নিষেধাজ্ঞা শেষ হলেও মাছ ধরা শুরু হয়নি কক্সবাজারে

দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় উত্তাল বঙ্গোপসাগর

কক্সবাজার প্রতিনিধি | শনিবার , ২৪ জুলাই, ২০২১ at ১০:২৭ অপরাহ্ণ

ইলিশসহ অন্যান্য সামুদ্রিক মাছের প্রজননকাল উপলক্ষ্যে বঙ্গোপসাগর ও নদী মোহনায় মাছ ধরার ওপর ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা ২৩ জুলাই শেষ হলেও আজ শনিবার (২৪ জুলাই) কোনো ট্রলার সাগরে মাছ ধরতে যায়নি।

দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে গত কয়েকদিন ধরে বঙ্গোপসাগর প্রচণ্ড উত্তাল থাকায় আবহাওয়া দপ্তর সাগরে ট্রলার চলাচলের ব্যাপারে সতর্কতা সংকেত জারি করেছে। ফলে অধিকাংশ জেলে গত কয়েকদিন ধরে প্রস্তুতি নিয়েও শেষ মুহূর্তে সাগরে যেতে পারেননি।

জেলা ফিশিং বোট মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মাস্টার মোস্তাক আহমদ জানান, প্রতি বছর নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার সাথে সাথেই জেলেরা সাগরে মাছ ধরতে যেতেন। এ কারণে রাত ১২টার পর থেকেই সাগর মোহনার নদ-নদীগুলোতে দেখা যেত সাগরমুখী ট্রলারের সারি কিন্তু দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে সাগর প্রচণ্ড উত্তাল থাকায় আজ শনিবার পর্যন্ত জেলেরা সাগরে মাছ ধরতে যেতে পারেননি।

আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে বঙ্গোপসাগর প্রচণ্ড উত্তাল রয়েছে। এ কারণে দেশের সমুদ্রবন্দরসমূহকে ৩নং সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। ট্রলারসমূহকে উপকূলের কাছাকাছি সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।

তবে জেলেদের নিরাপত্তার কথা ভেবে এখন উপকূলেও মাছ ধরা বন্ধ রয়েছে বলে জানায় জেলা ফিশিং বোট মালিক সমিতি।

জেলা ফিশিং বোট মালিক সমিতির মতে, সাগরে মাছধরা বড় নৌকায় ৩০ থেকে ৪০ জন এবং ছোট নৌকায় ৫ থেকে ১৭ জন জেলে থাকে। আবার কক্সবাজার শহরতলীর দরিয়ানগর ঘাটের ইঞ্জিনবিহীন ককশিটের বোটে থাকে মাত্র ২ জন জেলে।

ট্রলারগুলোর মধ্যে ইলিশ জালের বোটগুলো গভীর বঙ্গোপসাগরে এবং বিহিন্দি জালের বোটগুলো উপকূলের কাছাকাছি মাছ ধরে থাকে। যে কারণে ইলিশ জালের বোটগুলো পক্ষকালের রসদ নিয়ে এবং বিহিন্দি জালের বোটগুলো সাগর মাত্র একদিনের রসদ নিয়ে সাগরে মাছ ধরতে যায়। বিহিন্দি জালে ইলিশ ব্যতীত ছোট আকারের প্রায় পাঁচ প্রজাতির মাছ ধরা পড়ে, যাকে স্থানীয় ভাষায় ‘পাঁচকাড়া’ (পাঁচ প্রকারের) মাছ বলা হয়।

এদিকে, সাগরে মাছ ধরা বন্ধ থাকায় কক্সবাজারের বরফকলগুলোও চালু করা যায়নি। ফিশারিঘাটস্থ শহরের প্রধান মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রেও মাছের বিকিকিনি শুরু হয়নি। ফলে জেলে ও মৎস্য ব্যবসায়ীসহ পরোক্ষভাবে নির্ভরশীল বহু শিল্প প্রতিষ্ঠান এখন বন্ধ রয়েছে।

ফিশারিঘাটস্থ মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী বলেন, “মাছ ধরার ওপর ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার কারণে মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র প্রতি বছর আড়াই মাসের কাছাকাছি বন্ধ থাকে কারণ সাগরে মাছ ধরা শুরু হওয়ার এক সপ্তাহ থেকে পক্ষকাল পরই ট্রলারগুলো মাছ ধরে মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে পৌঁছে।”

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এস এম খালেকুজ্জামান বলেন, “ইলিশ সহ অন্যান্য সামুদ্রিক মাছের প্রজননকাল উপলক্ষ্যে বঙ্গোপসাগর ও নদী মোহনায় মাছ ধরার ওপর ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা গত ২০ মে বুধবার মধ্যরাত ১২টায় শুরু হয় এবং গতকাল ২৩ জুলাই শুক্রবার মধ্যরাতে শেষ হয়। এই সময়ে জেলার ৬৩ হাজার ১৯৩ জন জেলেকে প্রায় ৩ হাজার ৫৩৯ মেট্রিক টন চাল বিতরণ করা হয়েছে।”

সাগরে মাছের প্রাচুর্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকার ২০১৯ সালে প্রথমবারের মতো ছোট নৌকাগুলোকেও ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার আওতায় নিয়ে আসে।

এর আগে ২০১৫ সাল থেকে শুধু বড় বড় বাণিজ্যিক ট্রলারগুলোর জন্যই এ নিষেধাজ্ঞা জারি ছিল। তবে ইলিশের প্রজননকাল উপলক্ষে ছোট ট্রলারগুলোকে ২০১১ সাল থেকেই ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হয় যেটি অক্টোবর মাসে এখনও কার্যকর রয়েছে।

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউটের কক্সবাজারস্থ সামুদ্রিক মৎস্য ও প্রযুক্তি কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শফিকুর রহমান বলেন, “প্রজননকালে বঙ্গোপসাগর উপকূলে মাছ বড় হওয়ার সুযোগ পেলে এর সুফল জেলে ও মৎস্য ব্যবসায়ীরা পাবে। ফলে নিষেধাজ্ঞার কারণে সাময়িকভাবে কিছু মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হলেও পরে তা পুষিয়ে যাবে।”

পূর্ববর্তী নিবন্ধদেশে পৌঁছেছে পাঁচ প্রবাসীর উপহার ২৫০ ভেন্টিলেটর
পরবর্তী নিবন্ধবঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসীদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রবাসে কর্মকাণ্ড চালানোর আহ্বান