নিহত শ্রমিকের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ ও আহতদের পুনর্বাসনের দাবি

জাহাজভাঙা কারখানায় বিস্ফোরণ জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ তিন মন্ত্রণালয়কে বেলার নোটিশ

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ at ৬:৪১ পূর্বাহ্ণ

সীতাকুণ্ডের জাহাজভাঙা কারখানায় বিস্ফোরণে নিহত শ্রমিকের পরিবারকে সর্বোচ্চ ক্ষতিপূরণ প্রদান, আহত শ্রমিকের চিকিৎসা খরচ বহন ও পুনর্বাসনের দাবি জানিয়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারসহ তিন মন্ত্রণালয়ের সচিব ও অন্যান্য কয়েকটি সংস্থার প্রধানকে নোটিশ দিয়েছে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)। গতকাল রোববার এ নোটিশ দেওয়া হয়। এতে জাহাজভাঙা কারখানা এস এন কর্পোরেশন শিপব্রেকিং ইয়ার্ডের সকল কার্যক্রম বন্ধেরও দাবি জানানো হয়। এছাড়া জাহাজভাঙার সময় গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে শ্রমিক আহত ও নিহত হওয়ার বিষয়টি তদন্ত করে প্রতিবেদন প্রকাশেরও দাবি জানানো হয়।

জানা গেছে, শিল্প মন্ত্রণালয়, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক, বিস্ফোরক পরিদপ্তরের প্রধান বিস্ফোরক পরিদর্শক, শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার, পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগের পরিচালক, বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি এবং এস এন কর্পোরেশন শিপব্রেকিং ইয়ার্ডের স্বত্বাধিকারী বরাবর নোটিশটি পাঠানো হয়েছে।

বেলার আইনজীবী এস হাসানুল বান্না জানান, এস এন কর্পোরেশন শিপব্রেকিং ইয়ার্ডে ২০১০ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ১৩ বার একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় প্রাণ হারায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত প্রশিক্ষণবিহীন ১২ জন শ্রমিক ও আহত হয় ১৩ জন। একই ইয়ার্ডে বারবার এ ধরনের মারাত্মক ঘটনা প্রমাণ করে, প্রচলিত আইন ও আদালতের নির্দেশ অমান্য করে অনিয়ন্ত্রিতভাবে জাহাজভাঙা অব্যাহত রয়েছে। মালিকপক্ষ হতে শ্রমিক অধিকার নিশ্চিতকরণে কার্যত কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। মারাত্মক এ ঝুঁকিপূর্ণ কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো তদারকির ব্যবস্থাও নেই। এ ধরনের ঘটনার আনুষ্ঠানিক তদন্তের বিধান থাকা সত্ত্বেও কমিটি কর্তৃক পরিদর্শন বা পর্যবেক্ষণ করে আদালতে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়নি। উল্লেখিত অবস্থার প্রেক্ষিতে প্রচলিত আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগ ও আদালতের আদেশের বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতেই মূলত নোটিশ প্রেরণ করা হয়েছে।

নোটিশে বলা হয়, অতিমাত্রায় ঝুঁকিপূর্ণ জাহাজভাঙা কার্যক্রমের অব্যাহত দূষণ নিয়ন্ত্রণ ও শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বেলা উচ্চ আদালতে বেশ কয়েকটি জনস্বার্থমূলক মামলা দায়ের করেছে, যা চলমান মামলা হিসেবে আদালতে বিবেচিত রয়েছে। আদালত সকল মামলার রায় ও আদেশের মাধ্যমে শ্রমিকদের যথাযথ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ব্যতীত জাহাজভাঙা ইয়ার্ডগুলো যাতে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে না পারে সে বিষয়ে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা প্রদান করেন। আদালতের সুস্পষ্ট রায় ও সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও গত ৭ সেপ্টেম্বর এস এন কর্পোরেশন শিপব্রেকিং ইয়ার্ডে জাহাজভাঙার সময় গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে ১২ জন শ্রমিক দগ্ধ হয়েছেন বলে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী আহত ব্যক্তিদের ১২ জনকেই প্রাথমিকভাবে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও আশঙ্কাজনক বিবেচনায় তাদের ৮ জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে স্থানান্তর করা হয়েছে। দগ্ধ এ শ্রমিকগণের শ্বাসনালীসহ ব্যক্তিভেদে শরীরের ২৫ থেকে ৯০ ভাগ পুড়ে গেছে। ইতোমধ্যে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেলে একজন শ্রমিক মারা গেছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধজাতীয় নাগরিক কমিটির আত্মপ্রকাশ লক্ষ্য রাষ্ট্র পুনর্গঠন, ফ্যাসিবাদী
পরবর্তী নিবন্ধআমরা ত্যাগ করতে প্রস্তুত