুগন্ধি হতেও বেশি পছন্দনীয়। সিয়াম ঢাল স্বরূপ’– (মুসলিম/৮০৭)। আল্লাহতায়ালা বলেন, যারা আল্লাহতায়ালার পথে নিজেদের ধন সম্পদ ব্যয় করে এবং যা কিছু ব্যয় করে তা প্রচার করে বেড়ায় না, প্রতিদান চেয়ে কাউকে কষ্ট দেয় না, তাদের মালিকের কাছে তাদের জন্য পুরস্কার রয়েছে, শেষ বিচারের দিন এদের কোন ভয় নেই, তারা দুশ্চিন্তাগ্রস্তও হবে না’ সূরা বাকারা২৬২। আল্লাহতায়ালা তাঁর ঐ বান্দাদের প্রশংসা করেছেন, যারা দানখয়রাত করে থাকেন; অতপর যাদেরকে দান করেন তাদের নিকট নিজেদের কৃপার কথা প্রকাশ করে না এবং তাদের নিকট থেকে কিছু উপকারের আশাও করে না। তারা তাদের কথা ও কাজ দ্বারা দানগ্রহীতাদেরকে কোন প্রকার কষ্ট দেয় না। আল্লাহতায়ালা এই বান্দাদেরকে উত্তম প্রতিদান প্রদানের ওয়াদা করেছেন যে, তাদের প্রতিদান আল্লাহতায়ালার দায়িত্বে রয়েছেন। আল্লাহর রাসূল (সাঃ) বলেন, ‘উত্তম কথা হতে ভাল দান আর কিছু নেই। তোমরা কি মহান আল্লাহতায়ালার এই ঘোষণা শুনোনি? যে দানের পশ্চাতে থাকে ক্লেশ, সেই দান অপেক্ষা উত্তম বাক্য ও ক্ষমা উৎকৃষ্টতর। সহীহ মুসলিম হাদীসে রয়েছেকেয়ামতের দিন আল্লাহতায়ালা তিন প্রকার লোকের সাথে কথা বলবেন না এবং তাদের দিকে তাকাবেন না এবং তাদেরকে পবিত্র করবেন না বরং তাদের জন্য রয়েছে বেদনাদায়ক শাস্তি। প্রথম ব্যক্তি হচ্ছেযে দান করার পর কৃপা প্রকাশ করে। দ্বিতীয় হচ্ছেঐ ব্যক্তি যে পায়জামা বা লুঙ্গি পায়ের গিটের নিচে ঝুলিয়ে পরিধান করে। তৃতীয় হচ্ছেঐ ব্যক্তি যে মিথ্যা শপথ করে নিজের পণ্যদ্রব্য বিক্রি করে। আল্লাহতায়ালা অন্য একটি আয়াতে বলেন, সুন্দর কথা বলা এবং ক্ষমা করে দেওয়া সেই দানের চাইতে অনেক ভাল, যে দানের পরিণামে কষ্টই আসে। আল্লাহতায়ালা কারো মুখাপেক্ষী নন, তিনি পরম ধৈর্য্যশীল। আল্লাহর কোরআন বলছেঅনুগ্রহ প্রকাশ করে এবং কষ্ট দিয়ে তোমাদের দানখয়রাত নষ্ট কর না। অনুগ্রহ প্রকাশকারী ও কষ্ট প্রদানকারী সদাকা নষ্ট হয়ে যাওয়ার উপমা ঐ সদাকার সাথে দেওয়া হয়েছে, যা মানুষকে দেখানোর জন্য দান করে এবং উদ্দেশ্য থাকে যে, মানুষ তাকে দানশীল উপাধিতে ভূষিত করবে এবং তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়বে। আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্য তার মোটেও থাকে না এবং সে সওয়াব লাভের আশা পোষণ করে না। সূরা আদ দাহরের ৮ ও ৯ নং আয়াতে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘এরা শুধু আল্লাহতায়ালার ভালবাসায় (উদ্বুদ্ধ হয়ে ফকির) মিসকিন, এতিম ও কয়েদিদের খাবার দেয়। (এরা বলে), আমরা শুধু আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টির জন্যই তোমাদেরকে খাবার দিচ্ছি। আমরা তোমাদের কাছ থেকে কোন রকম প্রতিদান চাই নানা কোন রকম কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন। আল্লাহতায়ালা ও কেয়ামতের উপর যদি বিশ্বাস না থাকে তাহলে ঐ লোক দেখানো দান, অনুগ্রহ প্রকাশ করার দান এবং কষ্ট দেওয়া দানের দৃষ্টান্ত এরূপ যেমন: এক বৃহৎ মসৃণ প্রস্তর খন্ড, যার উপরে কিছু মাটিও জমে গেছে। অতপর প্রবল বৃষ্টিপাতের ফলে তা ধুয়ে গেছে এবং কিছুই এর অবশিষ্ট নেই। এই দুই প্রকার ব্যক্তির দানের অবস্থা ততটুকু। লোকে মনে করে যে, সে দানের সওয়াব অবশ্যই পেয়ে যাবে। যেভাবে এই পাথরের মাটি দেখা যাচ্ছিল, কিন্তু বৃষ্টিপাতের ফলে ঐ মাটি দূর হয়ে গেছে, তেমনি ঐ ব্যক্তির অনুগ্রহ প্রকাশ করার ও কষ্ট দেওয়ার ফলে এবং ঐ ব্যক্তির রিয়াকারীর ফলে ঐ সওয়াব বিদায় নিয়েছে। আল্লাহতায়ালার নিকট পৌঁছে তারা কোন প্রতিদান পাবে না। আল্লাহতায়ালা অবিশ্বাসী সম্প্রদায়কে পথ প্রদর্শন করেন না। আল্লাহর কোরআনের ঘোষণা, ‘আল্লাহ নিজের অনুগ্রহ দিয়ে তাদের যে প্রাচুর্য দিয়েছেনযারা তা আল্লাহর পথে ব্যয় করতে কার্পণ্য করেন তারা যেন কখনো এটা মনে না করে, এটা তাদের জন্য কোন কল্যাণকর কিছু হবে; না তাদের জন্য এটা খুবই অকল্যাণকর; কার্পণ্য করে তারা যা জমা করেছে, কেয়ামতের দিন অচিরেই তা দিয়ে তাদের গলায় বেড়ি পরিয়ে দেওয়া হবে’। সহীহ বুখারীর হাদিস, আল্লাহর রাসূল (সাঃ) বলেন, যাকে আল্লাহতায়ালা ধনসম্পদ দান করেন এবং সে যদি ঐ সম্পদের যাকাত আদায় না করে তাহলে তার সম্পদ কেয়ামতের দিন টেকো মাথা বিশিষ্ট এবং চোখের উপর দুটি কালো চিহ্নযুক্ত বিষাক্ত পুরুষ সাপ হয়ে গলাবন্ধের ন্যায় তার গলা জড়িয়ে যাবে। অতপর তার গালে দংশন করতে থাকবে এবং বলতে থাকবে, ‘আমি তোমার সম্পদ, আমি তোমার ধনভান্ডার’। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেন, ‘যে তার সম্পদের উপর প্রদেয় যাকাত সঠিকভাবে আদায় করে না ঐ সম্পদ টাক মাথাওয়ালা বিষাক্ত পুরুষ সাপে পরিণত হয়ে তার পিছু ধাওয়া করবে। ঐ লোকটি সাপ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য দৌঁড়াতে থাকবে, সাপটিও তার পিছু ধাওয়া করবে এবং বলতে থাকবে: আমি তোমার সম্পদ। অতপর আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ পাঠ করেন, তারা যে বিষয়ে কৃপণতা করছে কেয়ামতের দিনে ঐটাই হবে তাদের কন্ঠ নিগঢ়। সূরা মোনাফিকুন এর ১০ নং আয়াতে আল্লাহতায়ালা বলছেন, ‘আমি তোমাদের যা কিছু অর্থ সম্পদ দিয়েছি তা থেকে তোমরা (আল্লাহর পথে) ব্যয় কর, তোমাদের কারও মৃত্যু আসার আগেই– (মৃত্যু এসে গেলে) সে বলবে, হে আমার রবতুমি যদি আমাকে আরও কিছু কালের অবকাশ দিতে তাহলে আমি তোমার পথে দান করতাম এবং আমি তোমার নেক বান্দাদের দলে সামিল হয়ে যেতাম’।

লেখক: সভাপতিরাউজান ক্লাব, সিনিয়র কনসালটেন্ট (ইএনটি), রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতাল

পূর্ববর্তী নিবন্ধপ্রতিহিংসা দিয়ে প্রতিষ্ঠা পাওয়া সম্ভব না
পরবর্তী নিবন্ধড. ইউনূসের জন্য শুভ কামনা